বাংলাদেশে ৫টি প্রধান প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যের নাম
যে সমস্ত দ্রব্য সচরাচর আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়, সে সবকে প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য বলা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য হলো পাট, পাটজাত দ্রব্য, চা, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য, কাগজ ও হার্ডবোর্ড ইত্যাদি। নিচে প্রধান প্রচলিত ৫টি রপ্তানি দ্রব্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো –
১। কাঁচা-পাট: বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে কাঁচা পাট অন্যতম। পৃথিবীর মোট উৎপাদিত প্রায় অর্ধেকেরও বেশি পাট বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ একর জমিতে পাট চাষ হয় এবং বছরে প্রায় ৬০ লক্ষ বেল কাঁচা পাট উৎপাদিত হয়। দেশের চাহিদা মিটানোর পর অবশিষ্ট পাট বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। বাংলাদেশের কাঁচা পাটের প্রধান ক্রেতা হলো ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, চীন, জাপান, রাশিয়া, ইত্যাদি দেশ। মোট কথা উন্নত মানের কাঁচা পাট রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারে এখনও বাংলাদেশের আধিপত্য রয়েছে। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে কাঁচা পাট রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫৫.৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২। পাটজাত দ্রব্য: কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি দ্রব্য হলো পাটজাত দ্রব্য বা পণ্য। বাংলাদেশের উৎপাদিত চট, কার্পেট, বস্তা, সুতলী, থলে, খুবই উন্নতমানের। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, পাকিস্তান, জাপান, ইরান, ইরাকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি হয়। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে এই খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩২০.৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাটজাত দ্রব্য পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় বিশ্ব বাজারে এর চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩। চা: চা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। এদেশে চা বাগানের সূত্রপাত ব্রিটিশ আমলে। বর্তমানে ১৫৮টি চা বাগানে প্রায় ৪৭,৬৫০ হেক্টর জমিতে চা চাষ হয় এবং উৎপাদিত চা-এর পরিমাণ (বার্ষিক) ৪৭ মিলিয়ন কেজি। ফলে বাংলাদেশ দেশের চাহিদা মিটিয়েও প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিযয়ন কেজি চা বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। পাকিস্তান, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইত্যাদি দেশ হলো বাংলাদেশী চা-এর প্রধান ক্রেতা। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে এখাতে রপ্তানি আয় হলো ৫.১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্ব বাজারে আমাদের চা-এর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।
৪। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য: বাংলাদেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হলো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। বাংলাদেশ প্রতি বছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। বাংলাদেশের গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, ইত্যাদি পশুর চামড়া গুণে ও মানে খুবই উন্নত। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে এ খাতে আয়ের পরিমাণ প্রায় ১৫৩.১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৫। কাগজ ও হার্ডবোর্ড: বাংলাদেশ প্রতি বছর কাগজ ও হার্ডবোর্ড রপ্তানি করে থাকে। এ দেশের কাগজ ও হার্ডবোর্ডের মিলগুলোতে প্রচুর কাগজ ও হার্ডবোর্ড তৈরি হয়। এ খাত হতে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে। পাকিস্তান, ইরান, হাঙ্গেরী, মায়ানমার, প্রভৃতি এদেশের কাগজ ও কাগজজাত দ্রব্যের প্রধান ক্রেতা। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়ক বই: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র; আলম, মোঃ শাহ; আখতার, সুফিয়া; চৌধুরী, সুশান্ত রায়; ইসলাম, মোঃ নজরুল; ২০২০, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ঢাকা: মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৪৭০।
বাংলাদেশে প্রধান প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যের নাম।
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL