বাক্য ও বাক্যের শ্রেণিবিভাগ
আমরা জানি যে, যে সব সুবিন্যস্ত শব্দ বা পদ দ্বারা কোন বিষয়ে বক্তার (মানুষের) মনের ভাব সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ পায় তাকে বাক্য [Sentence] বলে। বাক্যের শ্রেণিবিভাগ আলোচনার প্রথমে আমরা স্বরভঙ্গি ও বাগভঙ্গি সম্পর্কে জেনে নেই।
বিশেষ জোর দিয়ে কথা বলা, টেনে টেনে শব্দ উচ্চারণ, কণ্ঠস্বরের উঠা-নামা, কাঁপন ইত্যাদির দ্বারা বাক্যের বিশেষ বিশেষ অর্থ ও ভাব প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন ভঙ্গিতে কণ্ঠধ্বনি উচ্চারণের ফলে যে সব ধ্বনি-তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, সে সব ধ্বনি-তরঙ্গ নানা প্রকার ভাব ও অর্থ সৃষ্টি করে। এসব ধ্বনি-তরঙ্গ বা স্বরতরঙ্গকে স্বরভঙ্গি বলে। এমব স্বরভঙ্গিই বাগভঙ্গির ভিত্তি।
স্বরভঙ্গির দ্বারা যে সব শব্দ ও বাক্য সৃষ্ট ও উচ্চারিত হয়, সে সবকে লিখিত আকারে এবং উচ্চারিত অবস্থায় বাগভঙ্গি বলা যেতে পারে।
১. অ-নে-ক অ-নে-ক দিন আগে বাংলাদেশে বিজয় সিংহ নামে খুব সাহসী এক রাজপুত্র ছিলেন। – বিবৃতিমূলক
২. প্রকৃতি কী সুন্দর সাজেই না সেজেছে! – বিস্ময়সূচক
৩. তাজ্জব ব্যাপার! – বিস্ময়সূচক
৪. দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? – প্রশ্নসূচক
৫. “আমার মাথা নত করে দাও হে তােমার চরণধুলার তলে।” – প্রার্থনামূলক
৬. ”দীর্ঘজীবী হও।” – আশীর্বাদবােধক
৭. ‘‘সবারে বাস রে ভালাে।” – অনুরােধমূলক এবং
৮. উঠে বস। – আদেশসূচক বাক্য।
অনুরােধ-প্রার্থনা, আবেগ-উচ্ছ্বাস, আশাসন-তিরস্কার, আদেশ-মিনতি, হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, কণ্ঠস্বরের নানা ভঙ্গিতে উচ্চারণের মধ্যে প্রকাশিত হয়।
বাক্যের শ্রেণিবিভাগ : স্বরভঙ্গি ও বাগভঙ্গির উপর ভিত্তি করে বাক্য নিম্নলিখিত ৫টি শ্রেণিতে বিভক্ত হতে পারে।
১. বিবৃতিমূলক বাক্য (Assertive sentence) : বিবৃতিমূলক বাক্য বলতে সাধারণত হ্যা বা না বাচক বাক্যকে বুঝায়। বিবৃতিমূলক বাক্য দুই প্রকার হতে পারে। যেমন –
১.১. হ্যাঁ বাচক বাক্য (Affirmative sentence): উদাহরণস্বরূপ –
রুবেল ঢাকা যাবে। রুবেল বলতে চাই। এবং
১.২. না বাচক বাক্য (Negative sentence): উদাহরণস্বরূপ –
রুবেল ঢাকা যাবে না। রুবেল বলতে চাই না।
২. প্রশ্নসূচক বাক্য (Interrogative sentence) : এ ধরনের বাক্যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। যেমন –
কোথায় যাচ্ছ?
কী পড়ছ?
কেন এসেছ?
যাবে নাকি?
৩. বিস্ময়সূচক বাক্য (Exclamatory sentence) : যে বাক্যে আশ্চর্যজনক কিছু বােঝায় তাকে বিস্ময়সূচক বাক্য বলে। যেমন –
হুররে, আমরা জিতেছি!
তাজ্জব ব্যাপার! সমুদ্রের সে কী ভীষণ গর্জন, ঢেউগুলাে পাহাড়ের চূড়ার মতা উঁচু- আমি তাে ভয়ে মরি!
৪. ইচ্ছাসূচক বাক্য (Optative sentence) : এ ধরনের বাক্যে শুভজনক প্রার্থনা, আশিস, আকাঙক্ষা করা হয়। যেমন –
দীর্ঘজীবী হও।
তােমার মঙ্গল হােক।
পরীক্ষায় সফল হও।
ঈশ্বর তােমাকে জয়ী করুন।
৫. আদেশ বাচক বাক্য (Imperative sentence) : এ ধরনের বাক্যে আদেশ করা হয়। যেমন –
দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধ কর।
শিক্ষক মহােদয় শ্রেণিকক্ষে এলে উঠে দাঁড়াবে।
উঠে দাঁড়াও ।
চুপটি করে বস।
স্বরভঙ্গি তথা বাগভঙ্গির সাহায্যে ক্রোধ, আদর, আনন্দ, দুঃখ, বিরক্তি, বিস্ময়, লজ্জা, ঘৃণা প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার অনুভূতি প্রকাশ করা যায়। যেমন –
১. সাধারণ বিবৃতিতে : রুবেল আজ যাবে ।
২. জিজ্ঞাসায় : রুবেল আজ যাবে?
৩. বিস্ময় প্রকাশে : রুবেল আজ যাবে!
৪. ক্রোধ প্রকাশে : রুবেল তােমাকে দেখে নেব।
৫. আদর বােঝাতে : বড্ড শুকিয়ে গেছিস রে।
৬. আনন্দ প্রকাশে : বেশ বেশ, খুব ভালাে হয়েছে!
৭. দুঃখ প্রকাশে : আহা, গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙেছে!
৮. বিরক্তি প্রকাশে : আঃ , ভালাে লাগছে না, এখন এখান থেকে যাও তাে।
৯. ভীতি প্রদর্শনে : যাবি কি না বল?
১০. লজ্জা প্রকাশে : ছিঃ ছিঃ, তার সঙ্গে পারলে না।
১১. ধিক্কার দিতে : ছিঃ, তােমার এই কাজ।
১২. ঘৃণা প্রকাশে : তুমি এত নীচ!
১৩. অনুরােধ প্রকাশে : কাজটি করে দাও না ভাই।
১৪. প্রার্থনা: ঈশ্বর তােমার মঙ্গল করুন।
ছেদ ও বিরতিসূচক চিহ্নগুলাে বাগভঙ্গির লিখিত আকার প্রকাশে সাহায্য করে। দাঁড়ি, কমা, প্রশ্নবােধক ও বিস্ময়সূচক চিহ্ন বাক্যের ভাব ও অর্থবােধের জন্য উপকারক। [সংকলিত]
সহায়িকা: বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ।
বাক্য কাকে বলে বাক্যের শ্রেণীবিভাগ করো
Follow Us on Our Youtube Channel: GEONATCUL