বাজার কি? বিভিন্ন ধরনের বাজারের বর্ণনা

বাজার (market) বলতে সাধারণত আমরা নির্দিষ্ট কোনো স্থানকে বুঝি, যেখানে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় হয়। কিন্তু অর্থনীতিতে বাজার বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানকে বুঝায় না। অর্থনীতিতে বাজার কথাটি আরও ব্যাপক। অর্থনীতিতে বাজার বলতে কোনো একটি দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয়ে নিয়োজিত ক্রেতা ও বিক্রেতার সমষ্টিকে বুঝায়।
অধ্যাপক Chapman এর মতে, “বাজার বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানকে বুঝায় না বরং এক বা একাধিক দ্রব্যকে বুঝায়, যা ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে প্রত্যক্ষ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় হয়।”

বাজারের উপাদান: উপরিউক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায়, অর্থনীতিতে বাজারের তিনটি অপরিহার্য উপাদান রয়েছে। যথাঃ
১। ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য কোনো একটি দ্রব্য;
২। দ্রব্যটির ক্রয়-বিক্রয়ে নিয়োজিত একদল ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিতি; এবং
৩। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দরকষাকষির মাধ্যমে একটি দাম নির্ধারণ।
সুতরাং বলা যায় যে, অর্থনীতিতে এক একটি দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে এক একটি বাজার গঠিত হয়। সে জন্য অর্থনীতিতে দ্রব্য যত বাজারও তত। যেমন- স্বর্ণের বাজার, অনলাইন বাজার, পোশাকের বাজার, চালের বাজার ইত্যাদি।

বাজারের শ্রেণিবিভাগ: অর্থনীতিতে বিভিন্ন দৃষ্টিতে বাজারকে তিন ভাগ করা যায়। যথাঃ
(ক) সময় মেয়াদ অনুসারে বাজার;
(খ) প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজার; এবং
(গ) পরিধি অনুসারে বাজার। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের বাজার সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

(ক) সময় মেয়াদ অনুসারে বাজার: অধ্যাপক মার্শাল সময় মেয়াদ অনুসারে বাজারকে মোটামুটি চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ
(ক.১) অতি স্বল্পকালীন বাজার (very short period market): যে সময়ে কোনো বাজারের যোগান স্থির থাকে, অর্থাৎ যোগানের হ্রাস-বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়, তখন তাকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলা হয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক যোগানবিশিষ্ট বাজারকে অতি স্বল্পকালীন বাজার বলা হয়। সাধারণত পচনশীল দ্রব্য যেমন- মাছ, তরি-তরকারি, দুধ, ইত্যাদি দ্রব্যের বাজার হলো অতি স্বল্পকালীন বাজার।
(ক.২) স্বল্পকালীন বাজার (short period market): যে বাজারে দ্রব্যের যোগান খানিকটা হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়, তবে চাহিদার সাথে যোগানের পূর্ণ সামঞ্জস্য বিধান করা যায় না, তাকে স্বল্পকালীন বাজার বলা হয়। এ ধরনের বাজারে দাম চাহিদা এবং যোগান দুটোর উপরই নির্ভর করে। তবে দ্রব্যের দামের উপর যোগানের প্রভাবের চেয়ে চাহিদার প্রভাব বেশি থাকে।
(ক.৩) দীর্ঘকালীন বাজার (long period market) : যে বাজারে শিল্পের স্থায়ী যন্ত্রপাতির পরিবর্তন করে দ্রব্যের যোগান হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়, তাকে দীর্ঘকালীন বাজার বলা হয়। এ বাজারের বৈশিষ্ট্য হলো চাহিদা ও যোগানের মধ্যে পূর্ণ সামঞ্জস্য বিধান করা যায় এবং দ্রব্যের দাম সম্পূর্ণভাবে যোগান দ্বারা প্রভাবিত হয়।
(ক.৪) অতি দীর্ঘকালীন বাজার (very long period market): অধ্যাপক মার্শাল বলেছেন, অতি দীর্ঘ সময়ে মানুষের রুচি, অভ্যাস, মানসিকতা, জনসংখ্যা ইত্যাদি সবই পরিবর্তিত হতে পারে এবং ফলে অতি দীর্ঘকালে দামেরও পরিবর্তন বেশি হয়। তবে অতি দীর্ঘকাল বলতে সুনির্দিষ্ট কোন সময়কে বুঝানো হয়নি। আর এ ধরনের বাজারের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।

(খ) প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজার: প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাজারকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
(খ.১) পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার (perfect competition market): যে বাজারে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা সমজাতীয় দ্রব্য প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে একটি স্থির মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করে, তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, যে বাজারে ক্রেতার সাথে ক্রেতার, বিক্রেতার সাথে বিক্রেতার এবং ক্রেতার সাথে বিক্রেতার পূর্ণমাত্রায় প্রতিযোগিতা থাকে, তাকে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলা হয়।
(খ.২) অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজার (imperfect competition market): যে বাজারে অল্পসংখ্যক বিক্রেতা এবং অধিক সংখ্যক ক্রেতা থাকে এবং তাদের মধ্যে আংশিক প্রতিযোগিতা বিরাজ করে তখন তাকে অপূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজার বলে।

(গ) পরিধি অনুসারে বাজার: বাজারের আয়তন বা পরিধি অনুসারে বাজারকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(গ.১) স্থানীয় বাজার (local market): যে সব দ্রব্যের বাজার দেশের অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং দ্রব্য বিক্রয়ৈর জন্য দূরবর্তী কোনো বাজারে নেয়া হয় না, এরূপ বাজারকে স্থানীয় বাজার বলা হয়। যেমন : পচনশীল দ্রব্য; অর্থাৎ দুধ, ডিম, মাছ, ইত্যাদি দ্রব্যের বাজার স্থানীয় বাজার।
(গ.২) জাতীয় বাজার (national market): এমন কিছু দ্রব্য আছে, যেগুলো সারা দেশব্যাপী কম বেশি কেনাবেচা হয় অথচ বিদেশে রপ্তানি করা হয় না, সে সব দ্রব্যের বাজারকে জাতীয় বাজার বলা হয়। যেমন: রাজশাহীর ফজলী আম, কুমিল্লার খদ্দর, বগুড়ার দই, কুমিল্লার রসমালাই, ইত্যাদি দ্রব্যের বাজার হলো জাতীয় বাজার।
(গ.৩) আন্তর্জাতিক বাজার (international market): যে সব দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় নিজ দেশের সীমানা অতিক্রম করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও সংঘটিত হয়, সে সব দ্রব্যের বাজারকে আন্তর্জাতিক বাজার বলা হয়। যেমন: পাটের বাজার, তৈরি পোশাকের বাজার, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যের বাজার, ইত্যাদি হলো আন্তর্জাতিক বাজার। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: ইসলাম, ড. নুর; খায়ের, আবুল, ২০২২, ব্যষ্টিক অর্থনীতি, ঢাকা: দি ইউনাইটেড পাবলিশার্স, পৃষ্ঠা ২০৯-২১২।


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply