বাণিজ্য: অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
বাণিজ্যে [Trade] হল উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য ও সেবার বৃহৎ পরিমাপের ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য সমস্ত সেবামূলক প্রক্রিয়া। বাণিজ্য ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বণ্টন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। বাণিজ্য শব্দ দিয়ে মূলত দ্রব্য ও সেবার বিনিময়কে বুঝায়। বাণিজ্যের ফলে উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে বিনিময় সংক্রান্ত কোনো ধরনের বাধা থাকে না।
বাণিজ্য সাধারণত ২ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন – (১) অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (Home Trade), এবং (২) আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য (International Trade) ।
(১) অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (Domestic Trade): কোনো নির্দিষ্ট দেশের অভ্যন্তরে যে বাণিজ্য পরিচালনা করা হয় তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। অর্থাৎ যে কোনো একটি দেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের পার্থক্য থাকতে দেখা যায়। সম্পদের এরূপ পার্থক্যের কারণে বিশেষ কোনো এলাকায় বিশেষ কোনো দ্রব্য উৎপাদন বেশি হতে পারে। ফলে ঐ এলাকায় বেশি উৎপাদিত বিশেষ দ্রব্যটি দেশেটির অপর এলাকাগুলোতে সরবরাহ বা স্থানান্তরিত করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- সিলেটের চা ও রাজশাহীর আম সারাদেশে সরবরাহ বা স্থানান্তরিত করা হয়ে থাকে। আর এরূপ আদান-প্রদানকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলা হয়ে থাকে।
(২) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য (International Trade): দুই বা ততোধিক স্বাধীন দেশের মধ্যে যে বাণিজ্য পরিচালনা করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলা হয়। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ B.Ohlin – এর মতে, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সম্প্রসারণই হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এ ২ ধরনের বাণিজ্যের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য দেখা যায় না। তুলনামূলক সুবিধা অনুযায়ী কোনো বিশেষ দ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানি করা হয়ে থাকে এবং তুলনামূলকভাবে যা উৎপাদনে অসুবিধা হয়, সে দ্রব্য আমদানি করে। যেমন-
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ থাকায় এবং উপাদানে তুলনামূলক সুবিধা থাকায় তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে এবং তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আবার কফি উৎপাদন তুলনামূলক সমস্যা থাকায়, তা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। এভাবে এক দেশ থেকে অপর দেশের মধ্যে দ্রব্য ও সেবাসমূহ আদান-প্রদানকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিচে এরূপ কতিপয় সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়েছে।
অধ্যাপক জে. এল. হ্যানসেন (Hanson) মতে, “বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত পণ্য সামগ্রী ও সেবা কর্ম বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিনিময় করাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে”।
অধ্যাপক এ্যামোস ( AMOS) এর মতে, “আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে কোনো দেশের সীমানা পেরিয়ে দ্রব্য সামগ্রীর বিনিময়কে বুঝায়”।
অধ্যাপক সি.পি. কিন্ডেল বার্জার (Kindle Berger) মতে, “আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে দুই-ততোধিক সার্বভৌম দেশের মধ্যে দ্রব্য ও সেবার লেনদেনকে বুঝায়”।
পরিশেষে বলা যায় যে, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য হল একটি অখণ্ড দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত বাণিজ্য। অপরদিকে একাধিক অখণ্ড দেশের মধ্যে দ্রব্য ও সেবাসমূহ আদান-প্রদানের মাধ্যমে সংঘটিত বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র; আলম, মোঃ শাহ; আখতার, সুফিয়া ও ইসলাম, মোঃ নজরুল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, (২০২০), মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা-১৭-১৮।
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে?
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL