বিভিন্ন প্রকার ঝুঁকি

ঝুঁকির প্রকৃতি, অবস্থা, মাত্রা, দৃষ্টিকোণ, ইত্যাদি বিবেচনা করে ঝুঁকিকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। ঝুঁকিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে ঝুঁকির শ্রেণিবিভাগ দেখানো হলো:
১. ব্যবসায়িক ঝুঁকি (business risk);
২. আর্থিক ঝুঁকি (financial risk) এবং
৩. খাঁটি ঝুঁকি (pure risk)। নিচে এদের সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হলো:

১. ব্যবসায়িক ঝুঁকি (business risk): প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, প্রতিযোগিতামূলক বাজার, মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভোক্তাদের চাহিদা, রুচি ও অভ্যাসের পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ উপাদান, দেশের সঠিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ইত্যাদি উপাদান দ্বারা সৃষ্ট ঝুঁকির মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে ঐ ঝুঁকিকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলা হয়।

২. আর্থিক ঝুঁকি (financial risk): ব্যবসায় অর্থসংস্থানের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনাকেই আর্থিক ঝুঁকি বলা হয়। আর্থিক ঝুঁকি ব্যবসায়ের মোট ঝুঁকির সেই অংশ বা ঋণের মাধ্যমে অর্থসংস্থানের ফলে সৃষ্টি হয়। জন জে. হ্যাম্পটন-এর মতে, “কোনো বিনিয়োগ থেকে ঋণের সুদ বা সুদসহ ঋণের অর্থ পরিশোধ বা মুনাফার ব্যবস্থা করার মতো পর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ সৃষ্টি না হওয়ার সম্ভাবনাকে আর্থিক ঝুঁকি বলে ।”

৩. খাঁটি ঝুঁকি (pure risk): মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মূলধন বিনিয়োগ করে এবং বিভিন্ন সেবামূলক কাজ সম্পাদন করে। এসব কাজ সম্পাদন করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক নানা ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। ঝুঁকিজনিত ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক ক্ষেত্রে সুযোগকে নষ্ট করে। এই রূপ ক্ষেত্রে অর্জিত লাভের দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনাকে পূরণ করা সম্ভব না হলে উত্তর ঝুঁকিকে বিশুদ্ধ ঝুঁকি বা খাঁটি ঝুঁকি বলে।

বিমা যোগ্যতার ভিত্তিতে খাঁটি ঝুঁকিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(৩.ক) বিমাযোগ্য ঝুঁকি (insured risk) এবং
(৩.খ) বিমা অযোগ্য ঝুঁকি (uninsured risk)

(৩.ক) বিমাযোগ্য ঝুঁকি (insured risk): যে সকল ঝুঁকি বিমা করা হয়, তাকে বিমাযোগ্য ঝুঁকি বলা হয়। বিমাযোগ্য ঝুঁকি আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
(৩.ক.১) সম্পত্তিগত ঝুঁকি: কারবারের সম্পত্তিসমূহ ব্যবহারজনিত যেসব ঝুঁকির সৃষ্টি হয়, তাকে সম্পত্তিগত ঝুঁকি বলে ।
(৩.ক.২) ব্যক্তিগত ঝুঁকি: ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের জীবনের উপর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাকে ব্যক্তিগত ঝুঁকি বলে।
(৩.ক.৩) আইনানুগ দায়দায়িত্ব সম্পর্কিত ঝুঁকি: অবহেলার জন্য মানুষের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে তাকে আইনানুগ দায়-দায়িত্ব সম্পর্কিত ঝুঁকি বলে।

(৩.খ) বিমা অযোগ্য ঝুঁকি (uninsured risk): যে সকল ঝুঁকির বিরুদ্ধে বিমা করা যায় না বা বিমা হয় না, তাকে বিমা অযোগ্য ঝুঁকি বলে। বিমা অযোগ্য ঝুঁকি তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(৩.খ.১) বাজার ঝুঁকি: অর্থনীতিতে বাজার দামের পরিবর্তন, ভোক্তার উপযোগ ও রুচির পরিবর্তন, শেয়ার মূল্যের পরিবর্তন, উন্নতমানের দ্রব্য প্রতিযোগিতা ইত্যাদি হতে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে বাজার ঝুঁকি বলা হয়।
(৩.খ.২) রাজনৈতিক ঝুঁকি: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, যুদ্ধবিগ্রহ, রাজস্বনীতি ও আর্থিক নীতির পরিবর্তন, অবাধ বাণিজ্যের উপর বিধি-নিষেধ ইত্যাদি কারণে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে রাজনৈতিক ঝুঁকি বলা হয়।
(৩.খ.৩) উৎপাদন ঝুঁকি: উৎপাদন উপাদানের কৌশলগত সমস্যা এবং উৎপাদন যন্ত্রপাতির কার্যকারিতার ব্যর্থতা নিঃশেষতা হতে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে উৎপাদন ঝুঁকি বলে। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: রাসুল, ড. মোঃ সিরাজুর এবং ইসলাম, মোঃ নজরুল, প্রকল্প পরিকল্পনা, (২০১৬/২০১৭), কমার্স পাবলিকেশন্স, ঢাকা।


ঝুঁকি কত প্রকার?


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply