বিশ্বায়ন | Globalization

বিশ্বায়নের (globalization) ধারণা উপলব্ধি করা খুব সহজ নয়। বিশ্বায়নকে মূলত একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বিশ্বায়ন নির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে বিশ্বায়ন বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন হিসেবে স্বীকৃত। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বাণিজ্যিক মনে হলেও শুধু বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ সকল বিষয় বিশ্বায়নের আওতায় আনা হয়েছে। এ কারণে এককথায় বিশ্বায়নের সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব নয়। তবে সাধারণভাবে উৎপাদন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পণ্য, পরিসেবা, তথ্য, প্রযুক্তি ও শিল্প, ইত্যাদির বিশ্বব্যাপী বিস্তারকেই বিশ্বায়ন বলা যায়। অন্যভাবে বলা যায়, বিশ্বায়ন হলো পুঁজিবাদী বিশ্বের আধুনিক সংস্করণ এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশ সাধন করা। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষজ্ঞগণ বিশ্বায়নকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এরূপ কয়েকটি প্রদত্ত সংজ্ঞা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. অর্থনীতিবিদ Stoner, Freeman & Gillvert – এর মতে, ‘Globalization is the recognitions by organizations that business must have a global not local flows.’ (অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্যে আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন সংগঠনসমূহের স্বীকৃতিই হলো বিশ্বায়ন।)

২. M. Waters – এর মতে, ‘Globalization is such a process which makes the people ware about the protection of going back in the field of social and cultural sector.’ (অর্থাৎ বিশ্বায়ন হলো এমন প্রক্রিয়া, যা একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবহারের অধীনে ভৌগোলিক দূরত্ব কমিয়ে আনার বাধা অপসারণ করে এবং জনগণকে পিছিয়ে পড়া সম্পর্কে অধিকতর সচেতন করে তোলে।)

৩. Anita Roddies – এর মতে, ‘Globalization means the economic integration with world economy through the economic liberalization, such as deregulation, privatization and greater openness to world trade and investment.’ (অর্থাৎ বিশ্বায়ন বলতে অর্থনৈতিক উদারীকরণ; যথা – নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ, বেসরকারিকরণ এবং অধিকতর মুক্ত বিশ্ববাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে একীভূতকরণকে বুঝায়।)

৪. বিশ্বগ্রাম বা Global village ধারণার প্রবক্তা মার্শাল ম্যাকলোহায়ের মতে, ‘Globalization is the converted situation of global village.’ (অর্থাৎ গ্লোবাল ভিলেজ ধারণার পরিবর্তিত রূপই হলো বিশ্বায়ন।)

৫. বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ Ayubure Rahman – এর মতে ‘Globalization means trade liberalization such as deregulation, privatization and free trade in the global economy.’ (অর্থাৎ, বিশ্বায়ন বলতে বাণিজ্য উদারীকরণ, যেমন – নিয়ন্ত্রণ মুক্তকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মুক্তবাণিজ্যকে বুঝায়।)

৬. A. K. Sundaran এবং J. S. Black – এর মতে, ‘Globalization is the process by which an activity or undertaking becomes world-wide.’ (অর্থাৎ, বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো কর্মতৎপরতা বা উৎপাদনরত কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী সংঘটিত হয়।)

সুতরাং বিশ্বায়ন বলতে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং মূলধনের গতিশীলতা, শ্রমের অবাধ প্রবাহ, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পারস্পরিক বাধাসমূহ দূরীভূত করে সকলের মধ্যে সহযোগিতামূলক মিলন মেলা গঠনের প্রয়াসকে বুঝায়। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আখতার, সুফিয়া; শিরিন, প্রফেসর নাসিম ফারহানা; আহম্মদ, মোঃ জাফর; করিম, মোহাম্মদ নূরুল; সম্পাদনায় :এম. এ. কালাম; (২০১৯); আন্তর্জাতিক ব্যবসায়; ঢাকা: কমার্স পাবলিকেশন্স; পৃষ্ঠা – ৫।


Follow Us in Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply