বুকের নল (চেস্ট টিউব) | Chest Tube
বুকের নল বা চেস্ট টিউব একটি অস্ত্রোপচারের নল, যা বুকের প্রাচীরের মধ্য দিয়ে প্লুরাল স্পেস বা মিডিয়াস্টিনামে প্রবেশ করানো হয়। নলটি প্রবেশ করানো কখনও কখনও একটি জীবন রক্ষাকারী প্রক্রিয়া। চেস্ট টিউব সাধারণত প্লুরাল ক্যাভিটিতে (pleural cavity) জমে থাকা অতিরিক্ত বাতাস, রক্ত বা তরল নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি প্রধানত প্নিউমোথোরাক্স (pneumothorax), হেমোথোরাক্স (hemothorax), এম্পায়েমা (empyema) বা সার্জারির পর প্লুরাল ক্যাভিটিকে ড্রেন করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

চেস্ট টিউবের নার্সিং ম্যানেজমেন্ট:
A. চেস্ট টিউব বসানোর আগে (Pre-Insertion Care):
১। রোগীকে বুঝিয়ে বলা: কেনো চেস্ট টিউব বসানো হবে এবং এটি কীভাবে কাজ করে।
২। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা। যেমন –
২.১। চেস্ট টিউব,
২.২। আন্ডারওয়াটার সিল ড্রেনেজ সিস্টেম,
২.৩। স্টেরাইল গজ, ব্যান্ডেজ, সেলাইন,
২.৪। লোকাল অ্যানেস্থেটিক (যদি প্রয়োজন হয়),
২.৫। গ্লাভস, মাস্ক, এপ্রোন ইত্যাদি,
২.৬। জরুরি ওষুধ ও অক্সিজেন প্রস্তুত রাখা (সম্ভাব্য জটিলতার জন্য),
২.৭। রোগীকে সঠিকভাবে অবস্থান করানো: সাধারণত ফোলারের (Fowler’s) বা সেমি-ফোলারের পজিশনে রাখা হয়।
B. চেস্ট টিউব বসানোর পর (Post-Insertion Care):
১। ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা চেক করা,
২। চেস্ট টিউব লোকালাইজড পজিশনে আছে কিনা দেখুন,
৩। ওয়াটার সিল চেম্বারে বাবলিং (bubbling) আছে কিনা চেক করা।
C. কন্টিনিউয়াস বাবলিং (Continuous bubbling): লিকেজ আছে কিনা চেক করতে হবে। ড্রেনেজ পর্যবেক্ষণ করা:
১। রক্ত, তরল বা বাতাস কতটুকু বের হচ্ছে তা নোট করা,
২। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হলে ডাক্তারকে জানানো।
D. ইনফেকশন প্রতিরোধ করা:
১। ইনসারশন সাইট প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা,
২। ব্যান্ডেজ নিয়মিত পরিবর্তন করা,
৩। সেপসিস প্রতিরোধের জন্য হ্যান্ড হাইজিন ও স্টেরাইল টেকনিক মেনে চলা, রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা,
৪। রক্তচাপ, পালস, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার স্বাভাবিক আছে কিনা,
৫। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা বা ব্লু ডিসকালারেশন হলে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া।
E. মোবিলিটি ও পজিশনিং:
১। রোগীকে বিছানায় না রেখে ধীরে ধীরে বসতে বা হাঁটতে সাহায্য করা (ডাক্তার অনুমতি দিলে),
২। চেস্ট টিউব ক্ল্যাম্প করা যাবে না, কারণ এতে টেনশন প্নিউমোথোরাক্স হতে পারে,
F. চেস্ট টিউব খোলার সময় (Chest Tube Removal Care):
1. চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া।
2. রোগীকে গভীর শ্বাস নিতে বলা ও টিউব বের করার সময় জোরে শ্বাস ধরে রাখতে বলা।
3. খোলার পর ইনসারশন সাইট ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করা ও পর্যবেক্ষণ করা।
4. রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক আছে কিনা নিশ্চিত করা।
G. জরুরি জটিলতা ও ব্যবস্থাপনা:
1. চেস্ট টিউব স্থানচ্যুত হলে: ইনসারশন সাইট স্টেরাইল গজ দিয়ে ঢেকে দিন এবং ডাক্তারকে জানান।
2. অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে: রোগীর ভিটাল সাইন চেক করে দ্রুত ডাক্তারকে জানানো।
3. সাবকিউটেনিয়াস এমফিসেমা হলে (Subcutaneous Emphysema – ত্বকের নিচে বাতাস জমা হলে):
4. ইনসারশন সাইট পরীক্ষা করুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
চেস্ট টিউব ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ নার্সিং দায়িত্ব। ড্রেনেজ সিস্টেমের যথাযথ পর্যবেক্ষণ, ইনফেকশন প্রতিরোধ, রোগীর আরামের ব্যবস্থা এবং জরুরি জটিলতা চিহ্নিত করা নার্সিং কেয়ারের মূল অংশ। সতর্কতার সাথে চেস্ট টিউব ম্যানেজ করলে রোগীর দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। [ইশরাত জাহান মিম] [সংকলিত]