বেতন ও মজুরি আইন প্রণয়নের ঐতিহাসিক পটভূমি

বেতন ও মজুরি সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের অনেক ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীগণ বিভিন্ন কাঠামোর বেতন ও মজুরি পেয়ে আসছেন। নিচে এ বেতন ও মজুরি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও উন্নয়নের ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরা হলো:

১. চতুর্দশ শতাব্দি (14th century): চতুর্দশ শতাব্দিতে ইউরোপে বাণিজ্য বিপ্লবের সূচনা হয়। এতে মজুরি ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তবে ইউরোপে কর্মরত শ্রমিকগণ নিয়োগকর্তার সাথে মজুরি বিষয়ক আলোচনার ব্যবস্থা করে।

২. পঞ্চদশ শতাব্দি (15th century): পঞ্চদশ শতাব্দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকগণ মজুরি হার নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়। শুধু তাই নয় এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ‘Just Price rate’ নির্ণয় করে। এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট হারে মজুরি পরিশোধ করতে হবে।

৩. ষোড়শ শতাব্দি (16th century): ষোড়শ শতাব্দি থেকে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়। এ সময় সরবরাহ শ্রমিকের কারণে শ্রমের চাহিদা হ্রাস পেতে থাকে। এ শতাব্দিতে গ্রামে অবস্থিত কুটিরশিল্প ব্যাপক আকারে সম্প্রসারিত হয়। শ্রমিকদের মজুরির হার হ্রাস পায় এবং জীবনযাত্রার মান কমে যায়। উৎপাদন কাজে পরিবর্তনশীলতা আসে। এমন সময় ১৫৬২ সালে English Parliament ন্যূনতম মজুরি আইন পাস করে।

৪. সপ্তদশ শতাব্দি (17th century): সপ্তদশ শতাব্দিতে ষোড়শ শতাব্দির কুটিরশিল্প গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয়। এ পরিবেশে সাধারণত মজুরির হার অত্যন্ত কম ছিল। উৎপাদনের জন্য একক প্রতি (piece rate) মজুরির হার নির্ধারিত হয়।

৫. অষ্টাদশ শতাব্দি (18th century): অষ্টাদশ শতাব্দির মধ্যবর্তী সময়ে শিল্পে বিপ্লব শুরু হয়। এ সময় বাষ্প ইঞ্জিন ও অন্যান্য প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়। শিল্পবিপ্লবের পরপরই বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এ শতাব্দিতে বেতন কম ছিল, কিন্তু কর্মীদের কাজের চাপ ছিল অনেক বেশি। শ্রমিকদের চাহিদা বেশি ছিল, তবে তাদের কাজ ছিল অসহনীয়।

৬. ঊনবিংশ শতাব্দি (19th century): ঊনবিংশ শতাব্দি হলো উন্নয়ন এর শতাব্দি। এ সময় থেকে আইন প্রণয়নের কাজ পরিচালিত হয়। কারখানায় কত সময় পর্যন্ত কাজ করতে হবে, তার একটি নির্দিষ্ট ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৩০ সালে ক্ষুধার্থ শ্রমিকদের জন্য আইন প্রণয়ন চালু করা হয়। ১৯৬০ সালে শ্রমিকদের বিমা আইন চালু হয়। এ শতাব্দিকে শ্রমিকদের উন্নয়ন বা অধিকারের শতাব্দি নামে অভিহিত করা হয়, কারণ এ শতাব্দি থেকেই শ্রমিকদের উন্নয়নের কাজ বৃদ্ধি শুরু হয়। ১৯৭০ সাল থেকে শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। এ সময় তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিশোধের নিমিত্তে আইন পাস করা হয়। যেমন- বেকার বিমা, পেনশন, স্বাস্থ্য রক্ষা বিমা ইত্যাদি। এর মাধ্যমে মালিকদেরকে এ তথ্য প্রচার করা হয় যে, শ্রমিকরাও “মানুষ” (human being)। তাদেরকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এ সময় থেকেই তাদের জন্য মুনাফার অংশিদারিত্ব, পুরস্কার, পদোন্নতি, ইত্যাদি ব্যবস্থা করা হয় এবং যখন-তখন তাদেরকে বরখাস্ত করা যাবে না, মর্মে আইন পাস করা হয়। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল; ইসলাম, মোহাঃ বদরুল; ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাপনা; আগস্ট, ২০১৮/২০১৯; ঢাকা: গ্রন্থ কুটির; পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮।


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply