ব্যবসায় পরিবেশ ও ব্যবসায় পরিবেশের বৈশিষ্ট্য

পরিবেশ হলো পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যেসব পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে মানুষ বসবাস করে এবং উক্ত অবস্থা মানুষের জীবনযাপনের ধারাকে নানাভাবে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। এক কথায়, মানুষের জীবনধারাকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করে এমন সব পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।

মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য যেসব অর্থনৈতিক কার্যাবলীতে লিপ্ত, সেসবের উপর পরিবেশের কার্যকরী প্রভাব বিদ্যমান। ব্যবসায় মানুষের জীবিকা নির্বাহের একটি অন্যতম উপায়। ব্যবসায় গড়ে তুলতে এবং পরিচালনা করতে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে।

সুতরাং যেসব পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যকলাপ সংগঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে, এদের সমষ্টিকে ব্যবসায়ের পরিবেশ বলে। তাই বলা যায়, কোনো স্থান বা এলাকার ব্যবসায়ের পরিবেশের উপর ভিত্তি করেই উক্ত স্থান বা এলাকার ব্যবসায় বাণিজ্য গড়ে ওঠে। কোনো এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে ওঠার পিছনে ব্যবসায় পরিবেশের ছয় ধরনের উপাদান প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- প্রাকৃতিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক পরিবেশ, সামাজিক পরিবেশ, রাজনৈতিক পরিবেশ, আইনগত পরিবেশ, প্রযুক্তিগত পরিবেশ।

এ সকল উপাদান শুধু মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকেই প্রভাবিত করে না; বরং অর্থনৈতিক জীবনকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। আর তাই পরিবেশের উপাদানসমূহের পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- ইসলামী শাসনভিত্তিক দেশগুলোতে মদ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। অথচ পশ্চিমা বিশ্বে এটি বৈধ। সুতরাং দেখা যায়, ব্যবসায়ের ওপর পরিবেশের যথেষ্ট প্রভাব বিদ্যমান।

বিভিন্ন মনীষী ব্যবসায় পরিবেশ সম্পর্কে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন, যা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
W. F. Glueck এবং R. J. Lawrence-এর মতে, “The environment includes factors outside the firm which can lead to opportunities for or threats to the firm.” (অর্থাৎ, পরিবেশ হলো প্রতিষ্ঠানের বহিঃস্থ উপাদানের সমষ্টি, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ বা হুমকি বয়ে আনতে পারে।)

S. K. Kapur-এর মতে, “Environment means the whole array of conditions, factors and forces surrounding the business organisation and his job that influence the functioning or success of the organisation or manager.” (অর্থাৎ, পরিবেশ বলতে ব্যবসায় সংগঠন ও এর কার্যাবলীর চারপাশের অবস্থা, উপাদান এবং শক্তিসমূহের পূর্ণাঙ্গ বিন্যাসকে বুঝায়, যা সংগঠন বা এর ব্যবস্থাপকের কার্যক্রম অথবা সফলতাকে প্রভাবিত করে।

Robins-এর মতে, “The term environment refers to institutions or forces that are outside the organisation and that potentially affect the organisation.” (অর্থাৎ, সংগঠনের বাইরের যে সকল সংস্থা বা শক্তি প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য প্রভাব বিস্তার করে তাকে পরিবেশ বলে।)

ব্যবসায় পরিবেশের বৈশিষ্ট্য:

উপরের সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করে ব্যবসায় পরিবেশের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিলক্ষিত হয়:
১. ব্যবসায় পরিবেশ হলো কতিপয় শক্তি ও উপাদানের সমষ্টি;
২. এটি হলো চারপাশের সমষ্টি, অবস্থা, উপাদান ও শক্তিসমূহের পূর্ণাঙ্গ বিন্যাস;
৩. এটি ব্যবসায় পরিবেশ বিভিন্নভাবে পরিমাপ করা যায়; এবং
৪. এটি একটি ব্যবসায়কে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায়ের উপর বাহ্যিক ও সম্ভাব্যভাবে প্রাসঙ্গিক বা সম্পর্কযুক্ত শক্তি ও উপাদানকে সমষ্টিগতভাবে ব্যবসায় পরিবেশ বলে। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আখতার, সুফিয়া; শিরিন, প্রফেসর নাসিম ফারহানা; আহম্মদ, মোঃ জাফর; করিম, মোহাম্মদ নূরুল; (২০১৯); আন্তর্জাতিক ব্যবসায়; মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স; ঢাকা; পৃষ্ঠা ৮৫-৮৬।


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply