ব্যবসায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গবেষণার ভূমিকা

যে কোনো ধরনের ব্যবসায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গবেষণার ফলাফল ব্যবস্থাপকদের জন্য সুবিধাজনক। কারণ তারা গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ব্যবসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। ব্যবসায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গবেষণার ভূমিকা সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো:

১. উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ (collection of data and information): ব্যবসায় সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ করতে গবেষণার উপর নির্ভর করতে হয়। কারণ গবেষণা কার্য পরিচালনায় বহু সংখ্যক উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও তথ্যে রূপান্তর করার প্রয়োজন হয়। ফলে গবেষণা থেকে ব্যবস্থাপকগণ প্রয়োজনীয় উপাত্ত ও তথ্য পেতে পারেন।

২. পরিকল্পনা প্রণয়ন (making a plan): পরিকল্পনা হলো কোনো বিষয়ে আগাম সিদ্ধান্ত গ্রহণ। আগাম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের প্রয়োজন হয়, যাকে পরিকল্পনা অঙ্গন (planning premises) বলা হয়। গবেষণা থেকে পর্যাপ্ত তথ্য নিয়ে ব্যবস্থাপকগণ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন।

৩. পণ্য ও সেবা উৎপাদন (producing product and services): পণ্য ও সেবা উৎপাদন করলেই হবে না। তা কীভাবে, কত পরিমাণ, কাদের জন্য উৎপাদন করা হবে, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। তাই এক্ষেত্রে গবেষণা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।

৪. কার্ষিক সমস্যা (operational planning): কার্যক্ষেত্রে অর্থাৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সকল সমস্যা সমাধানে গবেষণার ফলাফল সহযোগিতা করে। কারণ কার্য গবেষণায় (operational research) কার্যসম্পাদনের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে বলা হয়ে থাকে।

৫. বিপণন সমস্যা সমাধান (solution of marketing problems): পণ্য উৎপাদন করলেই হবে না, তা যদি যথাযথভাবে বাজারজাত করা না যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বাজারজাতকরণ গবেষণার মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের বাজারজাতকরণ কৌশল সম্পর্কে জানা যায় এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের বাজারজাতকরণ কৌশল নির্ধারণ করা যায়।

৬. চাহিদার পূর্বানুমান (demand forecasting): চাহিদার পূর্বানুমান করা প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাজারে পণ্যের চাহিদা কেমন আছে এবং ভবিষ্যতে কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে পূর্বেই ধারণা নিতে হবে। অতঃপর পণ্য উৎপাদন করতে হবে এ কাজের জন্য পূর্বেই চাহিদার অনুমান করতে হবে। গবেষণা থেকে এ সম্পর্কে সহযোগিতা নেয়া যায়।

৭. প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের অবস্থান (market position of competitors in the market): বাজারে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নেয়া প্রয়োজন। সে মোতাবেক প্রতিষ্ঠানকে পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আন্দাজের উপর ভিত্তি করে পণ্য উৎপাদন করলে তা বিক্রি নাও হতে পারে। এজন্য গবেষণার প্রয়োজন।

৮. পরিবেশগত মূল্যায়ন (environmental scanning): পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরিবেশগত মূল্যায়ন বলতে পরিবেশের খুঁটিনাটি বিষয় যাচাই বাছাই করা যে, এগুলো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং পরিবেশের খুঁটিনাটি বিষয় জানতে গবেষণার সহযোগিতা প্রয়োজন।

৯. তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান (knowledge of information technology): বর্তমান যুগে তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান ব্যতীত বাজারে টিকে থাকা মুশকিল। কোনো প্রতিষ্ঠানকে সফল হতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানতেই হবে। গবেষণা থেকে জানা যাবে যে, নিজ প্রতিষ্ঠানের কী ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের সমাবেশ প্রয়োজন।

১০. সেলসম্যানশিপ সম্পর্কে জ্ঞান (knowledge about salesmanship): পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য বিক্রয়িকতা বা সেলসম্যানশিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বিক্রয়কর্মীদেরকে বিক্রয় করা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। ব্যবসায় গবেষণা থেকে এ সম্পর্কে জানা যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, গবেষণা থেকে উপর্যুক্ত ক্ষেত্রসমূহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা যায়। যা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, ব্যবসায় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গবেষণার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; উদ্দীন, প্রফেসর ড. মোঃ সেরাজ; আতিকুজ্জামান, এম. এম.; প্রধান, মোঃ সাইফুল্লাহ; (জানুয়ারি, ২০১৯); ব্যবসায় গবেষণা Business Research; গ্রন্থ কুটি: ঢাকা; পৃষ্ঠা- ৪৭-৪৮।


ব্যবসায় গবেষণার ভূমিকা


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply