ব্যবস্থাপনায় প্রেষণার (motivation) প্রয়োজনীয়তা
প্রেষণার (motivation) প্রয়োজনীয়তা:
ব্যবস্থাপনায় প্রেষণার (motivation) গুরুত্ব অপরিসীম। প্রেষণা (motivation) হলো কর্মীদের কার্যসম্পাদনের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপায়িত করার একটি বিশেষ প্রয়াস। নিচে প্রেষণার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো :
১। উৎসাহ সৃষ্টি (creating eagerness): প্রেষণা কর্মীদের মনে কর্মসম্পাদনের উৎসাহ সৃষ্টি করে। কারণ প্রেষণার মাধ্যমে আর্থিক ও অনার্থিকভাবে তাদের প্রয়োজন মেটানো হয়। এতে কর্মীগণ অধিক আগ্রহ সহকারে কাজ করে। ফলে তাদের অভাব মোচন হয় ও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জন করা সহজ হয়।
২। উৎপাদন বৃদ্ধি (increasing production): প্রেষণা উৎপাদন বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। কারণ শ্রমিকগণ উৎপাদন বৃদ্ধিতে আগ্রহী না হলে যতই উপকরণ থাকুক না কেন, উৎপাদন বৃদ্ধি হবে না। তাই শ্রমিকদেরকে প্রণোদিত করলেই অধিক উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। তাই শ্রমিকদেরকে প্রণোদিত করলেই অধিক উৎপাদন আশা করা যায়। S. W. Gellerman-এর মতে, “প্রেষণা কর্মীদের উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি করে।”
৩। দক্ষতা বৃদ্ধি (to develop efficiency): কর্মীর কাজে আনন্দ ও উদ্দীপনা থাকলে সে মনোযোগের সাথে কার্যসম্পাদন করে। ফলে কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৪। অপচয় কমায় (reducing wastage): অপচয় হ্রাসের ক্ষেত্রেও প্রেষণা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রণোদনার ফলে শ্রমিকগণ অত্যন্ত যত্ন ও আন্তরিকতার সাথে কর্ম সম্পাদন করে। ফলে অপচয় হ্রাস পায়।
৫। উদ্ভাবনী শক্তি বাড়ায় (increase creativity): প্রেষণার ফলে কর্মীগণ অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে। ফলে তারা নতুন কিছু চিন্তা ও গবেষণার সুযোগ যায়। তাদের অনুকূল চিন্তা ও গবেষণার ফলে প্রতিষ্ঠানে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়।
৬। শ্রমিক ব্যবস্থাপনা সুসম্পর্ক (develop relationship): প্রেষণার মাধ্যমে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ব্যবস্থাপনা অনেক বিষয় নিয়ে শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময়ের সুযোগ পায়। ফলে উভয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।
৭। উচ্চ মনোবল (high morale): প্রেষণা উচ্চ মনোবল গঠনে ভূমিকা রাখে। প্রেষণার মাধ্যমে আন্তরিকতা ও মনোবল বৃদ্ধি পায়। কারণ প্রেষণা তাদের মধ্যে কর্মের তাগিদ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা অভাব মোচনের জন্য কাজে ব্রতী হয়।
৮। বিচ্যুতি কমায় (reducing deviation): প্রেষণা প্রক্রিয়া চালু থাকলে প্রতিষ্ঠানে শ্রম বিচ্যুতি খুব কম ঘটে। প্রেষণা না থাকলে শ্রমিকগণ কাজে অমনোযোগী হয় এবং তা কাজে বিচ্যুতি ঘটায়। কাজেই শ্রম বিচ্যুতি ও অপচয় হ্রাসের জন্য প্রেষণা অপরিহার্য।
৯। পরিবর্তন প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ (to reduce obstacles of changing): তুষ্ট ও প্রণোদিত কর্মীগণ প্রতিষ্ঠানের যে কোনো পরিবর্তনকে স্বাগত জানায়। এ বিষয়ে তারা কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।
১০। তত্ত্বাবধান ব্যয় হ্রাস (reducing supervision cost): কর্মীগণ প্রণোদিত হলে মনোযোগের সাথে কাজ করে। ফলে তাদের কাজ গুরুত্বসহকারে তত্ত্বাবধান করার প্রয়োজন হয় না। তত্ত্বাবধায়কগণ এ সময়টুকু অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করতে পারে।
১১। অনুকূল আচরণ (favourable behaviour): প্রেষণা কর্মীদের দলীয় আচরণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আসতে ও ধরে রাখতে অবদান রাখে। কর্মীদের অনুকূল দলীয় আচরণ প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দলীয় আচরণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হলে যে কোনো কঠিন কাজ অতি সহজেই সম্পন্ন হতে পারে। কারণ এতে তারা কার্যসম্পাদনে একে অপরকে সহযোগিতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্রেষণাই তাদেরকে এরূপ অনুকূল আচরণ প্রদর্শনে উৎসাহিত করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরকে দিয়ে সুষ্ঠুভাবে কাজ করিয়ে নিতে হলে তাদেরকে চাহিদা মোতাবেক প্রেষণার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ প্রেষণাই কর্মীদেরকে কাজে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে কর্মীগণ চাহিদা পূরণের জন্য ও প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য পূরণের জন্য কাজ করে থাকে। C. B. Mamoria-এর মতে, “প্রেষণার উদ্দেশ্য হলো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে কর্মীরা সাংগঠনিক লক্ষ্যার্জনে প্রবল আগ্রহ, উদ্যম ও কৌতূহলের সাথে ব্যক্তিক ও দলীয় উচ্চ মানসিক সন্তুষ্টি সহকারে, দায়িত্বের প্রতি সচেতন হয়ে, আনুগত্য ও শৃঙ্খলা এবং গর্ব ও আত্মবিশ্বাসের সাথে অনেক জটিল কার্যসম্পাদন করে থাকে।” সুতরাং প্রেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: আলাউদ্দিন, প্রফেসর ড. মোঃ; ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নূরুল; ইসলাম, মোহাঃ বদরুল; ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাপনা; আগস্ট, ২০১৮/২০১৯; ঢাকা: গ্রন্থ কুটির; পৃষ্ঠা – ২৫২, ২৫৩।
Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL