ভারতীয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং এর বৈশিষ্ট্য

জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ। আর আয়তনের দিক থেকে সপ্তম বৃহৎ দেশ। অতীতে ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা কৃষি নির্ভর ছিল। তারপর ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের পর ভারত ব্রিটেনের দখলে চলে যায়। এরপর থেকে ভারত আস্তে আস্তে শিল্প বিস্তার শুরু করে। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী। এরপর ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।
স্বাধীনতা লাভের পর হতে ভারত স্বাধীনভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। কিন্তু সেই ইংল্যান্ডের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতির প্রভাব ভারতের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতির উপর পড়ে। ভারত এখনও সব সময় ইংল্যান্ডসহ পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে।
ভারতীয় ব্যবস্থাপনা সংগঠনের যাবতীয় স্তরে একজন ব্যবস্থাপক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিটি স্তরে ব্যবস্থাপকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করে। ভারতের ব্যবস্থাপনার উপর ব্রিটেনের ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও ভারতের ব্যবস্থাপনার কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে ভারতীয় ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:
১. শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক: বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ভারতে শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক তেমন ভালো না হলেও বর্তমানে অনেক উন্নত। বর্তমানে ব্যবস্থাপকরা একদিকে শ্রমিক অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে শ্রমিক ও কর্মীদের সহায়তা করে। এতে শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক উন্নত হয়।
২. পণ্য ও সেবার মানোন্নয়ন: ভারতীয় ব্যবস্থাপকরা পরিশ্রমী, দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন। তারা তাদের মেধা, বুদ্ধি ও মননশীলতা কাজে লাগিয়ে একদিকে উৎপাদন বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে পণ্য ও সেবার গুণগত মানোন্নয়নে স্বতঃস্ফূর্ত মনোনিবেশ প্রদান করছে।
৩. পদোন্নতি: ভারতে জ্যেষ্ঠতার পরিবর্তে কর্মদক্ষতার উপর ভিত্তি করে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। যার ফলে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ কর্মীরা ব্যবস্থাপনার উচ্চ স্তরে আসীন হতে পারে না।
৪. প্রেষণা দান: ভারতীয় ব্যবস্থাপকরা পর্ষদ কর্মী ও ব্যবস্থাপকের জন্য উন্নত আকর্ষণীয় প্রেষণামূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা করে থাকে। যার কারণে সবাই কর্ম সম্পাদন প্রক্রিয়ায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
৫. কারিগরি শিক্ষা প্রয়োগ: ভারতের ব্যবস্থাপনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন ও তার প্রয়োগ। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঠ্যসূচিতে ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষার সাহায্য নেয়।
৬. অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা: ব্যবস্থাপনার শ্রমিকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাকে অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা বলে। এখানে শ্রমিকরা ব্যবস্থাপকদের সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরামর্শ প্রদানে সাহায্য করে। এর ফলে শ্রমিকরা আরও বেশি কাজে আগ্রহ পায়।
৭. সহজলভ্য শ্রমিক: ভারতে ১১৫ কোটির বেশি লোক বাস করে। ফলে এই দেশে অনেক সহজে শ্রমিক পাওয়া যায়। বর্তমানে ভারত শিল্পে অনেক অগ্রগতি করেছে। এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যাকে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা ব্যবস্থাপনার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।
৮. দক্ষতা: ব্যবস্থাপনা একটি কঠিন কাজ। এই কাজ পরিচালনা করার জন্য ব্যবস্থাপকদের অনেক বেশি দক্ষ হতে হয়। কারণ ব্যবস্থাপকরা শ্রমিক কর্মচারীদের মনোভাব বুঝে তাদের কাছ থেকে কাজ করিয়ে নেয়। এই অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হলে ব্যবস্থাপককে বেশি দক্ষ হতে হয়।
ভারতের আধুনিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো বিশেষ ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়ক বই: ব্যবস্থাপনা চিন্তাধারা, (মে ২০২৩), মাস্টার্স ফাইনাল, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পৃষ্ঠা: ১৬৭ – ১৬৮।
ভারতীয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL