ভিটামিন ‘এ’ এবং এর অভাবজনিত রোগ

ভিটামিন ‘এ’ (vitamin ‘A’): ভিটামিন ‘এ’ চর্বিতে দ্রবণীয়। এ জাতীয় ভিটামিন চোখ, ফুসফুস, পাকস্থলী ও অন্ত্রের উপর ক্রিয়া করে। প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ রেটিনল এবং উদ্ভিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ ক্যারোটিনরূপে পাওয়া যায়। ভিটামিন ‘এ’ যকৃতে জমা থাকে। এটি বর্ণহীন এবং তাপে স্থিতিশীল। ভিটামিন ‘এ’ অম্ল ও ক্ষারে নষ্ট হয় না। মৃদু তাপে ঢাকনাসহ পাত্রে রান্না করলে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হয় না। ভিটামিন ‘এ’ দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে থাকে। যেমন –

১. ভিটামিন ‘এ’ দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
২. চোখের যাবতীয় রোগ থেকে ভিটামিন ‘এ’ রক্ষা করে, বিশেষ করে জেরোফথ্যালমিয়া রোগ প্রতিরোধে করে। এজন্য একে অ্যান্টিজেরোফথ্যালমিক (antixerophthalmic) ভিটামিনও বলা হয়।
৩. ভিটামিন ‘এ’ চোখের স্বাভাবিক পিচ্ছিল ভাব বজায় রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. দেহের ত্বক ও কোষঝিল্লির সজীব রাখে।
৫. ভিটামিন ‘এ’ চোখের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং অল্প আলোতে দেখতে সাহায্য করে।
৬. ভিটামিন ‘এ’ রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন ‘এ’ কে Anti- infective ভিটামিনও বলা হয়।
৭. প্রজননতন্ত্রের গঠন ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৮. নার্ভ সেল ও নার্ভ ফাইবার টিস্যুর বৃদ্ধির জন্য এই ভিটামিন প্রয়োজন।
৯. এটি প্রোটিন পরিবহনের কাজ করে।

ভিটামিন ‘এ’ এবং এর অভাবজনিত রোগ

ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত রোগ: মানব দেহে ভিটামিনের অভাবে নানান রোগ দেখা দেয়। শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় ভিটামিনের অভাব থাকলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে মানব দেহে সৃষ্ট নানান রোগের মধ্যে রাতকানা, জেরোফথ্যালমিয়া , ক্যারাটোম্যালেসিয়া, বিটট্ স স্পোর্ট উল্লেখযোগ্য।

১. রাতকানা (night blindness): এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দিনের আলোয় দেখতে পেলেও সন্ধ্যা হলে অল্প আলোতে দেখতে পায় না। চোখের রেটিনায় ‘রড’ নামক একটি কোষ আছে, যা রাতের বেলায় অল্প আলোতে দেখতে সাহায্য করে। রডপসিন এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ। এটা সংশ্লেষণের জন্য ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন। রক্তে ভিটামিন ‘এ’ – এর মাত্রা কম থাকলে রডপসিনের সংশ্লেষণ কমে যায়, অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়, এ অবস্থাকে রাতকানা রোগ বলে।

২. জেরোফথ্যালমিয়া (xerophthalmia): জেরোফথ্যালমিয়া চোখের কর্নিয়া এবং কনজাংটিভায় আক্রান্ত হয়।
২.ক) কনজাংটিভা জেরোসিস: চোখের সাদা অংশ হলেঅ কনজাংটিভা। চোখের পানি কনজাংটিভা ও কর্নিয়াকে সতেজ, উজ্জল ও মসৃণ রাখে। ভিটামিন ‘এ’ – এর অভাবে চোখে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকে না। ফলে কনজাংটিভা শুষ্ক ও পুরু হয়ে যায়। ফলে চোখের সতেজতা ও উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়।
২.খ) কর্নিয়াল জেরোসিস: সুস্থ কর্নিয়া মসৃণ ও উজ্জ্বল থাকে। ক্রমাগত ভিটামিন ‘এ’ – এর অভাবে কর্নিয়া শুকিয়ে যায়। ফলে কর্নিয়া বিবর্ণ, ঝাপসা হয়। চোখের কর্নিয়ার স্বাভাবিক সজীব আবরক কলা নষ্ট হয়। চোখ আলো সহ্য করতে পারে না। চোখের চতুর্দিকের লাল অংশটি ফুলে আরও লাল হয়। চোখের পানি শুকিয়ে যায়। চোখে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে কর্নিয়ায় আলসার বা ঘা হয়। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চোখে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

৩. ক্যারাটোম্যালেসিয়া (keratomalacia): ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে কর্নিয়া নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ঘা বা আলসার হয়। এই ঘা প্রকট হলে কর্নিয়া নরম হয়। কনজাংটিভা ফেটে ভেতরের অংশ বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় রোগী অন্ধ হয়ে যায়।

৪. বিটট্ স স্পোর্ট ( bitots sport): ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব চলতে থাকলে চোখের কনজাংটিভা শুষ্ক হয়, ফলে আবরণ ঘোলাটে হয়, চোখের সাদা অংশে ছোট চকচকে সাদা দাগ পড়ে। একে বিটট্ স স্পোর্ট বলে। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: সুলতানা, প্রফেসর রাফিকা, এবং আরা, গাজী হোসনে, গার্হস্থ বিজ্ঞান, কাজল ব্রাদার্স লি., ঢাকা, পৃষ্ঠা ২১০, ২১১, ২১২, ২১৩।


ভিটামিন এ অভাবজনিত রোগ


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply