মানবদেহের কয়েকটি মুখ্য নালিবিহীন গ্রন্থির পরিচিতি, কাজ ও নিঃসৃত হরমোন

অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র বা এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি (endocrine system) হলো মানবদেহে রাসায়নিক বার্তাবহনের একটি ব্যবস্থা (system)। সাধারণত নালিবিহীন এসব গ্রন্থি (gland) থেকে মানবদেহে হরমোন নিঃসৃত হয়। এদের মধ্যে কয়েকটি মুখ্য গ্রন্থি রয়েছে, এসব গ্রন্থি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:

(ক) পিটুইটারি গ্রন্থি (pituitary gland): মস্তিষ্কের নিচের অংশে পিটুইটারি গ্রন্থি বা হাইপোফাইসিস অবস্থিত। এটি মানবদেহের প্রধান হরমোন উৎপাদনকারী গ্রন্থি। কারণ একদিকে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন সংখ্যায় যেমন বেশি, অপরদিকে অন্যান্য গ্রন্থির উপর এসব হরমোনের প্রভাবও বেশি। দেহের সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নালিবিহীন গ্রন্থি হলেও আকারে এটি সবচেয়ে ছোট। এ গ্রন্থি থেকে গোনাডোট্রপিক, সোমাটোট্রপিক থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন (TSH) এডরেনোকর্টিকোট্রপিন ইত্যাদি হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি অন্যান্য গ্রন্থিকে প্রভাবিত করা ছাড়াও মানবদেহের বৃদ্ধির হরমোন নির্গত করে।

মানবদেহের কয়েকটি মুখ্য নালিবিহীন গ্রন্থির পরিচিতি, কাজ ও নিঃসৃত হরমোন
চিত্র: এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি (endocrine system)। সূত্র: healthdirect

(খ) থাইরয়েড গ্রন্থি (thyroid gland): থাইরয়েড গ্রন্থি গলায় ট্রাকিয়ার উপরের অংশে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে প্রধানত থাইরক্সিন হরমোন নিঃসৃত হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন থাইরক্সিন (thyroxine) সাধারণত মানবদেহে স্বাভাবিক বৃদ্ধি, ও বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েডের আরেকটি হরমোন ক্যালসিটোনিন (calcitonin) ক্যালসিয়াম বিপাকের সাথে জড়িত।

(গ) প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি (parathyroid gland): একজন মানুষের সাধারণত চারটি প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থাকে, যার সবগুলোই থাইরয়েড গ্রন্থির পিছনে অবস্থিত। এই গ্রন্থি হতে নিঃসৃত প্যারাথরমোন (parathormone) মূলত ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।

(ঘ) থাইমাস গ্রন্থি (thymus gland): থাইমাস গ্রন্থি গ্রীবা অঞ্চলে অবস্থিত। থাইমাস গ্রন্থি দেহের রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বিকাশে সাহায্য করে। শিশুকালে এই গ্রন্থি বিকশিত হয়ে থাকে; পরে বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে ছোট হয়ে যায়। এই গ্রন্থি থেকে থাইমোসিন (thymosin) হরমোন নিঃসৃত হয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষের সাধারণত এই হরমোন থাকে না, থাকলেও খুবই নিম্ন মাত্রায়।

(ঙ) অ্যাডরেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি (adrenal gland): অ্যাডরেনাল গ্রন্থি কিডনির উপরে অবস্থিত। অ্যাডরেনাল গ্রন্থি দেহের অত্যাবশ্যকীয় বিপাকীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থি মূলত কঠিন মানসিক ও শারীরিক চাপ থেকে পরিত্রাণে সাহায্য করে। অ্যাডরেনালিন (adrenalin) এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনগুলোর একটি।

(চ) আইলেটস অফ ল্যাংগারহ্যানস (islets of langerhans): আইলেটস অফ ল্যাংগারহ্যানস অগ্নাশয়ের মাঝে অবস্থিত, এই কোষগুচ্ছ শরীরের শর্করা বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। এর নালিহীন কোষগুলো ইনসুলিন (insulin) ও গ্লুকাগন (glucagon) নিঃসরণ করে; যা রক্তের গ্লুকোজর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

(ছ) গোনাড (gonads) বা জনন অঙ্গ গ্রন্থি: এই গ্রন্থিটি মেয়েদের ডিম্বাশয় এবং ছেলেদের শুক্রাশয়ে অবস্থিত। জনন অঙ্গ থেকে নিঃসৃত হরমোন দেহের পরিণত বয়সের লক্ষণগুলো বিকশিত করতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও প্রাণীর জনন অঙ্গের বৃদ্ধির পাশাপাশি জননচক্র এবং যৌন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। জনন অঙ্গ থেকে পরিণত বয়সের পুরুষদেহে টেস্টোস্টেরন (testosterone) এবং স্ত্রী-দেহে ইস্টোজেন (estrogen) হরমোন উৎপন্ন হয়। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: জীববিজ্ঞান বোর্ড বই (নবম-দশম), পৃষ্ঠা – ২২১, ২২২।


মানবদেহের কয়েকটি মুখ্য নালিবিহীন গ্রন্থি


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply