মানবদেহে পাথর: কারণ ও ধরন
মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পাথর তৈরি হতে পারে, যা অনেক সময় ব্যথা ও জটিলতার কারণ হয়। নিম্নে মানবদেহে পাথর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো:-
1. বৃক্কে পাথর (kidney Stone): কিডনি স্টোন বা বৃক্কে পাথর এটি বর্তমানে সাধারণ একটি রোগ বলা যেতে পারে। এ সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন: শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন বাড়লে কিডনিতে পাথর হতে পারে। অপর্যাপ্ত পানি পানেও কিডনিতে পাথর হতে পারে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড, স্ট্রুভাইট বা সিস্টিনের কারণেও বৃক্কে পাথর হয়।

2. পিত্তথলির পাথর (Gallstone): পিত্তথলির পাথর কোলেস্টেরল বা বিলিরুবিন থেকে গঠিত হয়। বিস্তারিত বলতে গেলে, এটি লিভার থেকে তৈরি পিত্ত রস (Bile) (পিত্তরস হলো পিত্ত থলিতে থাকা হলুদ রঙের তরল পদার্থ), যা পিত্তথলি জমা রাখে এবং চর্বি জাতীয় খাবার খেলে হজমের জন্য পিত্তরস পিত্তথলি থেকে বেরিয়ে আমাদের খাদ্য নালিতে আসে এবং হজমে সহায়তা করে। বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার হজম করতে সহায়তা করে। নানা কারণে এ পিত্তথলিতে বিভিন্ন পদার্থ অতিরিক্ত জমে গিয়ে পাথরের সৃষ্টি করে। অর্থাৎ পিত্তরস পিত্তথলিতে থাকার সময়ে পিত্তরস তথা বাইলের কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। পিত্ত রসে থাকে কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম, লবণ, এসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। এই পিত্তরসের বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হয় পিত্তথলির পাথর।
3. মূত্রথলির পাথর (Urinary bladder Stone): মূত্রথলিতে পাথর হওয়ার কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ্য করা হলে:
১। প্রস্রাবে খনিজ জমে তৈরি হয়।
২। যখন মূত্রাশয় খালি হয় না, তখন মূত্রাশয়ে পাথর তৈরি হতে পারে। এর ফলে প্রস্রাব ঘনীভূত হয়। ঘনীভূত প্রস্রাব স্ফটিক হয়ে গেলে পাথর তৈরি হতে পারে।
৩। প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি BPH বা সৌম্য প্রোস্ট্যাটিক হাইপারপ্লাসিয়ায় আক্রান্ত পুরুষদের মূত্রাশয় পাথর হতে পারে।
৪। চিকিৎসা যন্ত্র মূত্রাশয় ক্যাথেটার, মূত্রনালীতে প্রস্রাব নিষ্কাশনে সাহায্য করার জন্য পাতলা টিউবের কারণে মূত্রাশয়ের পাথর হতে পারে।
৫। কিডনির পাথর মূত্রনালী দিয়ে মূত্রাশয়ের মধ্যে যেতে পারে এবং যদি বাইরে না যায়, তবে পাথরে পরিণত হতে পারে।
4. লালার গ্রন্থির পাথর (Sialolithiasis): লালা গ্রন্থিতে ক্যালসিয়াম জমে সৃষ্টি হয়। যা সিয়ালোলিথিয়াসিস নামেও পরিচিত। ছোট ও শক্ত খনিজ জমা, যা লালা গ্রন্থি বা তাদের নালীতে তৈরি হয়। এ পাথরগুলি আক্রান্ত গ্রন্থিতে ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
5. অগ্ন্যাশয়ের পাথর (Pancreatic stone): বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রধান কারণ হলো পিত্তনালির পাথর বা গলস্টোন। এ ছাড়া অতিরিক্ত মদ্যপান, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, অগ্ন্যাশয়ে আঘাত, এলোপ্যাথিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত ওজন, সার্জারি, ইনফেকশন, জন্মগত ত্রুটি, আলসার বা জিনগত কারণেও অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হতে পারে। আর এ দীর্ঘমেয়াদি অগ্ন্যাশয় প্রদাহের ফলে সৃষ্টি হতে পারে অগ্ন্যাশয়ে পাথর।
সময় মতো চিকিৎসা না নিলে, এসব পাথর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। [ইশরাত জাহান মিম] [সংকলিত]