মােট উপযােগ এবং প্রান্তিক উপযােগ
মােট উপযােগ [Total Utility] বলতে সাধারণত কোন নির্দিষ্ট সময়ে যে কোন একটি দ্রব্যের বা সেবার বিভিন্ন একক থেকে ব্যক্তি মানুষের প্রাপ্ত উপযোগের সমষ্টিকে বুঝায়। উদাহরণস্বরূপ –
বাজারে গিয়ে কোন একজন ব্যক্তি (ভোক্তা) একাধিক আপেল ক্রয় করতে চান। ব্যক্তিটি প্রথম আপেলটি ক্রয় করতে যে টাকা খরচ করেন; দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ আপেলটি ক্রয় করতে সে টাকা খরচ করেন না। কারণ প্রথম আপেলটি ভােগ করার পর তার আপেল খাওয়ার অভাব (উপযোগ) অনেকাংশে পূরণ হয়ে যায়। দ্বিতীয় আপেলটির প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা বা আগ্রহ কমে যায়। তৃতীয় ও চতুর্থ আপেলের ক্ষেত্রে আগ্রহ আরও কমে যায়। এমন হতে পারে যে, তিনি আর আপেল নাও ক্রয় করতে পারেন। কারণ আপেল খাওয়ার প্রতি সে সময়ে তার আর কোন আগ্রহ থাকে না কিংবা তার কাছে অতিরিক্ত আপেলের উপযােগ শূন্য।
আপেল ক্রয় করতে ব্যক্তিটিকে টাকা খরচ করতে হয়। মনেকরি, প্রথম আপেলটি তিনি ক্রয় করলেন ২০ টাকা দিয়ে, দ্বিতীয় আপেলটি ক্রয় করতে তিনি ১৫ টাকা দিতে রাজি আছেন, তৃতীয় আপেলটির জন্য ১০ টাকা দিতে চান এবং ৪র্থ আপেলটির জন্য ৫ টাকা। এভাবে (২০ + ১৫ + ১০ + ৫) = ৫০ টাকা দিয়ে তিনি ৪টি আপেল ক্রয় করলেন। টাকাকে উপযােগের মাপকাঠি ধরে নিয়ে ৪টি আপেলের মােট উপযােগ হল ৫০ টাকা।
সুতরাং কোন নির্দিষ্ট সময়ে যে কোন একটি দ্রব্যের বা সেবার বিভিন্ন একক থেকে ব্যক্তি মানুষের প্রাপ্ত তৃপ্তির (উপযোগের) যোগফলকে মােট উপযােগ বলে। যেহেতু অতিরিক্ত আপেল থেকে ব্যক্তি মানুষ ক্রমান্বয়ে কম তৃপ্তি (উপযোগ) পায়, সেহেতু ব্যক্তিটির ভােগের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে মােট উপযােগ ক্রমহ্রাসমান হারে বাড়ে।
প্রান্তিক উপযােগ [Marginal Utility] বলতে সাধারণত অতিরিক্ত এক একক দ্রব্য বা সেবা ভােগ করে ব্যক্তি মানুষের প্রাপ্ত অতিরিক্ত উপযােগকে বুঝায়। উদাহরণস্বরূপ –
বাজারে গিয়ে কোন একজন ব্যক্তি খাওয়ার জন্য ৩টি আপেল ক্রয় করলেন। এখন ঐ ব্যক্তিটি আবার আরেকটি আপেল ক্রয় করলেন। এ অতিরিক্ত চতুর্থ আপেলটি হল তার শেষ বা প্রান্তিক আপেল। এ প্রান্তিক আপেল থেকে তিনি যে তৃপ্তি (উপযােগ) পেলেন, তাই হল প্রান্তিক উপযােগ। চতুর্থ আপেলটি ক্রয় করতে তিনি ৫ টাকা খরচ করলেন। এখানে তার প্রান্তিক উপযােগ হবে ৫ টাকার সমান।
সুতরাং সর্বশেষ অতিরিক্ত এক একক দ্রব্য বা সেবা ভােগ করে ব্যক্তি মানুষ যে অতিরিক্ত তৃপ্তি (উপযোগ) পায়, তাই হল প্রান্তিক উপযােগ। নিম্নের সূচি বা সারণিতে দ্রব্য (আপেল) ক্রয়ের তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে মােট উপযােগ এবং প্রান্তিক উপযােগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া হল:
দ্রব্য (আপেলের একক) | মােট উপযােগ (টাকায়) | প্রান্তিক উপযােগ (টাকায়) |
প্রথম | ২০ | ২০ |
দ্বিতীয় | ২০ + ১৫ = ৩৫ | ১৫ |
তৃতীয় | ৩৫ + ১০ = ৪৫ | ১০ |
চতুর্থ | ৪৫ + ৫ = ৫০ | ৫ |
পঞ্চম | ৫০ + ০ = ৫০ | ০ |
ষষ্ঠ | ৫০ – ৫ = ৪৫ | -৫ |
উপরের সূচি বা সারণিতে দেখা যায়, যখন প্রথম আপেলের ক্রয় মূল্য ২০ টাকা, তখন প্রান্তিক উপযােগ হল ২০ টাকা। দ্বিতীয় আপেল ক্রয় করায় প্রথম ও দ্বিতীয় আপেলের ব্যয় ৩৫ টাকা। ২টি আপেল থেকে প্রাপ্ত মােট উপযােগ ৩৫ টাকা। দ্বিতীয় আপেল থেকে প্রাপ্ত প্রান্তিক উপযােগ ১৫ টাকা। তৃতীয় আপেল ক্রয় করায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় আপেলের ব্যয় ৪৫ টাকা। ৩টি আপেল থেকে প্রাপ্ত মােট উপযােগ ৪৫ টাকা। তৃতীয় আপেল থেকে প্রাপ্ত প্রান্তিক উপযােগ ১০ টাকা।
এরূপ ভাবে ৪টি আপেল থেকে প্রাপ্ত মোট উপযােগ ৫০ টাকা। চতুর্থ আপেলের প্রান্তিক উপযােগ ৫ টাকা। এরূপ ভাবে আপেলের বিভিন্ন একক থেকে প্রান্তিক উপযােগ হল যথাক্রমে ২০, ১৫, ১০, ৫, ০ ও – ৫ টাকা। পঞ্চম আপেলটির কোন উপযােগ না থাকায় তা ক্রয় করা হয় না। আর ষষ্ঠ আপেলটি ক্রয় করলে মােট উপযােগ হ্রাস পাবে। কারণ হল ষষ্ঠ আপেলটির প্রান্তিক উপযােগ ঋণাত্মক। [সংকলিত]