মুদ্রাস্ফীতি | Inflation
মুদ্রাস্ফীতি কি?
অর্থনীতিতে পণ্যসামগ্রী ও সেবার দামস্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকলে তাকে মুদ্রাস্ফীতি (inflation) বলে। সাধারণত পণ্যসামগ্রি ও সেবার দামস্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবার প্রবণতাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। সাধারণত ১০% এর উপরে দামস্তর বাড়লে তা মুদ্রাস্ফীতির পর্যায়ে পড়ে বলে অধিকাংশ নীতি নির্ধারক মনে করেন। অপরদিকে পূর্ববর্তী বছর বা মাসের সাথে অথবা কোন নির্দিষ্ট সময়ের সাথে বর্তমানের তুলনা করে খাদ্য, পোশাক, বসতি, সেবা, প্রভৃতি বিভিন্ন উপাদানের মূল্য বৃদ্ধির যে পার্থক্য যাচাই করেন সেটাকে সাধারণত মূল্যস্ফীতি।
কারণ, গতি, সময়, এলাকা ও প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে মুদ্রাস্ফীতিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। তবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি। অর্থনীতিতে নানা কারণে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে চাহিদা বৃদ্ধি, প্রাকৃতির দুর্যোগ, সুদের হার বৃদ্ধি, কৃত্রিম সংকট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মুদ্রাস্ফীতি সমাজের নানা পেশা ও শ্রেণীর মানুষের উপর অনুকূল কিংবা প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতির কারণে সীমিত আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আয় ও সম্পদ বন্টনে বৈষম্য দেখা দেয়, সামাজিক বিশৃংখলা দেখা দেয়, দুর্নীতি ও কালোবাজারী দেখা দেয়। তবে ব্যবসায়ী শ্রেণী লাভবান হয়।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অনেকগুলো হাতিয়ার থাকলেও সরকার মূলত আর্থিক নীতি ও রাজস্ব নীতিকেই প্রয়োগ করে থাকে। অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি সর্বদাই খারাপ নয়, মৃদু মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সহায়ক। তবে উচ্চ মাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলে। অর্থনীতিবিদগণ বিভিন্নভাবে মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা দিয়েছেন।
কুলবর্ণ এর মতে, ‘মুদ্রাস্ফীতি এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে অত্যাধিক পরিমাণ অর্থ অল্প পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রির পিছনে ধাবিত হয়।’
ক্রাউত্থার এর মতে, ‘মুদ্রাস্ফীতি এমন এক অবস্থা, যখন অর্থের মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পায় অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।’
পিশুর এর মতে, ‘যখন উৎপাদনশীল কার্য অপেক্ষা মানুষের আর্থিক আয় বেশি হারে বাড়ে, তখনই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।’
কেইস এর মতে, ‘পূর্ণ নিয়োগের ক্ষেত্রে উৎপাদনের পরিমাণ স্থির থেকে মোট চাহিদা বৃদ্ধির দ্বারা যদি দামস্তর বাড়ে, তবে তা হবে প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি।’
ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের মতে, ‘অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধিই হলো মুদ্রাস্ফীতি অর্থাৎ কোনো দেশে মোট অর্থের যোগান তার চাহিদার তুলনায় বেশি হলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে।’
মনিটারিস্টরা মনে করেন, ‘অর্থের অতিরিক্ত যোগান বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।’
পরিশেষে বলা যায় যে, মুদ্রাস্ফীতি হলো এমন একটি পরিস্থিতি, যখন পণ্যসামগ্রি ও সেবার দামস্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে একটি বা কয়েকটি পণ্যের দাম হঠাৎ কোনো কারণে বৃদ্ধি পেলেই তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয় না। বরং সার্বিকভাবে পণ্যসামগ্রি ও সেবার দামস্তর বৃদ্ধি পেলেই তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: ইসলাম, ড. নুর; খায়ের, মোহাম্মদ আবুল; (২০২২); সামষ্টিক অর্থনীতি; ঢাকা: দি ইউনাইটেড পাবলিশার্স; পৃষ্ঠা – ৫৯০।
Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL