মূলধন বাজেটিং-এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়াবলী

কোনো প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন পরিকল্পনাই হল মূলধন বাজেটিং। মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো ধাপ রয়েছে, যেগুলো এ প্রক্রিয়াকে অধিকতর কার্যকর করতে সাহায্য করে। এই ধাপগুলো সম্পাদন করার সময় কতগুলো বিষয় বিবেচনায় আনতে হয়। এসব বিষয় প্রতিষ্ঠানের নীতি ও সিদ্ধান্তের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাকে এবং এসব বিষয়াবলীকে বিবেচনা করেই মূলত আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নিচে মূলধন বাজেটিং-এর সাথে সম্পর্কিত বিষয়াবলী সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

১. সম্ভাব্য বিনিয়োগ প্রকল্প (prospective investment project): মূলধন বাজেটিং-এ সাধারণত অনেকগুলো প্রকল্প থেকে তুলনামূলকভাবে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রকল্পগুলোকে চিহ্নিত করতে হয়। কারণ সম্ভাব্য প্রকল্পগুলোকে চিহ্নিত করতে না পারলে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্প চিহ্নিত করাও সম্ভব হবে না। ফলে প্রতিষ্ঠান লাভজনক প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ হারাবে, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য কখনও মঙ্গলজনক নয়।

২. প্রকল্প ব্যয় (cost of the project): চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর প্রত্যেকটিতে কি পরিমাণ তহবিল বিনিয়োগ করতে হবে এবং কোন সময়ে তহবিল বিনিয়োগ করতে হবে, তা নির্ণয় করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্য দুই রকম ব্যয়ের কথা বিবেচনায় আনতে হবে। প্রথমত, সম্পত্তি অর্জন ব্যয়। অর্থাৎ সম্পত্তিতে যে পরিমাণ অর্থ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনিয়োগ করতে হবে, যা প্রারম্ভিক ব্যয় নামে পরিচিত। দ্বিতীয়ত, উক্ত সম্পত্তিটি কার্যক্ষম রাখতে হলে যে পরিমাণ তহবিল নিয়মিত বিনিয়োগ করতে হবে।

৩. প্রকল্পের মেয়াদকাল (duration of the project): বিনিয়োগযোগ্য প্রকল্পগুলো থেকে একটি প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রকল্পের মেয়াদকাল বিবেচনা করতে হয়। কারণ বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। এর উপর ভিত্তি করে প্রকল্পের ঝুঁকি, ব্যয়, নগদ প্রবাহ, ভগ্নাবশেষ মূল্য, প্রভৃতি বিষয় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। আর প্রকল্পের অর্থসংস্থান প্রকল্পের মেয়াদের উপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে।

৪. নগদ আন্তঃপ্রবাহ (cash inflow): নগদ আন্তঃপ্রবাহ মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ এই নগদ প্রবাহের উপর ভিত্তি করে প্রকল্প নির্বাচন করা হয়। আর নগদ আন্তঃপ্রবাহের সাথে ঝুঁকি জড়িত। কেননা স্থিতিশীল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নগদ প্রবাহ একরকম নয়। এক্ষেত্রে ঝুঁকি সমন্বয় করে প্রকল্পের সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি নির্ধারণ করা হয় এবং তুলনামূলকভাবে লাভজনক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

৫. প্রকল্পের উদ্ধারকৃত মূল্য (salvage value of the project): মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের সময় প্রকল্পের অবশিষ্ট বা ভগ্নাবশেষ মূল্য বিবেচনায় আনতে হবে। কেননা ভগ্নাবশেষ মূল্য প্রকল্পের অর্থের আন্তঃপ্রবাহকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে এটি বিবেচনায় না আনা হলে মূলধন বাজেটিং-এর সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত হবে না।

৬. প্রকল্পগুলোর ঝুঁকি (risk of the projects): একটি প্রকল্পের নগদ প্রবাহের সাথে ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মূলধন বাজেটিং-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এরূপ ঝুঁকিকে বিবেচনায় আনতে হয়। সাধারণত প্রকল্পগুলোর নগদ প্রবাহকে বাট্টার হার দ্বারা বাট্টা করে বর্তমান মূল্য বের করা হয়। এক্ষেত্রে যদি ঝুঁকির পরিমাণ বেশি হয়, তবে বাট্টার হারও বেশি হয়ে থাকে।

৭. বাট্টার হার (discount rate): সাধারণত প্রতিটি প্রকল্পের প্রত্যাশিত নগদ প্রবাহকে একটি বাটার হার দ্বারা বাট্টা করে প্রকল্পগুলোর বর্তমান মূল্য বের করা হয়। যদিও বাটার হার নির্ধারণ করা কঠিন কাজ। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের মূলধন ব্যয়কে বাট্টার হার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ হারের সাথে অবশ্য ঝুঁকি সমন্বয় করতে হয়। তাই বাট্টার হার প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৮. প্রকল্প মূল্যায়ন (evaluation of project): প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য মূলধন বাজেটিং-এ অনেকগুলো পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। প্রকল্প সম্পর্কিত সকল তথ্যাদি সংগ্রহ করে, কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে তা বিবেচনার বিষয়। কেননা ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে, তা প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

সুতরাং উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো মূলধন বাজেটিং-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বিবেচনায় আনতে হবে। কেননা উক্ত বিষয়গুলোর উপরই মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নির্ভর করে থাকে। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: রাসুল, ড. মোঃ সিরাজুর এবং ইসলাম, মোঃ নজরুল, প্রকল্প পরিকল্পনা, (২০১৬/২০১৭), কমার্স পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৯৮ – ৯৯।


মূলধন বাজেটিং


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply