মূলধন বাজেটিং-এর সীমাবদ্ধতা

মূলধন বাজেটিং-এর অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর কতিপয় অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ সকল অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতার কারণে আর্থিক ব্যবস্থাপকগণ অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। নিম্নে মূলধন বাজেটিং এর অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাসমূহ আলোচনা করা হলো:

১। পদ্ধতিগত জটিলতা (systematic complexity): মূলধন বাজেটিং-এর সনাতন পদ্ধতিগুলো বাদে যেসব বাটাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতিগুলো রয়েছে সেগুলোর পদ্ধতি ও ব্যাখ্যা কিছু জটিল বিধায় তা জনসাধারণের নিকট বোধগম্য নয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ জটিল মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও পছন্দ মতো চিরাচরিত পন্থায় কেবল অনুমানের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগে আগ্রহী হন।

২। ঝুঁকিবহুল পরিস্থিতি (risky situation): ঝুঁকিবহুল পরিস্থিতিতে পুরো মূলধন বাজেটিং প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। তাই ঝুঁকির মাত্রার সঠিক প্রাক্কলন না হলে বা এ সম্পর্কিত পর্যাপ্ত অতীত পরিসংখ্যানিক তথ্য না পাওয়া গেলে, সেক্ষেত্রে ঝুঁকির সঠিক সমন্বয় সাধনের অভাবে মূলধন বাজেটিং থেকে আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

৩। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব (lack of adequate information): কোনো বিনিয়োগ প্রকল্প মূল্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাস্তবে এ সকল তথ্য ও উপাত্ত সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না। ফলে কখনও কখনও ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আশংকা থাকে।

৪। তথ্যের নির্ভরযোগ্যতার অভাব (lack of reliability of information): নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ মূলধন বাজেট প্রণয়নের পূর্বশর্ত। অনেক প্রকল্পের প্রাপ্ত তথ্য নির্ভরযোগ্য হয় না। তথ্যের মেয়াদি নির্ভরযোগ্যতার অভাব থাকলে প্রকল্পের নগদ প্রবাহ সঠিকভাবে হলো কি-না তা নির্ণয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

৫। ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয়ের সমস্যা (the problem of risk assessment): অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি পাশাপাশি অবস্থান করে। যেখানে অনিশ্চয়তা সেখানেই ঝুঁকি থেকে যায়। কাজেই কোনো প্রকল্পের সাথে জড়িত ঝুঁকির মাত্রা যথাযথ ও নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা খুবই কঠিন কাজ। আর্থিক ব্যবস্থাপকের ঝুঁকি সংক্রান্ত অনুমান সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। তাই ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয়ে কোনো ভুল হলে প্রকল্প নির্বাচনেও ভুল হবে।

৬। মূলধনের স্বল্পতা (shortage of capital): অনেক সময় দেখা যায় সঠিক মূলধন বাজেট প্রণয়ন করা সত্ত্বেও পূর্ণ প্রাক্কলিত পরিমাণে ও শর্তে মূলধন পাওয়া যায় না। ফলে প্রকল্পটি পরিকল্পিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

৭। মূলধন বাজারের অস্থিতিশীলতা (capital market volatility): মূলধন বাজারের অস্থিতিশীলতার কারণে সুদের হারের যে তারতম্য ঘটে তার ফলে মূলধন বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে।

৮। পর্যায়ক্রমিক মূলধনের অভাব (lack of periodic capital): কোনো একটি বিনিয়োগে প্রকল্প একবার বাস্তবায়ন করলেই মূলধন বাজেটিং-এর কাজ শেষ হয়ে যায় না। বরং প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হওয়া থেকে বিভিন্ন স্তরে এর পরিমার্জন, পরিবর্ধন, সংশোধন অথবা নবায়ন প্রয়োজন।

৯। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব (lack of inflation): মূলধন বাজেটিং-এর ক্ষেত্রে প্রধান অসুবিধা হলো মুদ্রাস্ফিতির কারণে বিনিয়োগকারীদের পূর্বাপেক্ষা বেশি পরিমাণে কর প্রদান করতে হয়। ফলে নীট আন্তঃপ্রবাহ আপেক্ষিকভাবে হ্রাস পায় এবং নীট বর্তমান মূল্যও কমে যায়। আর এতে করে মূলধন বিনিয়োগ সিদ্ধান্তটি পরবর্তীতে ভুল বলে প্রমাণিত হয়।

১০। বিনিয়োগ পরিবেশের অভাব (lack of investment environment): দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

পরিশেষে বলা যায়, বিভিন্ন অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অনেক সময় কার্যকর বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভবপর হয় না। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপক লাভজনকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। [শারমিন জাহান সায়মা]


মূলধন বাজেটিং-এর অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতাসমূহ কী কী?
What are the Limitations of Capital Budgeting?


সহায়িকা: রাসুল, ড. মো: সিরাজুর এবং ইসলাম, মো: নজরুল, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, (২০১৬/১৭), কমার্স পাবলিকেশন্স, ঢাকা।


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply