মেট্রোরেল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ জুড়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে অসংখ্য যাতায়াত ভিত্তিক মেগা প্রকল্প। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত মেট্রোরেলের উদ্বোধন রাজধানী ঢাকার সাধারণ মানুষের যাতায়াত দূর্ভোগ কমাতে মাইলফলক হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ এর ২৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করেন। এবং এটি রাজধানীর উত্তরা (দিয়াবাড়ি) থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ কাজের একটি মেগা প্রকল্প। ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের, যার দৈর্ঘ্য ১১.৭৩ কিলোমিটার।

মেট্রোরেল প্রকল্পের শুরু: প্রায় ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১২ সালে। জাইকার সাথে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর ২০১৩ সালে। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ট্রেনের নকশা প্রণয়ন ও তৈরির কাজ করেছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম।

লাইন-৬: মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পথটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এ পথের দৈর্ঘ্য ২০.১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৬টি স্টেশন রয়েছে।

লাইন-৬ এর দুটি ভাগ: (১) উত্তরা থেকে আগারগাঁও, এবং (২) আগারগাঁও থেকে মতিঝিল। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পথে উত্তরার উত্তর (দিয়াবাড়ি), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর – ১১, মিরপুর – ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও – মোট ৯টি স্টেশন রয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে ৭টি – বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০২৩ সালের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে। ভবিষ্যতে মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। তবে তা সম্পূর্ণ হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

মেট্রোরেলের সুবিধা: মেট্রোরেল চালু হওয়ায় ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে গণপরিবহনে চলাচলে স্বস্তির দরজা খুলেছে। মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে যাত্রীদের জন্য ঢাকা নগর পরিবহণের যাত্রীসেবা সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

প্রযুক্তির চমক: ২০২২ এর ২৮ ডিসেম্বর ঢাকাবাসী অনেক ‘প্রথম’ – এর দেখা পেয়েছেন। মেট্রোরেল হল বাংলাদেশের প্রথম সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত ট্রেন। ট্রেনের চলাচল স্বয়ংক্রিয়। মেট্রোরেলের টিকিট পুরোপুরি কম্পিউটারইজড। প্রতিটি স্টেশনে লিফট, চলন্ত সিঁড়ি, স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায় ব্যবস্থাপনা ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। মেট্রোরেলের ট্রেনে ওঠার একমাত্র পথ স্টেশন ভবন। স্টেশন ভবনগুলো ৩ তলা। স্টেশন ভবনগুলোর তৃতীয় তলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। একমাত্র টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন। এভাবেই মেট্রোরেল রাজধানীর সাধারণ জনগণের জন্য যাতায়ত সুবিধার সাথে সাথে সুস্থ এবং নিরাপত্তা ভিত্তিক যানবাহন এর ভূমিকা রাখছে।

একনজরে মেট্রোরেল সম্পর্কে জেনে নেই:
• মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পথটি লাইন – ৬ নামে পরিচিত।
• মেট্রোরেলের পথের মোট দৈর্ঘ্য ২০.১০ কিলোমিটার।
• মেট্রোরেলের মোট স্টেশন সংখ্যা ১৬ টি।
• মেট্রোরেলের লাইন-৬ এর দুটি ভাগ: (১) উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং (২) আগারগাঁও থেকে মতিঝিল।
• ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে উদ্বোধন করা হয় মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের, যার দৈর্ঘ্য ১১. ৭৩ কিলোমিটার।
• মেট্রোরেলের প্রকল্প ব্যয় ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
• মেট্রোরেলের প্রকল্প অর্থায়ন করেছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা (JICA)।
• মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। [ইশরাত জাহান মিম]


বাংলাদেশের মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply