যতি চিহ্নের লিখন কৌশল

বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বােঝার জন্য বাক্যের মধ্যে কিংবা বাক্যের সমাপ্তিতে যে ভাবে বিরতি দেয়া হয় এবং লেখার সময় বাক্যের মধ্যে তা দেখানাের জন্য যে সব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, সে সব সাংকেতিক চিহ্নকে যতি বা ছেদ চিহ্ন বলা হয়। অর্থাৎ বাক্যে আবেগ (হর্ষ, বিষাদ), জিজ্ঞাসা, বিবৃতি ইত্যাদি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে বাক্য গঠনে সাংকেতিক চিহ্ন ব‌্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রকার যতি চিহ্নের বা ছেদ চিহ্নের নাম, আকৃতি এবং তাদের বিরতি কালের পরিমাণ নিম্নে নির্দেশিত হল:

যতি চিহ্নের নাম আকৃতি/সাংকেতিক চিহ্ন  বিরতি-কাল-পরিমাণ
কমা , ১ (এক) বলতে যে সময় প্রয়ােজন
সেমিকোলন ;  ১ বলার দ্বিগুণ সময়
দাড়ি (পূর্ণচ্ছেদ) এক সেকেন্ড
বিস্ময় ও সম্বােধন চিহ্ন ! এক সেকেন্ড
কোলন  : এক সেকেন্ড
ড্যাস  – এক সেকেন্ড
কোলন ড্যাস  : – এক সেকেন্ড
হাইফেন  – থামার প্রয়ােজন নেই
ইলেক বা লােপ চিহ্ন থামার প্রয়ােজন নেই
উদ্ধরণ চিহ্ন  “ক” এক উচ্চারণে যে সময় লাগে
 ব্র্যাকেট (বন্ধনী-চিহ্ন) ( ) থামার প্রয়ােজন নেই
  { } থামার প্রয়ােজন নেই
  [ ] থামার প্রয়ােজন নেই

যতি চিহ্নের ব্যবহার

ক) কমা {(পাদচ্ছেদ (,)} ব‌্যবহার:

ক.১. বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ-বিভাগ দেখানাের জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়ােজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন –

ধনী হতে চাও, পরিশ্রম কর।

ক.২. পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ এক সাথে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি সবগুলাের পরই কমা বসবে। যেমন-

সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য একই মালিকার পুষ্প।

ক.৩. সম্বােধনের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন-

রতন, এদিকে যাও। ভাই, কোথায় যান?

ক.৪. জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খণ্ড বাক্যের পরে কমা বসবে। যেমন-

তুমি যে বিদ‌্যালয়ে যাও, আমি সে  বিদ‌্যালয়ে পড়াশুনা করতে চাই।

ক.৫. উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে (খণ্ডবাক্যের শেষে) কমা বসাতে হবে। যেমন-

সুমী বলল, “আমি বিদ‌্যালয়ে যাব।”

ক.৬. মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর ‘কমা’ বসবে। যেমন-

১৫ই পৌষ, বুধবার, ১৩৯৯ সন। ১২ সেপ্টেম্বর, শনিবার, ২০২০ সাল।

ক.৭. বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে কমা বসবে। যেমন-

৭০, নবাবপুর রােড, ঢাকা-১০০০।

ক.৮. নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযােজিত হলে সেগুলাের প্রত্যেকটির পরে কমা বসবে। যেমন—

ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম.এ. পি-এইচ.ডি।

খ) সেমিকোলন (;) ব‌্যবহার:

কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়ােজন হলে, সেমিকোলন বসে। যেমন –

সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; এ মায়ার বাঁধন কি সত্যিই দুচ্ছেদ্য?

গ) দাড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।) ব‌্যবহার:

বাক্যের পরিসমাপ্তি বােঝাতে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়। যেমন –

গ্রীষ্মকালে এ দেশে আবহাওয়া গরম থাকে।

ঘ) প্রশ্নবােধক চিহ্ন (?) ব‌্যবহার:

বাক্যে কোন কিছু জিজ্ঞেস করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবােধক চিহ্ন বসে। যেমন—

তুমি কখন এলে? সে কি আসবে?

ঙ) বিস্ময় ও সম্বােধন চিহ্ন (!) ব‌্যবহার:

হৃদয় আবেগ প্রকাশ করতে হলে সম্বােধন পদের পরে (!) চিহ্নটি বসে। যেমন-

আহা! কী চমৎকার দৃশ্য।

জননী! আজ্ঞা দেহ মােরে যাই রণস্থলে।

কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বােধন স্থলে কমা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

চ) কোলন (:) ব‌্যবহার:

একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে হলে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন –

সভায় সাব্যস্ত হল : এক মাস পরে নতুন সভাপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ছ) ড্যাস চিহ্ন (-) ব‌্যবহার:

যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযােগ বােঝাতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন –

তােমরা দরিদ্রের উপকার কর- এতে তােমাদের সম্মান যাবে না-বাড়বে।

জ) কোলন ড্যাস (-) ব‌্যবহার:

উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়ােগ করতে হলে কোলন এবং ড্যাস চিহ্ন একই সাথে ব্যবহার করা হয়। যেমন –

পদ পাঁচ প্রকার :- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া।

ঝ) হাইফেন বা সংযােগ চিহ্ন (-) ব‌্যবহার:

সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলাে বিচ্ছিন্ন করে দেখানাের জন্য হাইফেন ব্যবহার করা হয়। যেমন –

এ আমাদের শ্রদ্ধা-অভিনন্দন, আমাদের প্রীতি-উপহার।

ঞ) ইলেক (‘) বা লােপ চিহ্ন ব‌্যবহার:

কোনা বর্ণ বিশেষের লােপ বােঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্য (‘) লােপচিহ্ন দেওয়া হয়। যেমন –

মাথার ‘পরে জ্বলছে রবি [এখানে, পরে = ওপরে]

পাগড়ি বাঁধা যাচ্ছে কা’রা? [এখানে, কা’রা=কাহারা]

ট) উদ্ধরণ চিহ্ন (“ ”) ব‌্যবহার:

বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে উদ্ধরণ চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যেমন –

সুমী বলল, “আমি বিদ‌্যালয়ে যাব।”

ঠ) ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন ( ), {}, [] ব‌্যবহার:

এ তিনটি চিহ্নই গণিত শাস্ত্রে ব্যবহার করা হয়। তবে প্রথম বন্ধনীটি ( ) বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন –

ত্রিপুরায় (বর্তমানে কুমিল্লা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

ব্যাকরণিক চিহ্নের ব‌্যবহার:

ব্যাকরণে নিম্নলিখিত চিহ্নগুলাে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়।

(ক) ধাতু বােঝাতে (√) চিহ্ন : √স্থা = ধাতু।

(খ) পরবর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বােঝাতে (<) চিহ্ন: জাঁদরেল < জেনারেল।

(গ) পূর্ববর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বােঝাতে (>) চিহ্ন: গঙ্গা > গাঙ।

(ঘ) সমানবাচক বা সমস্তবাচক বােঝাতে সমান (=) চিহ্ন : নর ও নারী = নরনারী। [সংকলিত]


সহায়িকা: বাংলা ভাষার ব‌্যাকরণ, নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ‌্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ।


যতি চিহ্ন কয়টি ও কি কি


 Follow Us on Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply