রপ্তানি ভর্তুকি কী?

ভর্তুকি (subsidy): আমরা জানি, কোন কিছুর মূল্য নির্ধারণ করার পরে যদি সে মূল্যের সম্পূর্ণ অংশ আদায় না হয়, তাহলে যে অংশটুকু অনাদায়ী থাকে, সে অংশটুকু নিজ থেকে পরিশোধ করাকে সাধারণত ভর্তুকি (subsidy) বলা হয়। অর্থাৎ কোন পণ্য বা দ্রব্যের যে মূল্য নির্ধারিত হলো, জনগণের কাছ থেকে তার চেয়ে কম মূল্য পাওয়া গেলো বা দেওয়া হলো। যে মূল্যটুকু কম পাওয়া গেলো বা দেওয়া হলো, সে মূল্যটুকু সাধারণত যে কোনো দেশের সরকারের পক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা প্রশাসন বা দপ্তর বহন বা পরিশোধ করে, আর এ ধরনের মূল্য বহন বা পরিশোধই হলো ভর্তুকি (subsidy)। উদাহরণস্বরূপ –

বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা, প্রভৃতি খরচ হিসাব করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্য নির্ধারিত হলো ৩০টাকা। জনগণের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয় মূল্যের সম্পূর্ণ মূল্য আদায় না করে ১৫ টাকা আদায় করে, তাহলে ১৫টাকা অনাদায়ী থাকে। যে কোনো দেশের সরকার নিজে বা সরকারের পক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা প্রশাসন বা দপ্তর এ অনাদায়ী মূল্য বহন বা পরিশোধ করে, আর এ মূল্য বহন বা পরিশোধই হলো এ খাতের ভর্তুকি (subsidy)।

রপ্তানি ভর্তুকি (export subsidy): সাধারণত রপ্তানির উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সহায়তাকে রপ্তানি ভর্তুকি (export subsidy) বলা হয়। কয়েক ধরনের রপ্তানি কর্ম সক্ষমতা অর্জনের জন্য কতিপয় ফার্ম, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নির্দিষ্ট কৃষি পণ্যের উৎপাদক, প্রভৃতিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থ প্রদান রপ্তানি ভর্তুকির অন্তর্ভুক্ত। রপ্তানি ভর্তুকির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো বিদেশি ব্যয়কে দেশীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে স্থানান্তর করে রপ্তানি বাড়ানো। সে উদ্দেশ্য সফল হতে পারে, যদি ভর্তুকি প্রদত্ত রপ্তানি দ্রব্যের জন্য বিদেশিরা যে দাম দেয়, সে দামকে কমানো যায়।

রপ্তানি ভর্তুকির প্রকারভেদ: রপ্তানি ভর্তুকি সাধারণত দুই প্রকার। এগুলো হলো:
১. প্রত্যক্ষ রপ্তানি ভর্তুকি (overt export subsidy) এবং
২. পরোক্ষ রপ্তানি ভর্তুকি (covert export subsidy)।

১। প্রত্যক্ষ রপ্তানি ভর্তুকি (overt export subsidy): সরকার কর্তৃক সরাসরি রপ্তানিকারী বা কোনো ফার্ম, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নির্দিষ্ট কৃষি পণ্যের উৎপাদক, প্রভৃতিকে প্রদত্ত ভর্তুকিকে প্রত্যক্ষ রপ্তানি ভর্তুকি (overt export subsidy) বলে। রপ্তানি মূল্যে বা রপ্তানির পরিমাণের প্রত্যক্ষ অনুপাতের ভিত্তিতে এ ভর্তুকি প্রদান করা হয়।

২। পরোক্ষ রপ্তানি ভর্তুকি (covert export subsidy): সরকার কর্তৃক পরোক্ষভাবে রপ্তানিকারী বা কোনো ফার্ম, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নির্দিষ্ট কৃষি পণ্যের উৎপাদক, প্রভৃতিকে প্রদত্ত আর্থিক সাহায্যকে পরোক্ষ রপ্তানি ভর্তুকি (covert export subsidy) বলা হয়। যেমন- সরকার কর্তৃক জাহাজ সেবা বাবদ সুবিধা প্রদান করে বা ঋণের শর্তকে সহজ করে এ ধরনের ভর্তুকি নীতি পরিচালিত হতে পারে।

রপ্তানি ভর্তুকির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চুক্তির বরখেলাপ হয়। GATT এর তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানি ভর্তুকি হলো একটি অশুভ প্রতিযোগিতা, যেখানে একটি দেশ প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অপর দেশের দিকে শুল্ক আরোপ করতে পারে। GATT-এর মতে, রপ্তানি ভর্তুকির বিষয়টি যথেষ্ট স্পর্শকাতর, যা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্যে অসুবিধাজনক। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়ক গ্রন্থ: আলী, মোঃ সাহেব, জুলাই-২০১৯, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পৃষ্ঠা ২১৫।


রপ্তানি ভর্তুকি কাকে বলে?


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply