শ্বাসনালি-সংক্রান্ত রোগ: অ্যাজমা (Asthma) বা হাঁপানি
শ্বাসনালি-সংক্রান্ত রোগ: অ্যাজমা
ফুসফুস শ্বাসনতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে অনেক সময় এ অঙ্গটি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বায়ুদূষণ এবং বিভিন্ন প্রকার ভাসমান কণা এবং রাসায়নিকের প্রভাবেও ফুসফুস অসুস্থ হতে পারে। অনেক সময় অজ্ঞতা ও অসাবধানতার কারণে ফুসফুসে নানা জটিল রোগ দেখা দেয় এবং সংক্রমণ ঘটে। ফুসফুসের সাধারণ রোগগুলোর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও সাবধানতাগুলো জানা থাকলে অনেক জটিল সমস্যা এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও অনেকাংশ কমানো যায়। নিচে অ্যাজমা (asthma) বা হাঁপানি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
অ্যাজমা সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোনো একটি বহিঃস্থ পদার্থ ফুসফুসে প্রবেশ করলে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করতে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যেটুকু প্রতিক্রিয়া দেখানোর কথা, তার চেয়ে অনেক তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া ঘটলে অ্যাজমা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই অ্যাজমা আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তির বংশে হাঁপানি বা অ্যালার্জির ইতিহাস থাকে। এটি ছোঁয়াচে নয়, জীবাণুবাহিত রোগও নয়।

অ্যাজমার কারণ:
যে সব খাবার খেলে এলার্জি হয় (চিংড়ি, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, ইত্যাদি), বায়ুর সাথে ধোঁয়া, ধূলাবালি, ফুলের রেণু, ইত্যাদি শ্বাস গ্রহণের সময় ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত সর্দি কাশি থেকে হাঁপানি হওয়ার আশংকা থাকে। বছরের বিশেষ ঋতুতে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেড়ে যেতে পারে।
অ্যাজমার লক্ষণ:
সাধারণত অ্যাজমা (asthma) বা হাঁপানির নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা যায়।
১। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
২। শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়, ঠোঁট নীল হয়ে যায়, এবং গলার শিরা ফুলে যায়।
৩। রোগী জোরে জোরে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে, এ সময় বুকের ভিতর সাঁই সাঁই আওয়াজ হয়।
৪। ফুসফুসের বায়ুথলিতে ঠিক মতো অক্সিজেন সরবরাহ হয় না বা বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে রোগীর বেশি কষ্ট হয়।
৫। কাশির সাথে কখনও কখনও সাদা কফ বের হয়।
৬। সাধারণত শরীরে জ্বর থাকে না।
৭। শ্বাস নেয়ার সময় রোগীর পাঁজরের মাঝে চামড়া ভিতরের দিকে ঢুকে যায়।
৮। রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।
অ্যাজমার প্রতিকার:
সাধারণত অ্যাজমা (asthma) বা হাঁপানির ক্ষেত্রে নিম্নের প্রতিকারগুলো গ্রহণ করা যায়।
১। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করা।
২। বায়ুদূষণ, বাসস্থান বা কর্মক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, এমন সব বস্তুর সংস্পর্শ পরিহার করা।
৩। হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট লাঘবের জন্য সবসময় সাথে ঔষধ রাখা ও প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা।
এখানে লক্ষণীয় যে হাতুড়ে চিকিৎসকেগণ অনেক সময় উচ্চমাত্রায় ক্ষতিক্ষারক স্টেরয়েড দিয়ে এর চিকিৎসা করে থাকে, এটি উচ্চমাত্রায় প্রয়োগ করলে রোগীর কষ্ট তাৎক্ষণিকভাবে উপশম হলেও দীর্ঘমেয়াদি এবং অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। তাই এ ধরনের চিকিৎসা বা চিকিৎসক থেকে দূরে থাকতে হবে। [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা: জীববিজ্ঞান (নবম-দশম), পাঠ্য বই, পৃষ্ঠা ১৬৯, ১৭০, ১৭১।
Follow Us in Our YouTube channel: GEONATCUL