সংরক্ষণ বাণিজ্য কী
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অবাধ ও নিরপেক্ষ না হলে এরূপ বাণিজ্যকে সংরক্ষণ বাণিজ্য বলা হয়। সরকার যখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে তখন সংরক্ষণ বাণিজ্যের উদ্ভব ঘটে। মূলত দেশীয় দ্রব্য উৎপাদনের জন্য অর্থাৎ বিদেশী প্রতিযোগিতার হাত থেকে দেশীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকার কর্তৃক বিধি নিষেধ আরোপ করা হলে এরূপ সম্পর্কযুক্ত বাণিজ্য নীতিকে সংরক্ষণ বা সংরক্ষণ নীতি বলা হয়।
সংরক্ষণ হলো দেশীয় শিল্পের রক্ষাকবচ। সরকার নানাভাবে দেশীয় শিল্প তথা বাণিজ্য সংরক্ষণ করতে পারে। যেমন: বিদেশী দ্রব্যের আমদানির উপর শুল্ক ধার্য, অর্থ সাহায্য বা ভর্তুকি প্রদান, আমদানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। বৈদেশিক প্রতিযোগিতার হাত থেকে দেশীয় শিল্প রক্ষা এবং লেনদেন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এসব ব্যবস্থার যে কোনো একটি সাহায্য গ্রহণ করা হলে তাকে সংরক্ষণ বাণিজ্য বলা হয়। তবে সাধারণভাবে যে কোনো ব্যবস্থা দ্বারা আমদানি বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হোক না কেন, তাকে সংরক্ষণ বাণিজ্য বলা হয়।
অর্থাৎ সরকারিভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করা হলে তাকে সংরক্ষণ বাণিজ্য বলে। সরকার রপ্তানিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রপ্তানি দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পে ভর্তুকি, কর হার হ্রাস ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এরূপ বাণিজ্যকে সংরক্ষণ বলে অভিহিত করা হয়।
অধ্যাপক জনসনের মতে, “Protection refers to those policies that create a divergence between the relative prices of commodities to domestic consumers and producers and their relative prices in the world markets.” (অর্থাৎ সংরক্ষণ বলতে সেই নীতিগুলিকে বুঝায়, যেগুলো দেশীয় ভোক্তা এবং উৎপাদকদের কাছে পণ্যের আপেক্ষিক মূল্য এবং বিশ্ব বাজারে তাদের আপেক্ষিক মূল্যের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে।)
অবশ্য কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ আমদানি শুল্ক, কোটা, বিনিময় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও প্রশাসনিক সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন: আমদানি বন্ধ করা বা এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আমদানি পদ্ধতি ব্যয়বহুল করা ইত্যাদি বিষয়কে সংরক্ষণ বাণিজ্যের অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
অধ্যাপক ব্রনফেনব্রেনার-এর মতে, “Protection include wide variety of aides to country’s import competing goods and to its exports. It extends well beyond the traditional import tariffs and quotas to a wide range of boundaries, tax preferences and types of administrative protection.”
(অর্থাৎ সংরক্ষণের মধ্যে রয়েছে দেশের আমদানী প্রতিযোগী পণ্য এবং এর রপ্তানিতে বিভিন্ন ধরনের সহায়ক। এটি প্রথাগত আমদানি শুল্ক এবং কোটা ছাড়িয়ে বিস্তৃত সীমানা, কর পছন্দসমূহ এবং প্রশাসনিক সুরক্ষার ধরন পর্যন্ত প্রসারিত করে।) [শারমিন জাহান সায়মা]
সহায়িকা: জোয়ারদার, সুকেশ চন্দ্র; আলম, মোঃ শাহ; আখতার, সুফিয়া ও ইসলাম, মোঃ নজরুল, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, (২০২০), মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১১৫ – ১১৬।
সংরক্ষণ বাণিজ্য কাকে বলে?
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL