সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা | Social Economic System
সমাজ একটি শাশ্বত ও সার্বজনীন মানব সংগঠন। নদীর প্রবাহমান স্রোতের মতোই সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনশীল সমাজের মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন। এখানে সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরার হলো:
সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা: বিশ্বের প্রতিটি দেশেই, প্রতিটি সমাজেরই রয়েছে একটি নিজস্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সমাজের এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে সম্পত্তির মালিকানা, উৎপাদন, বন্টন, ভোগ, সঞ্চয়, লগ্নি, ইত্যাদি বিষয়। অনুরূপভাবে প্রতিটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পিছনে রয়েছে এক বা একাধিক রাজনৈতিক দর্শন। এ রাজনৈতিক দর্শনগুলো অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নীতিনির্ধারক এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলি সে দেশের প্রতিষ্ঠানগত ও আইনগত কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানগত ও আইনগত কাঠামোকে বলা হয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রধানত ৪ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা অর্থব্যবস্থা চালু রয়েছে। এগুলো হলো –
১. পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
২. সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
৩. মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও
৪. ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।
১. ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (economic system of capitalism): ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি এমন অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদনের উপকরণগুলোর ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা বজায় থাকে এবং সমাজের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেসরকারি পর্যায়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংঘটিত হয়। এ ব্যবস্থায় মূল প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে অবাধে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন এবং ভোগকার্য চলে। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ক্রেতা ও ভোক্তার পূর্ণ স্বাধীনতা বজায় থাকে এবং ভোগকারীর ইচ্ছা ও রুচি অনুযায়ী উৎপাদন করা হয়। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নির্ধারিত হয়। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন, বন্টন, ভোগ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে না, বরং একটি স্বয়ংক্রিয় মূল্য ব্যবস্থার মাধ্যমেই সবকিছু নির্ধারিত হয়। এ জন্য ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে ‘স্বাধীন উদ্যোগের অর্থনীতি’ও বলা হয়।
২. সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (economic system of socialism): সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদনের উপকরণের ওপর কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না। দেশের যাবতীয় সম্পদ এবং উৎপাদনের উপকরণের ওপর সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে দেশের কারখানা, খনি, জমি প্রভৃতি সামাজিক সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়। দেশের জনগণ বা রাষ্ট্র এসব সম্পদের মালিক। এর লক্ষ্য হলো সমাজের কল্যাণ সাধন করা। সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মুনাফার কোনো সুযোগ নেই। দেশের উৎপাদন, বন্টন, বিনিময়, ভোগ প্রভৃতি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। এজন্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও বলা হয়।
৩. মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (mixed economic system): মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো এমন এক ধরনের অর্থব্যবস্থা, যেখানে সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা উভয়ই স্বীকৃত হয়ে থাকে। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সয়কারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ অবস্থান করে। এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংমিশ্রণ ঘটে। এ অর্থব্যবস্থায় সম্পওির ব্যক্তিগত মালিকানা, মুনাফা অর্জন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাধীনতা থাকে। জনকল্যাণ ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কিছু খাত রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে এবং অন্যান্য উৎপাদন ও সেবাখাতগুলো ব্যক্তি মালিকানায় থাকে। বিশ্বের বহু দেশেই গ্যাস, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষা শিল্প রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখেছে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কিছু বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণে যে স্বতন্ত্র একটি অর্থব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাকে মিশ্র অর্থনীতি বলে।
৪. ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (islamic economic system): ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হলো এমন একটি অর্থনীতি, যার মৌলিক বিধান, নীতিমালা এবং কর্মপদ্ধতি ইসলামি শরিয়তের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামি জীবনবোধ থেকেই ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উৎপত্তি। ইসলাম মানবজাতির জন্য একটি শাশ্বত ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আর ইসলামি অর্থনীতি এ পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থারই একটি অংশ। [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা: সরকার, ড. মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, সমাজ বিজ্ঞান, লেকচার পাবলিকেশন্স লি., ঢাকা, পৃ: ৩১৫ – ৩১৭।
সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা কি কি?
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL