সমাস কী? সমাস কাকে বলে উদাহরণসহ বিস্তারিত আলোচনা
সমাস হচ্ছে বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক যা অনেক শিক্ষার্থী মনোযোগ দিয়ে না পড়ার কারণে পড়তে ভয় পায়। ক্লাস ৬ থেকে ক্লাস ১০ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ক্লাসেই সমাস টপিকটি আছে। আজকের এই ব্লগে সমাস কী, সমাস কাকে বলে উদাহরণসহ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
সমাস কী?
সমাস হচ্ছে বাংলা ব্যাকরণের একটি অংশ। একটি বাক্যে শব্দের ব্যবহারকে সংক্ষিপ্ত করার উদ্দেশ্যে সমাসের সৃষ্টি হয়েছে। দুইটি বা তার অধিক শব্দের সমন্বয় ঘরে নতুন অর্থবোধক একটি পদের সৃষ্টি হয়, এটিই হচ্ছে সমাস। সংস্কৃত ভাষা থেকে সমাসের রীতি এসেছে। সমাস ব্যবহার করার কারণে বাংলা ভাষায় অনেক অর্থবোধক পদ দেখতে পাই আমরা।
সমাস কাকে বলে?
সমাস হলো দুই বা ততোধিক শব্দের মিলন যা একটি নতুন শব্দ তৈরি করে। এই নতুন শব্দে মূল শব্দগুলোর অর্থের মধ্যে স্পষ্ট সম্পর্ক থাকে। সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা যায়, দুই বা ততোধিক শব্দের মিলন হওয়ার ফলে নতুন অর্থবোধক যে পদের সৃষ্টি হয়, তাকে সমাস বলে। যেমন একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে।
উদাহরণ – তুষারের মতো ধবল = তুষার ধবল। এখানে দুইয়ের অধিক অর্থাৎ মোট তিনটি শব্দ মিলে একটি নতুন এবং অর্থবোধক পদের সৃষ্টি হয়েছে। এটি হচ্ছে সমাস। অর্থাৎ, এখানে “তুষার ধবল” হচ্ছে সমাস।
“তুষারের মতো ধবল” শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করে সাদা রঙের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু “সাদা” শব্দটি ব্যবহার করলে স্পষ্টতা আসে না যে কিসের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, “তুষার” শব্দটি “ধবল” শব্দের সাথে যুক্ত করে “তুষার-ধবল” নতুন শব্দ তৈরি করা যেতে পারে। এটি “তুষারের মতো ধবল” শব্দগুচ্ছের অর্থ বজায় রাখে এবং আরও শক্তিশালী ভাব প্রকাশ করে।
এই প্রক্রিয়াটি “সমাস” নামে পরিচিত, যেখানে দুটি বা ততোধিক শব্দ একত্রিত করে একটি নতুন শব্দ তৈরি করা হয়। এই নতুন শব্দটি মূল শব্দগুচ্ছের অর্থ বহন করে এবং বাক্যকে আরও সুসংহত করে তোলে।
সমাসের প্রকারভেদ
সমাস মোট ০৬ প্রকার। এগুলো হচ্ছে — দ্বন্দ্ব সমাস, দ্বিগু সমাস, কর্মধারয় সমাস, তৎপুরুষ সমাস, বহুব্রীহি সমাস এবং অব্যয়ীভাব সমাস। এই ০৬টি প্রকারভেদ নিয়ে নিম্নে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
- দ্বন্দ্ব সমাস: দুটি সমার্থক, বিপরীতার্থক বা সম্পর্কিত শব্দের মিলনে দ্বন্দ্ব সমাস হয়। যেমন: দিন-রাত, রাম-লক্ষ্মণ, মা-বাবা।
- দ্বিগু সমাস: একই শব্দের পুনরাবৃত্তি বা সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে বিশেষ্যের মিলনে দ্বিগু সমাস হয়। যেমন: দুই-দুই, তিন-চার, পাঁচ-ছয়।
- কর্মধারয় সমাস: বিশেষণ বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের মিলনে কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন: নীলকমল, সুন্দরী, দীর্ঘজীবী।
- তৎপুরুষ সমাস: বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয়, সংখ্যাবাচক বা ক্রিয়াপদের সাথে বিশেষ্যের মিলনে তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: রামের বাড়ি, সুন্দর ফুল, নীল আকাশ।
- বহুব্রীহি সমাস: যৌগিক শব্দের অর্থ পূর্ণাঙ্গ বাক্যের মতো প্রকাশ করে এমন সমাসকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: নীলাঞ্জন, ষড়ানন।
- অব্যয়ীভাব সমাস: অব্যয় পদের সাথে বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়া, অব্যয় বা সংখ্যাবাচকের মিলনে অব্যয়ীভাব সমাস হয়। যেমন: সহজে, দ্রুত, অল্পক্ষণে।
শব্দ গঠনে সমাসের গুরুত্ব
বাংলা ভাষার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল সমাস। দুই বা ততোধিক শব্দের মিলনে নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরির প্রক্রিয়াটি শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ করে এবং ভাষাকে করে তোলে আরও সাবলীল ও সংক্ষিপ্ত। নিচে শব্দ গঠনে সমাসের গুরুত্ব সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
- সমাসের মাধ্যমে বাক্যে প্রয়োজনীয় শব্দের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। ফলে বাক্য গঠন সহজ হয় এবং লেখা বা বলা দ্রুততর হয়।
- সমাস ব্যবহার করে বাক্যকে আরও সাবলীল ও সুন্দর করে তোলা যায়।
- সমাসের মাধ্যমে শব্দের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট করে তোলা হয় এবং বাক্যের অর্থ আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
- সমাস ভাষায় বৈচিত্র্য আনে এবং লেখার ধরনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
- সমাসের মাধ্যমে বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে রাখা সম্ভব।
উদাহরণ:
- রাজা + কুমার = রাজকুমার (শব্দ সংখ্যা হ্রাস)
- সোনা + রুপা = সোনারুপা (ভাষার সাবলীলতা)
- গাছ + তলা = গাছতলা (অর্থের স্পষ্টতা)
- নীল + পদ্ম = নীলপদ্ম (ভাষার বৈচিত্র্য)
- মা + বাবা = মা-বাবা (সংস্কৃতি ধারণ)
শব্দ গঠনে সমাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ভাষাকে করে তোলে আরও সমৃদ্ধ, সাবলীল ও সুন্দর। সমাসের ব্যবহার বাংলা ভাষার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সমাসের প্রয়োজনীয়তা
নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে সমাস ভাষার শব্দের ঐশ্বর্য বৃদ্ধি করে ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সাহিত্য নির্মাণের ক্ষেত্রে এবং পরিভাষা সৃষ্টিতে সমাস বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। তাই বাংলা ভাষায় সমাসের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলা ভাষার শব্দসম্ভার সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য্যের জন্য সমাস অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। [ফারহান ইশরাক]