সুদ কি, কত প্রকার ও কি কি?

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অপর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যে টাকা ধার নিয়ে থাকে তার জন্য তাকে যে দাম দিতে হয়, সাধারণ অর্থে তাই হলো সুদ (interest)। অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা ঋণের জন্য ঋণদাতাকে যে দাম দেয় তাকে সুদ বলে। যেমন – কোনো ব্যক্তি ১০০০ টাকা ধার নিয়ে এক বছর পরে ১২০০ টাকা ফেরৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। সুতরাং এক্ষেত্রে বাৎসরিক সুদের হার হবে শতকরা ২০ টাকা। ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট সময়ের পর ঋণদাতাকে আসল অর্থ ছাড়াও যে অতিরিক্ত অর্থ দেয় তাই হলো সুদ।

তবে অর্থনীতির পরিভাষায় সুদ হলো অর্থ বা সম্পদ ধার নেয়ার জন্য প্রদান করা ‘ভাড়া’। ঋণদাতা ঋণপ্রদানের জন্য এই সুদ ধার্য করে থাকে। মূলত যে পরিমাণ অর্থ ধার দেয়া হয়েছে, তাকে বলা হয় মূল, এবং এই মূল এর যত অংশ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদ হিসেবে প্রদান করতে হয়, তাকে সুদের হার বলে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ সুদ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। যেমন –

১. অধ্যাপক Senior এর মতে, ‘সুদ হলো বর্তমান ভোগ বিরতির পুরস্কার।’
২. অধ্যাপক Marshall এর মতে, ‘সুদ হলো ভবিষ্যৎ ভোগের জন্য প্রতীক্ষার পুরষ্কার।’
৩. Robertson বলেন, ‘ঋণযোগ্য তহবিল ব্যবহারের দাম হলো সুদ।’
৪. Keynes এর মতে, ‘কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নগদ টাকা পরিত্যাগ করার জন্য যে পুরস্কার পাওয়া যায়, তা হলো সুদ।’
অতএব বলা যায়, পুঁজি ব্যবহারের জন্য ঋণগ্রহীতা পুঁজির মালিককে নির্দিষ্ট সময়ান্তে যে অর্থ প্রদান করে তাই হলো সুদ। পুঁজির উৎপাদনশীলতা আছে বলেই পুঁজির মালিক সুদ লাভ করে।

সুদের প্রকারভেদ:

সুদ প্রধানত দুই প্রকার। যথা:
ক. মোট সুদ (gross interest); এবং
খ. নীট সুদ (net interest)। নিচে এদের বর্ণনা প্রদান করা হলোঃ

(ক) মোট সুদ (gross interest): ঋণদাতা আসলের অতিরিক্ত যে অর্থ পায়, তাকে মোট সুদ। এই মোট সুদের মধ্যে শুধু ঋণ-মূলধন ব্যবহারের জন্য দেয়া অর্থ ছাড়াও আরও কতগুলো বিষয়যুক্ত হয়ে পড়ে। মোট সুদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত অন্যান্য বিষয়গুলো হলো ঝুঁকি গ্রহণের জন্য অর্থ, ঋণের হিসাব রাখার খরচ, ঋণ প্রদান ও গ্রহণ ব্যবস্থাপনার খরচ এবং ঋণ-মূলধন ব্যবহারের জন্য অর্থ ইত্যাদি। সুতরাং ঋণ গ্রহীতা মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার, ঋণ ব্যবস্থাপনা আদায় ও অন্যান্য অসুবিধা এবং ঝুঁকি বহনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ান্তে ঋণদাতাকে আসলের অতিরিক্ত মোট যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করে তাকে মোট সুদ বলে।

(খ) নীট সুদ (net interest): শুধু মূলধনের উৎপাদনশীলতা ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময়াস্তে মূলধনের মালিককে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাকে নীট সুদ বলে। অর্থাৎ মোট সুদ থেকে ঋণ ব্যবস্থাপনার পারিশ্রমিক, ঋণ আদায়ের খরচ এবং ঋণের ঝুঁকি বহনের মূল্য, প্রভৃতি বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে নীট সুদ বলে। অর্থনীতিতে সুদ বলতে মূলত নীট সুদকেই বোঝানো হয়। ধরা যাক, কোন ঋণদাতা ১০০০ টাকা ধার দিয়ে এক বছর পর ঋণগ্রহীতার নিকট হতে ঋণের সুদ বাবদ ১০০ টাকা লাভ করল । এই ১০০ টাকা হলো মোট সুদ। এই ১০০ টাকা সুদের মধ্যে মূলধন ব্যবহারের জন্য ৫০ টাকা এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় অর্থাৎ ঝুঁকি বহনের জন্য ২৫ টাকা, ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য ১৫ টাকা এবং ঋণ আদায়ের অন্যান্য অসুবিধার জন্য ১০ টাকা পাওয়া গেলো। সুতরাং, নীট সুদ = মোট সুদ – আনুষঙ্গিক ব্যয় = ১০০ – (২৫ + ১৫ + ১০) = ৫০ টাকা। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: ইসলাম, ড. নুর; খায়ের, আবুল; ২০২২; ব্যষ্টিক অর্থনীতি; ঢাকা: দি ইউনাইটেড পাবলিশার্স; পৃষ্ঠা ৫৪১ – ৫৪২।


Follow Us in Our Youtube Channel: GEONATCUL


Leave a Reply