স্ট্রোক: এর লক্ষণ, নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায়

মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার কারণে স্নায়ুতন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত গঠলে তাকে স্ট্রোক (stroke) বলে। সাধারণত স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কিংবা রক্তনালির ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়াএই দুইভাবে স্ট্রোক হতে পারে। এর মধ্যে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বেশি মারাত্মক। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হতে পারে।

স্ট্রোক: এর লক্ষণ, নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায়
(১) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (rupture) এবং (২) রক্তনালির ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া (blockage)।
সূত্র: med.uth.edu

স্ট্রোকের লক্ষণ: স্ট্রোকের লক্ষণ হঠাৎ করেই প্রকাশ পায়। এ রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো: বমি হওয়া, প্রচন্ড মাথাব্যথা হওয়া, কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগী সংজ্ঞা হারায়, ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে, মাংসপেশি শিথিল হয়ে যায়, শ্বাস ও নাড়ির স্পন্দন কমে যায়, মুখমণ্ডল লাল বর্ণ ধারণ করে, প্রভৃতি। অনেক সময় খুব মারাত্মক উপসর্গ ছাড়াই মুখ বেঁকে যাওয়া কিংবা অল্প সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়ে আবার জ্ঞান ফিরে আসা – স্ট্রোকের এ জাতীয় লক্ষণ দেখা যায়।

স্ট্রোক কতটা মারাত্মক তা বলতে হলে অন্তত কয়েক দিন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন, সে সময়ে তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখতে হয়। তাই, স্ট্রোক হলে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হবে এবং যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। উপযুক্ত চিকিৎসা করা হলে রোগী অনেক সময় বেঁচে যায়। তবে যদি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হয়, তাহলে বাঁচার নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। রোগী যদি বেঁচে যায়, তাহলে কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর সে তার সংজ্ঞা ফিরে পায়। তবে রোগী কিছুটা ছটফট করে এবং আস্তে আস্তে অসাড় হয়ে যাওয়া থেকে অঙ্গে দৃঢ়তা ফিরে আসে।

জ্ঞান ফিরে এলেও বাক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে রোগীর কথা জড়িয়ে যায়। পক্ষাঘাত বা অবশ হয়ে যাওয়া থেকে অঙ্গ সংলগ্ন পেশি নড়াচড়ায় শক্তি ক্রমশ ফিরে আসে। কিন্তু হাত দিয়ে সূক্ষ্ম কাজ করার ক্ষমতা সাধারণত পুরোপুরিভাবে ফিরে আসে না। চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে আরোগ্য লাভ দ্রুত হতে থাকে। কিন্তু দু’মাস পরে উন্নতি ক্রমশ কমে আসে না। হঠাৎ আক্রমণে যে স্নায়ু সাময়িকভাবে কার্যক্ষমতা হারায়, সেগুলো দ্রুত আরোগ্য লাভ করে এবং কার্যক্ষমতা ফিরে পায়। আর যে সব স্নায়ু সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে সব কর্মক্ষমতা চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায়।

স্ট্রোক নির্ণয় ও চিকিৎসা: মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কিংবা রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না? তা নির্ণয় করে এই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এই রোগটি সঠিক কারণ অনেক সময় নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে মস্তিষ্কে জমে থাকা রক্ত অনেক সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করার প্রয়োজন হতে পারে। রোগীর উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা, রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী সম্ভব হলে অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।

স্ট্রোকের রোগীকে উপযুক্ত শুশ্রূষা, মলমূত্র ত্যাগের সুব্যবস্থা করা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পথ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনবোধে রোগীকে নলের সাহায্যে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ মোতাবেক অবশ বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গ নির্দিষ্ট নিয়মে নড়াচড়া করানো দরকার, এতে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া রোধ করা সম্ভব হয়। রোগীর জ্ঞান ফিরে এলে নিজ প্রচেষ্টায় নড়াচড়া করতে উৎসাহিত করা উচিৎ।

স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়: ধূমপান পরিহার করা; যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা; যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের নিয়মিত ঔষধ সেবন করা; দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা; সুন্দর এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করা; প্রভৃতি। [ইশরাত জাহান মিম]


সহায়িকা: জীববিজ্ঞান, বোর্ড বই (নবম-দশম), পৃষ্ঠা – ২২৪, ২২৫।


স্ট্রোকের লক্ষণ, নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply