হার্ট ফেইলিউরের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
হৃৎপিণ্ড যখন দেহের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত রক্তের যোগান দিতে পারে না, তখন এ অবস্থাকে হার্ট ফেইলিউর [Heart Failure] বলে। আরও সহজ করে বলতে গেলে, হার্ট ফেইলিউর মানে হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে, থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তা নয়। তবে হার্ট ফেইলিউরকে হৃৎপিণ্ডের মারাত্মক অবস্থা বিবেচনা করে সুচিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।

হার্ট ফেইলিউরের কারণ: করোনারি ধমনির অন্তঃস্থ গাত্রে কোলেস্টেরল জমে ধমনির গহ্বর সংকীর্ণ করে দিলে হৃৎপ্রাচীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন (O2) সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। এরূপ অবস্থায় কালান্তরে হার্ট ফেইলিউর ঘটে। উচ্চ রক্তচাপ বেশিদিন স্থায়ী হলে ধমনির অন্তঃস্থ প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়বেটিস হলে দেহ পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন বা সঠিকভাবে ব্যবহারও করতে পারে না। এ কারণে ধীরে ধীরে হৃৎপেশি ও হৃৎপিণ্ডের বাহিকাগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে হার্ট ফেইলিউর ঘটে। হৃৎপিন্ডের জন্মগত বা সংক্রমণজনিত কারণেও হার্ট ফেইলিউর ঘটতে থাকে।
হার্ট ফেইলিউরের লক্ষণ: হার্ট ফেইলিউরের যে সব লক্ষণ দেখা যেতে পারে, সে সব নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. সক্রিয়, নিষ্ক্রিয় এমনকি ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টে ভোগা এবং ঘুমের সময় মাথার নিচে দুটি বালিশ না দিলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া।
২. সাদা বা গোলাপি রঙের রক্ত মাখানো মিউকাসসহ স্থায়ী কাশি হওয়া বা ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস-প্রশ্বাস।
৩. শরীরের বিভিন্ন জায়গার টিস্যুতে তরল জমে ফুলে উঠা।
৪. পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা, উদর ও যকৃত স্ফীত হয়ে যায়। জুতা পড়তে গেলে হঠাৎ আঁটসাট মনে হয়।
৫. প্রতিদিন সব কাজে, সব সময় ক্লান্তিভাব। ভারি কাজ বা সিঁড়ি দিয়ে উঠা, হাটা-চলা, কিছু বহন করা সবকিছুতেই শ্রান্তিভাব।
৬ পাকস্থলী সব সময় ভরা মনে হয় কিংবা বমি বমি ভাব থাকে।
৭. দ্রুতগতিতে হৃৎস্পন্দন হয়।
৮. কাজ-কর্ম, চলনে অসামঞ্জস্য এবং স্মৃতিহীনতা প্রকাশ পায়।
হার্ট ফেইলিউরের প্রতিকার: হার্ট ফেইলিউরের প্রাথমিক উপসর্গতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলে এবং প্রতিকার সম্বন্ধে সতর্ক হলে রোগীর তেমন সমস্যা হয় না, সক্রিয় জীবন যাপনেও কোন কিছু বাধা হয় না। হার্ট ফেইলিউরে আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত তিন ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা হয়।
১. জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তন: স্বাস্থ্যসম্মত আহার হচ্ছে রোগীদের প্রধান অবলম্বন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা দেখে নিয়মিত সুষম আহার করা উচিত।
২. ওষুধ গ্রহণ: হার্ট ফেইলিউরের ধরন দেখে চিকিৎসক যে সব ঔষধ নির্বাচন করবেন, তা নিয়মিত সেবন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।
৩. অন্যান্য চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া: হার্ট ফেইলিউর যেন খারাপের দিকে মোড় না নেয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে বিভিন্ন শারীরিক অব্যবস্থাপনা সারিয়ে তুলতে হবে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেমন- শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে টিস্যুতে পানি জমে থাকা। তাই এ ধরনের রোগীকে চিকিৎসক বলবেন, কখন ওজন পরীক্ষা করাতে হবে এবং ওজন পরিবর্তন সম্বন্ধে কখন তাঁকে রিপোর্ট করতে হবে।
উল্লেখিত তিনটি প্রতিকার পদ্ধতিতে কাজ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শল্যচিকিৎসা বা অন্য কোনো ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। [ইশরাত জাহান মিম]
সহায়িকা: আজমল, গাজী; আসমত, গাজী; ২০১৭; জীববিজ্ঞান ২য় পত্র (একাদশ – দ্বাদশ), পৃষ্ঠা – ১১২, ১১৩।
ছবি: wikipedia.org
হার্ট ফেইলিউর এর লক্ষণ
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL