প্রকল্প পরিকল্পনা ফলপ্রসূকরণের উপাদান

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ বা প্রণয়ন প্রকৃতি, কাজের ধরন, প্রকল্পের উদ্দেশ্য সুবিধাভোগী গোষ্ঠী প্রভৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। প্রকল্প পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও ঘটনাবলির বিশ্লেষণ পূর্বানুমান করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। প্রকল্প পরিকল্পনা ফলপ্রসূকরণের ক্ষেত্রে যে সকল উপাদান প্রভাবিত করে সে সকল উপাদান সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

১. পরিকল্পনার ব্যবস্থাপকীয় দর্শন: প্রকল্প পরিকল্পনার সাথে সাধারণত দুটি পক্ষ জড়িত থাকে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নকারী ও অপরটি বাস্তবায়নকারী পক্ষ, কিন্তু বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে দুটি পক্ষ আলাদা থাকে। বিশেষত পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্বে একদল দক্ষ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, কিন্তু উভয় পক্ষের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমঝোতার উপর প্রকল্পের কার্যকারিতা নির্ভর করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞগণ প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন তাত্ত্বিক কলাকৌশলের প্রয়োগ ঘটান, কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা, বাস্তবতা, বাস্তবায়নকারীর সামর্থ্য ও ক্ষমতা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, সুবিধাভোগীদের (stake holder) অবস্থা ও চাহিদার দিকে নজর না দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন যা বাস্তবিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। তাই ফলপ্রসূ প্রকল্প পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সমন্বয় থাকা বাঞ্ছনীয়।

২. পরিকল্পনা বিস্তৃতকরণের মাত্রা: প্রকল্পের পরিকল্পনা অতিমাত্রায় বিস্তৃত বা সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত নয়। যদি পরিকল্পনা বিস্তৃত হয় তাহলে তা বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ও সময় অধিক হয় এবং নমনীয়তা কম থাকে। আবার পরিকল্পনা সংক্ষিপ্ত হলে তা সবার জন্য বোধগম্য হয় না, যা বাস্তবায়ন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কেননা কৌশল প্রয়োগ করে বিভিন্ন কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা করে থাকেন। তাই প্রকল্প পরিকল্পনা কতটুকু বিস্তৃত হবে, তা নির্ভর করে পরিকল্পনার উদ্দেশ্য প্রকল্পের আকার, জটিলতা, বাস্তবায়নকারীর উপর। আবার পরিকল্পনার ব্যবহারকারীর উপর এর বিস্তৃতি নির্ভর করে। যদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিকল্পনা ব্যবহার করেন, তাহলে পরিকল্পনা সংক্ষিপ্ত হলেও চলে। আর যদি সুপারভাইজাররা ব্যবহার করেন, তাহলে পরিকল্পনা বিস্তারিত হওয়া উচিত।

৩. যথাসময়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন: সঠিক সময়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার আগাম নকশা। এটি প্রণয়ন করা হয়, অতীত অভিজ্ঞতা, তথ্য ও বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে। তাই দূর ভবিষ্যৎ-এর জন্য পরিকল্পনা করা হলে তা সময়ের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাস্তবায়ন করা সহজ হয় না। কিংবা বাস্তবায়ন করলে, তা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করা যায় না। আবার সময়ের প্রভাবে প্রযুক্তির পরিবর্তন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশের পরিবর্তিত উপাদানের প্রভাবে দীর্ঘদিন পূর্বে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা জটিল হয়ে পড়ে। তাই গ্রহণযোগ্য সময়ে প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার।

৪. পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রক্রিয়া পরিকল্পনাকরণ: যে কোনো পরিকল্পনা সুচিন্তিতভাবে প্রণয়ন করা উচিত। তার জন্য পর্যাপ্ত তথ্যের সমাগম করা যেমন জরুরি, তেমনি বিভিন্ন আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করাও প্রয়োজন।

উপরে উল্লেখিত উপাদানগুলো কোনো প্রকল্প পরিকল্পনা ফলপ্রসূকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই উপাদানগুলো দ্বারা যে কোনো প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রভাবিত হয়ে থাকে। [শারমিন জাহান সায়মা]


সহায়িকা: রাসুল, ড. মোঃ সিরাজুর এবং ইসলাম, মোঃ নজরুল, প্রকল্প পরিকল্পনা, (২০১৬/২০১৭), কমার্স পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩৯১ – ৩৯২।


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply