দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.) নির্মিত একগম্বুজ মসজিদ | নড়াইল

দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.) নির্মিত একগম্বুজ মসজিদ | নড়াইল

হযরত শাহ দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.) নির্মিত একগম্বুজ মসজিদ ২টি নড়াইল জেলাধীন লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের রামপুর নামক গ্রামে অবস্থিত। নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের উত্তর পাশে নিরিবিলি পিকনিক স্পট সংলগ্নে এ মসজিদ ২টির অবস্থান। নবগঙ্গা নদী থেকে প্রায় ৩৫০মিটার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মসজিদ ২টির ভূ-স্থানাঙ্ক (geo-coordinate) হল 23°11’04.1″N 89°37’60.0″E (23.184481, 89.633319)।

রামপুর গ্রামে ২টি ছোট আকারের মসজিদ, মাজার, একটি পুকুর ও একটি দিঘি হযরত শাহ দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.) স্মৃতি বহন করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জানা যায় যে, একগম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ ২টির ১টি পুরুষের জন্য এবং অপরটি মহিলাদের জন্য নির্মিত। নিম্নে এ মসজিদ ২টি সম্পর্কে তুলে ধরা হল।

একগম্বুজ মসজিদ – ১ (পুরুষদের মসজিদ) : নবনির্মিত মসজিদ আল-আহদ জামিল আল হাফেজের পশ্চিম পাশে পুরুষের জন্য নির্মিত এ মসজিদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। মসজিদটি বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত। মসজিদটির দেয়ালসহ দৈর্ঘ্য ৪.৪৭ মিটার। মসজিদের দেয়াল ৬৫ সে.মি. পুরু। মসজিদের অভ্যন্তরের উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে কুলঙ্গি রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরে পশ্চিম দেয়ালে ১টি মিহরাব রয়েছে। মিহরাবটি অর্ধবৃত্তাকার এবং আকারে ছোট। মসজিদের একমাত্র প্রবেশ পথটি পূর্ব দেয়ালে। মসজিদের উপরে ১টি  অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজটির উপরে অলংকৃত শীর্ষদেশ (finial) রয়েছে। গম্বুজটির কর্ণাভরণে (pendent) জ্যামিতিক নকশার অলংকরণ রয়েছে। এ মসজিদের চারকোণে ১টি করে টারেট রয়েছে। মিহরাব বরাবর বাহিরের দেয়ালে জ্যামিতিক নকশার অলংকরণ দেখা যায়। এ মসজিদটির বাহির দেয়ালে মারলন (merlon) নকশা লক্ষ্য করা যায়।  প্রাচীন এ মসজিদ নির্মাণে ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহৃত হয়েছে।  

একগম্বুজ মসজিদ – ২ (মহিলাদের মসজিদ) : মহিলাদের জন্য নির্মিত এ মসজিদটি একগম্বুজ মসজিদ – ১ (পুরুষদের মসজিদ) থেকে প্রায় ৩০ মিটার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এ মসজিদটি বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত। মসজিদটির দেয়ালসহ দৈর্ঘ্য ২.৯৫ মিটার। এটির দেয়াল ৫৮ সে.মি. পুরু। মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে অর্ধবৃত্তাকার খিলানবিশিষ্ট জানালা রয়েছে। একমাত্র প্রবেশ পথটি পূর্ব দেয়ালে। মসজিদের অভ্যন্তরে পশ্চিম দেয়ালে ১টি মিহরাব রয়েছে। এ মিহরাবটি অর্ধবৃত্তাকার এবং আকারে ছোট। মসজিদের উপরে ১টি গম্বুজ রয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজের উপরে অলংকৃত শীর্ষদেশ (finial) রয়েছে। এ মসজিদের চারকোণে ১টি করে টারেট রয়েছে। গোলাকার টারেটের ভিত্তির (নধংব) উপর অংশে এবং ক্যাপিটালে বৃত্তাকার পেঁচানো নকশা রয়েছে। মসজিদটির বাহির দেয়ালে মারলন (merlon) নকশার প্রতিফলন দেখা যায়। এ মসজিদ নির্মাণে ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহৃত হয়েছে।  

পুরুষদের জন্য নির্মিত মসজিদটির দক্ষিণ পাশে হযরত শাহ দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.)  এবং তাঁর মায়ের মাজার রয়েছে। এ মাজারের প্রায় ৫ মিটার দক্ষিণ পাশে ফয়জুল্লাহ নির্মিত ছোট ১টি পুকুর রয়েছে। এছাড়া মসজিদ ও মাজার সংলগ্ন নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের দক্ষিণ পাশের ১টি বিশাল আয়তনের দীঘি হযরত শাহ দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.)-এর অন্যতম নিদর্শন বলে জানা যায়।

‘হযরত শাহ দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.) নামান্তরে ফজু দেওয়ান ছিলেন নবাব মুর্শিদকুলি খানের আমলে সুবার সুবাদারের অধীন একজন দেওয়ান। ক্রমে এ সুফি রাজকর্ম ত্যাগ করে রামপুরা গ্রামে ধর্মীয় সাধনায় নিজেকে আত্ননিয়োগ করেন।’ হযরত শাহ দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.) নামান্তরে ফজু দেওয়ান নামক এ সুফি সাধকের আবির্ভাব নিয়ে মতপার্থক্য থাকলে ধারণা করা হয় যে, আজ থেকে আনুমানিক ৩০০-৩৫০ বছর আগে (আনুমানিক সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীতে) তিনি নড়াইলের লক্ষ্মীপাশার রামপুর নামক এলাকায় আগমন করেন। তিনি ধর্ম সাধনার পাশাপাশি মসজিদ নির্মাণ  এবং দীঘি খনন করেন। [মো. শাহীন আলম]


তথ্যসূত্র :
১. এস, এম, রইজ উদ্দিন আহম্মদ, লড়েআল হতে নড়াইল, (ঢাকা: রংধনু প্রকাশনী, মে-২০০৯), পৃষ্ঠা-৪৩৪ – ৪৩৫।
২. নড়াইল জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন, ২০১৭, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৬০ – ৬১।
৩. প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ।


নড়াইল দেওয়ান ফয়জুল্লাহ (র.) নির্মিত একগম্বুজ মসজিদ


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply