কল্প (era) বলতে যা বুঝায় – বিস্তারিত
কল্প (era) বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসহ ইতিহাসের একটি দীর্ঘ এবং স্বতন্ত্র সময়কে বুঝায়। বাংলা “কল্প” শব্দের ইংরেজি “era” শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন ভাষার শব্দ “aera” থেকে। যার অর্থ “গণনার জন্য ব্যবহৃত গণক (counter)” বা “সম্পর্কস্থাপক বিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত একটি যুগ (epoch)“। অনেকে, “কল্প” শব্দটি “যুগ” অর্থেও ব্যবহার করেন।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এক “কল্প” হলো পৃথিবীর ৪৩২ কোটি বছরের সমান। আবার এক কল্পকে “ব্রহ্মার এক দিন” বা “এক হাজার মহাযুগ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন বৌদ্ধধর্ম অনুসারে, “কল্প” শব্দটি পালি ভাষার শব্দ “কপ্প” থেকে এসেছে। বৌদ্ধ গ্রন্থ অনুসারে, “কল্প” বলতে বুঝায়, “যিনি সময়ের বাহিরে চলে গেছেন”। গৌতম বুদ্ধের মতে, পূর্বের কল্পগুলোতে বুদ্ধের সংখ্যা অগণিত ছিল। তিনি তাঁর শিক্ষাগুলো বর্তমান কল্পের সাথে সীমাবদ্ধ রেখেছেন এবং এ সময়ের কোনো গাণিতিক সংজ্ঞা দেননি।
আবার, কল্প (era) হলো ভূতাত্ত্বিক সময় নির্ণয়ের প্রাথমিক বিভাজন। ভূতাত্ত্বিক সময়পঞ্জি অনুসারে, বিভাজিত কল্পগুলোর মধ্যে সর্বপ্রাচীন হলো- প্রিক্যামেব্রিয়ান, এরপরে- প্যালিওজোয়িক, মেসোজোয়িক এবং সাম্প্রতিক হলো- সেনোজোয়িক। ভূতাত্ত্বিক গঠন এবং জীবের আবির্ভাব ও বিবর্তন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য এসব কল্পকে আরও উপবিভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।
কল্পগুলো প্রায়শই মানব সভ্যতার সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ও প্রযুক্তিগত দিকগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন পণ্ডিত এবং ইতিহাসবিদগণ কল্পকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেন এবং নাম দিয়ে থাকেন। তবে কল্পের সময়ের ব্যাপ্তি ও সীমানা নিয়ে সর্বদা মতভেদ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কয়েকটি সাধারণ ঐতিহাসিক কল্প বা যুগ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রস্তর কল্প (stone age): প্রাগৈতিহাসিক কল্প (যুগ), যা পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। যা প্যালিওলিথিক, মেসোলিথিক এবং নিওলিথিক যুগে বিভক্ত করা হয়েছে।
প্রাচীন কল্প (ancient era): প্রাচীন কল্প (যুগ) এর মধ্যে মেসোপটেমিয়া, মিশর, গ্রীক এবং রোমান সভ্যতাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মধ্যযুগীয় কল্প (medieval era): মোটামুটি পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপীয় মধ্যযুগ বা মধ্যযুগীয় কল্পকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রেনেসাঁ (renaissance): ইউরোপে শিল্প, সংস্কৃতি এবং শিক্ষার প্রতি নতুন করে আগ্রহের সময়কে রেনেসাঁ যুগে বা কল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণত চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে রেনেসাঁ ঘটেছিল বলে মনে করা হয়।
শিল্প বিপ্লব (industrial revolution): শিল্প বিপ্লব কল্প বা যুগ হলো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সামাজিক পরিবর্তনের একটি সময়। যা কৃষি ও হস্তশিল্প-ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্পায়িত এবং যন্ত্রচালিত অর্থনীতিতে স্থানান্তর দ্বারা চিহ্নিত। সাধারণত অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে।
আধুনিক কল্প (modern era): মোটামুটি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বা ঊনবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক কল্প বা যুগ শুরু বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এর ব্যাপ্তি প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে, এবং বর্তমান দিন পর্যন্ত প্রসারিত।
এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, যুগের বিভাজন বা কল্পের বিভাজন হলো ইতিহাসকে বিশ্লেষণ এবং বুঝার একটি হাতিয়ার মাত্র। কল্পের বা যুগের নাম এবং সীমানা ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, এবং শৃঙ্খলাগত দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। [মো: শাহীন আলম]
সহায়িকা:
১। বাকী, আবদুল, ভুবনকোষ, (২০১৩), ঢাকা: সুজনেষু প্রকাশনী, পৃষ্ঠা – ৫৬।
২। কল্প, wikipedia.org
কল্প বলতে কি বুঝায়?
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL