খনিজ ও শিলা শনাক্তকরণে Hardness Scale
কাঠিন্য মাত্রামান বা হার্ডনেস স্কেল (Hardness Scale) শব্দটি দিয়ে সাধারণত বিভিন্ন পদার্থ বিশেষ করে ধাতু এবং খনিজ পদার্থ বা শিলার কঠোরতার পরিমাপকে বোঝায়। অর্থাৎ খনি থেকে উত্তোলিত বিভিন্ন কঠিন খনিজ বা শিলার কাঠিন্য বা ঋজুতা বোঝানোর মাত্রাকে কাঠিন্য মাত্রামান বলে। কোনো কঠিন শিলার গায়ে দাগ বা আঁচড় দিলে, সে শিলাটির বাঁধাদান বা বিরোধিতা (resistance) করার মাত্রাই হলো কাঠিন্যের পরিমাপ। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোমল খনিজ বা শিলার গায়ের উপরে সহজে দাগ বা আঁচড় বসানো যায়। অপরদিকে, খুব শক্ত ও সুদৃঢ় খনিজ বা শিলার গায়ের উপরে দাগ বা আঁচড় বসানোর জন্য কঠিন ধাতব যন্ত্র (tools) বিশেষ করে ইস্পাতের চাকুর প্রয়োজন হয়।
কঠিন খনিজ বা শিলার কাঠিন্য বা ঋজুতা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন কাঠিন্য মাত্রামান বা হার্ডনেস স্কেল (Hardness Scale) রয়েছে। তবে, এর মধ্যে দুটি সাধারণ স্কেল হলো মোহাস স্কেল (Mohs’ scale) এবং রকওয়েল স্কেল (Rockwell scale)। নিম্নে এ দুটি কাঠিন্য মাত্রামান বা হার্ডনেস স্কেল (Hardness Scale) নিয়ে আলোচনা করা হলো।
মোহাস স্কেল (Mohs’ scale): ১৮১২ সালে খনি বিশেষজ্ঞ ফ্রেড্রিক মোহাস (Friedrich Mohs) কঠিন খনিজ বা শিলার কাঠিন্য পরিমাপের জন্য একটি কাঠিন্য মাত্রামান বা হার্ডনেস স্কেল (Hardness Scale) উদ্ভাবন করেন। এটি একটি গুণগত মাত্রামান বা স্কেল, যা একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের স্ক্র্যাচ প্রতিরোধের উপর ভিত্তি করে খনিজ বা শিলাগুলোকে কাঠিন্য মাত্রা মানে স্থান দেয়া হয়। স্কেলটিতে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত খনিজ বা শিলার কাঠিন্য মাত্রা মান প্রকাশ করে, ১ হলো সবচেয়ে নরম (যেমন: টাল্ক) এবং ১০ হলো সবচেয়ে শক্ত (যেমন: হীরা)।
মোহাস স্কেল (Mohs’ scale) অনুসারে, ১ থেকে ২ পর্যন্ত কাঠিন্য মাত্রা মান হলো কোমল (soft) খনিজ বা শিলা; ২ থেকে ৩ পর্যন্ত কাঠিন্য মাত্রা মান হলো মধ্যম কোমল (soft) খনিজ বা শিলা; ৩ থেকে ৫ পর্যন্ত কাঠিন্য মাত্রা মান হলো মধ্যম শক্ত খনিজ বা শিলা; ৫ থেকে ৭ পর্যন্ত কাঠিন্য মাত্রা মান হলো শক্ত খনিজ বা শিলা; ৭ থেকে তদূর্ধ্ব কাঠিন্য মাত্রা মান হলো সবচেয়ে শক্ত খনিজ বা শিলা। এক প্রস্থ খনিজ বা শিলা নিয়ে খনিজ বা শিলার যে কাঠিন্য মান নির্ধারণ করা হয়, তাকে মোহাস কাঠিন্য স্কেল (Mohs’ scale of Hardness) বলে।

কাঠিন্য পরিমাপ কৌশল: মোহাস স্কেল (Mohs’ scale) অনুসারে, খনিজ বা শিলার কাঠিন্য মান পরিমাপের সহজ কৌশল নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
কাঠিন্য মান – ১: খনিজ বা শিলার উপরে হাতের নখ দিয়ে সহজে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়; যেমন: কোমল শিলার (যেমন: টাল্ক) উপরে হাতের নখ দিয়ে খুব সহজে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়।
কাঠিন্য মান – ২: খনিজ বা শিলার উপরে হাতের নখ দিয়ে অতো সহজে দাগ বা আচঁড় কাটা যায় না; যেমন: জিপসামের উপরে হাতের নখ দিয়ে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়, তবে খুব সহজ নয়।
কাঠিন্য মান – ৩: খনিজ বা শিলার উপরে তামার পয়সা দিয়ে সহজে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়; যেমন: ক্যালসাইটের উপরে তামার পয়সা দিয়ে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়।
কাঠিন্য মান – ৪: খনিজ বা শিলার উপরে লোহার পেরেক (iron nail) দিয়ে সহজে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়; যেমন: চূর্ণ স্ফটিক (flour spar) উপরে লোহার পেরেক দিয়ে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়।
কাঠিন্য মান – ৫: খনিজ বা শিলার উপরে চাকু (knife) দিয়ে সহজে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়; যেমন: এ্যাপেটাইট (apatite) উপরে চাকু দিয়ে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়।
কাঠিন্য মান – ৬: খনিজ বা শিলার উপরে চাকু (knife) দিয়ে কষ্টে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়; যেমন: ফেল্ডস্পার (feldspar) উপরে চাকু দিয়ে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়, তবে খুব সহজ নয়।
কাঠিন্য মান – ৭: খনিজ বা শিলার উপরে ইস্পাত ফাইল (steel file) দিয়ে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়; যেমন: কোয়ার্টজ (quartz) উপরে ইস্পাত ফাইল দিয়ে দাগ বা আচঁড় কাটা যায়।
কাঠিন্য মাত্রামান বা হার্ডনেস স্কেল (Hardness Scale) অনুসারে, প্রতিনিধিত্বকারী কতিপয় খনিজের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো। খনিজের এসব মান ব্যবহার করে পরবর্তীতে খনিজ বা শিলা শনাক্ত করতে সহজ হবে।
কাঠিন্য মান (Hardness Scale) | খনিজ/শিলা |
১ | টাল্ক (Talc) |
২ | জিপসাম (Gypsum) |
৩ | ক্যালসাইট (Calcite) |
৪ | চূর্ণ স্ফটিক (flour spar) |
৫ | এ্যাপেটাইট (Apatite) |
৬ | অর্থোক্লেজ (Orthoclase) |
৭ | কোয়ার্টজ (Quartz) |
৮ | টোপাজ (Topaz) |
৯ | কোরান্ডাম (Corundum) |
১০ | হীরা (Diamond) |
রকওয়েল স্কেল (Rockwell scale): ১৯১৯ সালে স্ট্যানলি পি. রকওয়েল (Stanley P. Rockwell) কঠিন খনিজ বা শিলার কাঠিন্য পরিমাপের জন্য একটি কাঠিন্য মাত্রামান বা হার্ডনেস স্কেল (Hardness Scale) উদ্ভাবন করেন। এ স্কেল দিয়ে ইন্ডেন্টেশনের (indentation) প্রতিরোধের মূল্যায়ন করে একটি খনিজ বা শিলার কঠোরতা পরিমাপ করা হয়। এ স্কেলের মধ্যে বিভিন্ন মান রয়েছে, অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। রকওয়েল স্কেলে সংখ্যার মান যত বেশি, উপাদান (খনিজ বা শিলা) তত শক্ত।
পরিশেষে বলা যায় যে, উল্লেখিত কঠোরতা স্কেলগুলো ধাতুবিদ্যা, ভূতত্ত্ব এবং বস্তু বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন শিল্পে প্রয়োজন। কারণ এ স্কেলগুলো বিভিন্ন খনিজ বা শিলার কঠোরতা পরিমাপ এবং তুলনা করার জন্য একটি প্রমিত উপায়। কঠোরতা পরিমাপের জন্য কোন স্কেলটি ব্যবহার করতে হবে, তার পছন্দটি পরীক্ষা করা উপাদানের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে। [মো: শাহীন আলম]
সহায়িকা:
১। রউফ, কাজী আবদুর; মাহমুদ, কাজী আবুল; (২০২০); ফলিত ও ব্যবহারিক ভূগোল; ঢাকা: সুজনেষু প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৬৩৩ – ৬৩৫।
২। বাকী, আবদুল, (২০১৩), ভুবনকোষ, ঢাকা: সুজনেষু প্রকাশনী, পৃষ্ঠা – ৫৬।
৩। Identifying Minerals
খনিজ ও শিলা শনাক্তকরণের স্কেল।
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL