মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি: নয়গম্বুজবিশিষ্ট গৌরনদীর কসবা মসজিদ

নয়গম্বুজবিশিষ্ট গৌরনদীর কসবা মসজিদ
বরিশাল জেলাধীন গৌরনদী উপজেলার বড় কসবা গ্রামে (বর্তমান গৌরনদী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড) এ প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত। গৌরনদী উপজেলা সদর থেকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক পথে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার উত্তর দিকে এগিয়ে গেলে আল্লাহর মসজিদ (কসবা মসজিদ) নামক বাসস্ট্যান্ড। আর এ বাসস্ট্যান্ড থেকে পিচঢালা পথে প্রায় ২০০ মিটার পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলে এ মসজিদটি দেখা যায়।
মানচিত্র: কসবা মসজিদের অবস্থান।
মসজিদটির নির্মাণের সময় ও ইতিহাসযুক্ত কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতির উপর ভিত্তি করে বলা হয়ে থাকে, খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে (অর্থাৎ ১৫০১-১৬০০ খ্রিস্টাব্দের যেকোন এক সময়ে) জনৈক সাবহি খান কসবা মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির নির্মাতা সম্পর্কে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনুমান করা হয়ে থাকে, গৌরনদী উপজেলার কসবা নামক স্থানটিতে মুঘল আমলে একটি উন্নত মুসলিম জনপদ ছিল।

বর্গাকার ভূমি-পরিকল্পনায় নির্মিত এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের পরিমাপ ১১.৬৮ মিটার x ১১.৬৮ মিটার। নয়গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটির চারকোণে চারটি স্তম্ভ (column) রয়েছে। বৃত্তাকার ভূমি-পরিকল্পনায় নির্মিত স্তম্ভগুলো ভূমি থেকে মসজিদের ছাদ পর্যন্ত উঠে গেছে। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ১.৯৫ মিটার চওড়া। পাতলা ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত এ মসজিদটির বাহির দেয়ালে কোন আস্তর নেই। মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ৩টি, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি প্রবেশপথ রয়েছে।
বাহির দেয়াল দেখে মনে হয়, কোন এক সময় মসজিদটির উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ৩টি করে প্রবেশপথ ছিল। পরবর্তীতে মাঝখানের ১টি করে প্রবেশপথ রেখে উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের বাকি প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। মসজিদটির প্রত্যেকটি প্রবেশপথ শিখরাকার সরু উঁচু খিলান (lancet arch) বিশিষ্ট। প্রবেশপথের খিলানের উপরের প্যানেলে কিছু ফুল ও ডায়মন্ড অলংকরণ রয়েছে। মসজিদটির ছাদ বরাবর চারদিকে কার্ণিশ রয়েছে। কার্ণিশগুলো মাঝখান থেকে আংশিক বেঁকে প্রলম্বিত হয়ে চারকোণের স্তম্ভের সাথে যুক্ত হয়েছে।

মসজিদের অভ্যন্তরে ৪টি পাথরের স্তম্ভ রয়েছে। মনে হয়, স্তম্ভগুলো আগ্নেয়শিলাজাত ব্যাসল্ট কিংবা ডলেরাইট পাথরের। চওড়া বাহির দেয়াল ও অভ্যন্তরের ৪টি পাথরের স্তম্ভের উপর নির্মিত শিখরাকার সরু উঁচু খিলানে (lancet arch) ভর করে মসজিদের ছাদে নয়টি গম্বুজ অবস্থান করছে। মসজিদের অভ্যন্তরের পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মিহরাব রয়েছে। দেয়ালের মাঝখানের মিহরাবটি আকারে বড়। স্থানীয়ভাবে এ মসজিদটি আল্লাহর মসজিদ নামে পরিচিত। এ মসজিদটির ভূমি-নকশা, বাহির ও অভ্যন্তরের গঠনশৈলী, ছাদের উপরের গম্বুজ, প্রবেশপথের অবস্থান ও অলংকরণ, চারকোণের স্তম্ভ প্রভৃতির সাথে খান জাহান (র.) আমলে নির্মিত বাগেরহাট জেলার নয়গম্বুজ মসজিদ এবং খুলনা জেলার মসজিদকুড় মসজিদের স্থাপত্যশৈলীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
খান জাহান (র.) আমলে নির্মিত স্থাপত্যশিল্পের সাথে কসবা মসজিদটির ঘনিষ্ঠ মিল থাকায় মনে করা হয় যে, খান জাহান (র.) কর্তৃক বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল মুসলিম অধিকারে আসার পর খ্রিস্টীয় ১৫ শতকের কোনো এক সময়ে কসবা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। মুসলিম স্থাপত্যিক এ নিদর্শনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ও তত্ত্বাবধানে রয়েছে। [মো. শাহীন আলম]
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL
লেখাটা ভালো লাগলো
স্যার, আপনাদের ভাললাগা তরুণ প্রজন্মের ভাল লেখালেখিতে উৎসাহ জোগাবে, আশাকরি।