চিকেন নেক আসলে কী?
আপনারা জানেন কি? চিকেন নেক আসলে কী? যদি বলেন, ইংরেজি চিকেন নেক (chickens neck) মানে হলো মুরগির ঘাড়। তাহলে উত্তরটি সঠিক। তবে, চিকেন নেক -এর অর্থ মুরগির ঘাড় হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূ-খণ্ডের নাম। আজ আমি আপনাদের সামনে চিকেন নেক – এর আদ্যোপান্ত তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
পশ্চিমে বাংলাদেশ, পূর্বে দিকে নেপাল মাঝখানে খুবই সংকীর্ণ একটি ভূখণ্ড ভারতের নিয়ন্ত্রণে। সমগ্র ভারত মানচিত্রটিকে একটি মুরগীর সাথে তুলনা করে একটু কল্পনার চোখে দেখলে সংকীর্ণ এ ভূখণ্ডটি মুরগির ঘাড়ের মতো দেখায়। মুরগির ঘাড়ের ইংরেজি হলো চিকেন নেক। চিকেন নেক নামক সংকীর্ণ এই ভূখণ্ড ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে দেশের বাকি অংশের যোগসূত্র হিসেবে অবস্থান করছে।
শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, চোপড়া ও ইসলামপুরের কিছুটা অংশ এই চিকেন নেক নামক ভূ-খন্ডের মধ্যে পড়েছে। সংকীর্ণ এই ভূখণ্ডটি শিলিগুড়ি করিডোর নামেই সুপরিচিত। নেপাল ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মাঝখানের এই ভূ-খন্ডটি ভুটান করিডোরের উত্তর দিকে অবস্থিত। ভূরাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি এখানকার প্রধান শহর। এই শহরটি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, উত্তর-পূর্ব ভারত ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী প্রধান কেন্দ্র।
১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হলে শিলিগুড়ি করিডোরের সৃষ্টি হয়। ১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে ভারতের সাথে মিলিত হওয়া সিকিম রাজ্য শিলিগুড়ির উত্তর দিকে অবস্থিত। এই রাজ্যটি শিলিগুড়ির উত্তরে ভারতকে একটি সুরক্ষা দিয়েছে এবং চীনা চুম্বি উপত্যকার পশ্চিম দিকের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণকে একীভূত করেছে।
২০০২ সালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ও ভুটান এই অঞ্চলে একটি মুক্ত বাণিজ্যাঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে বলে জানা যায়। এই প্রস্তাবে উক্ত অঞ্চলের মাধ্যমে অবাধে চার দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন চালানোর কথা বলা হয়। তবে বর্তমানে অবৈধ ড্রাগ ও অস্ত্র চোরাচালান শিলিগুড়ি করিডোর অঞ্চলের প্রধান সমস্যা বলে জানা যায়।
চিকেন নেক খ্যাত এই শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল অঞ্চল। এর অবস্থান এমন একটি ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। [মো: শাহীন আলম]
চিকেন নেক কাকে বলে?
image: wikimedia.org