চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক

খবরের শিরোনামে আমরা প্রায় দেখি বা শুনি যে, বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানগণ একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেন। আসলে চুক্তি কি? এবং সমঝোতা স্মারক কি? আবার এদের মধ্যে পার্থক্যই বা কি? আমরা সবাই কি জানি? হয়তো জানি, বা জানি না, আজ আপনাদের সামনে চুক্তি, ও সমঝোতা স্মারক এর ধারণা তুলে ধরবো। প্রথমে জানার চেষ্টা করি, আসলে চুক্তি কি?

চুক্তি কি?

চুক্তি – এর ইংরেজি Agreement। চুক্তি হলো দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত একটি আইনগত বাধ্যতামূলক সম্মতি, যেখানে পক্ষগুলোর মধ্যে নির্দিষ্ট কাজ করা বা না করার প্রতিশ্রুতি থাকে। সাধারণত আইন ব্যবস্থায়, চুক্তিতে আইনের বিষয়াদির উপস্থিতি থাকে, এবং দুই বা তার অধিক ব্যক্তিবর্গের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকে।

চুক্তি অনুযায়ী যা কিছু ঠিক করা হয়, তা আইন দ্বারা প্রয়োগযোগ্য বা আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে, অর্থাৎ চুক্তি অনুযায়ী যদি কোনো পক্ষ কাজ করতে অস্বীকার করে, তবে অপরপক্ষ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

একটি চুক্তি তৈরি করতে হলে দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে সম্মতির প্রয়োজন, যেখানে একপক্ষ প্রস্তাব প্রদান করে এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে।

চুক্তিতে সাধারণত কিছু কাজ করার বা না করার প্রতিশ্রুতি থাকে, যা চুক্তিবদ্ধ উভয় পক্ষের জন্য আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক।

চুক্তি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন: পণ্য বা সেবার কেনাবেচা, অর্থ লেনদেন, অংশীদারি ব্যবসা, প্রভৃতি। ব্যবসা, লেনদেন, অঙ্গীকার, অথবা অন্য যে কোনো বিষয়ে পারস্পরিক অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার জন্য চুক্তি করার প্রয়োজন হতে পারে।

সমঝোতা স্মারক কি?

বিভিন্ন রাষ্ট্র, কোম্পানি এবং সরকারি সংস্থা, বিভাগ, বা ঘনিষ্ঠভাবে অধিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করতে সমঝোতা স্মারক ব্যবহার করে।

সমঝোতা স্মারক – এর ইংরেজি Memorandum of Understanding (MoU)। সমঝোতা স্মারক (MoU) হলো এমন একটি দলিল, যা দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তির রূপরেখা প্রদান করে। জড়িত পক্ষগুলো কী করবেন বা করবেন না, এটি সে সম্পর্কে একটি সাধারণ বোঝাপড়া প্রকাশ করে, তবে এখানে কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই।

সমঝোতা স্মারকে সাধারণত কতিপয় উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে। এগুলো হলো: চুক্তির উদ্দেশ্য, পক্ষগুলোর দায়িত্ব, পক্ষগুলোর যোগাযোগ এবং সহযোগিতার পদ্ধতি, পক্ষগুলোর বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া, এবং চুক্তির মেয়াদ।

সমঝোতা স্মারকে ব্যবহৃত ভাষা এবং জড়িত পক্ষগুলোর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে আইনগত বাধ্যবাধকতা বা অ-বাধ্যবাধকতা। যদি সমঝোতা স্মারকে নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা থাকে এবং সেই বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পরিণতি উল্লেখ থাকে, তাহলে সমঝোতা স্মারক একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

সমঝোতা স্মারক – আনুষ্ঠানিকতা প্রকাশ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প বা লক্ষ্য সম্পর্কে বিভিন্ন পক্ষ একই অভিপ্রায় নিয়ে সমঝোতায় আবদ্ধ হয়।

সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে জড়িত পক্ষগুলো নিজেদের মধ্যে কীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং তাদের প্রত্যেকের কী দায়িত্ব থাকবে, তার একটি কাঠামো গঠন করতে পারে। কখনও কখনও সমঝোতা স্মারকগুলো আরও আনুষ্ঠানিক আইনগত চুক্তির দিকে একটি ধাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। [মো. শাহীন আলম]



Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply