জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো দরকার কেন?

জীবাশ্ম জ্বালানী হলো প্রাকৃতিক জ্বালানী; যেমন: কয়লা, গ্যাস, ইত্যাদি, যা উদ্ভিদ ও জীবিত প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে ভূগর্ভে সঞ্চিত হয়। মানুষের দৈনন্দিন কাজে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে বৈশ্বিক পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বেশ কিছু কারণে বর্তমান সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো প্রয়োজন। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর মূল কয়েকটি কারণ এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
১। বায়ু এবং পানি দূষণ হ্রাস: জীবাশ্ম জ্বালানীর নির্গমন, প্রক্রিয়াকরণ এবং পোড়ানোর ফলে বায়ু এবং পানি দূষিত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে বিভিন্ন গ্যাস, যেমন- কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ধোঁয়াশা, প্রভৃতি নির্গত হয়। নির্গত এসব গ্যাস থেকে অ্যাসিড বৃষ্টিপাত সংগঠিত হয়ে থাকে। নির্গত বিভিন্ন গ্যাস এবং অ্যাসিড বৃষ্টিপাতের মতো দূষক মানুষের স্বাস্থ্য এবং বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। তাই বায়ু এবং পানি দূষণ হ্রাস করতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।
২। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন: জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো থেকে বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস; যেমন- কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ওজোন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, ইত্যাদি বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয়। নির্গত এসব গ্যাস গ্রীনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো ঘটনায় ভূমিকা রাখে। এরূপ অবস্থা গোটা বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়, যেমন- চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বাস্তুতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতার মতো গুরুতর প্রভাব। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবর্তনজনিত প্রভাব প্রশমন করা সম্ভব হবে।
৩। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস: জীবাশ্ম জ্বালানী নির্গমন বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদকে ক্ষতি করতে পারে, যা প্রাকৃতিক পরিবেশের অবক্ষয় এবং প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে। উদাহরণস্বরূপ, কয়লা খনির কারণে বন উজাড় ও প্রাণীর বাসস্থানের ক্ষতি হচ্ছে, এবং নির্গত জ্বালানী তেল সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর ব্যাপক বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।
৪। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার: সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ এবং জিওথার্মালের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোর ব্যবহার শক্তির মিশ্র ব্যবহারকে বৈচিত্র্যময় করে। একই সাথে সীমিত এবং পরিবেশগতভাবে ক্ষতিকারক সংস্থানগুলোর উপর নির্ভরতা কমায়৷ নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো খুবই টেকসই এবং জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় কম পরিবেশগত প্রভাব ফেলে থাকে।
৫। শক্তি নিরাপত্তা: জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরতা বিভিন্ন দেশকে ভূ-রাজনৈতিকভাবে উত্তেজিত এবং জ্বালানী সরবরাহ ব্যাঘাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলো শক্তি সরবরাহকে বৈচিত্র্যময় ও নিরাপদ করে এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত জ্বালানী শক্তির সীমিত সংস্থানগুলোর উপর নির্ভরতা কমায়। সুতরাং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোর উপর নির্ভরতা বাড়িয়ে শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।
৬। অর্থনৈতিক সুবিধা: স্বল্প-কার্বন নির্ভর অর্থনীতি নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি, শক্তির দক্ষতা এবং পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উন্নীত করতে পারে। টেকসই কাজে বিনিয়োগ বিভিন্ন রকমের উদ্ভাবন এবং নতুন বাজারের বিকাশের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
৭। স্বাস্থ্যগত সুবিধা: জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো থেকে নির্গত দূষক; যেমন- কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ধোঁয়াশা, প্রভৃতি মানুষের শ্বাসযন্ত্র এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে বায়ুর গুণমান উন্নত করা যায়, ফলে শ্বাসযন্ত্রের এবং হৃদযন্ত্রের রোগের প্রাদুর্ভাব কমতে পারে এবং সার্বিক জনস্বাস্থ্য উন্নত হতে পারে।
৮। দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব: জীবাশ্ম জ্বালানী হলো অনবায়নযোগ্য ও সীমিত সম্পদ। এ জ্বালানীর নির্গমন এবং ব্যবহার পরিবেশগত অবনতি ঘটাতে ভূমিকা রাখে। টেকসই শক্তির ব্যবহারে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরও প্রাণবন্ত এবং টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করে।
পরিশেষে, এটা বলা যেতে পারে যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করা খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়া, পরিবেশগত প্রভাবগুলো হ্রাস, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এবং গ্রহ এবং এর বাসিন্দা উভয়ের জন্য একটি টেকসই এবং স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো প্রয়োজন। [মো: শাহীন আলম]
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো উচিত কেন?
Image: wikipedia.org
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL