ডোলাইন : যার অপর নাম সিঙ্কহোল (Sinkhole)

ডোলাইন : যার অপর নাম সিঙ্কহোল (Sinkhole)
Sinkhole in Guatemala City, May 29th 2010.

ডোলাইন [Doline] বলতে চুনাপাথর অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অগভীর বা গভীর গর্তকে বুঝায়। এটি উত্তর আমেরিকায় সাধারণত সিঙ্কহোল (Sinkhole) নামে বেশি পরিচিত। চুনাপাথরবিশিষ্ট অঞ্চলে বৃষ্টির পানি দ্রবণের ফলে এ ধরনের গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। ভূগর্ভে বৃষ্টির পানির দ্বারা দ্রবণ প্রক্রিয়ায় গভীর গর্ত সৃষ্টিকালে ভূ-পৃষ্ঠের (surface) কাছাকাছি ডোলাইন বা সিন্কহোলগুলোর মুখ বন্ধ অবস্থায় থাকে। মুখ বন্ধ অবস্থায় এরূপে সৃষ্ট গভীর গর্তকে মগ্ননালী (submerged channel) বলা হয়। এসব মগ্ননালী বরাবর নিচে দিকে ভূ-পৃষ্ঠ ধ্বসে পড়ার (collapse) মাধ্যমে চুঙ্গি আকৃতির গভীর গর্ত দৃশ্যমান হয়। এগুলো গভীর থেকে গভীরতর হয়ে ভূগর্ভের পানিস্তর (ground water level) পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

বিশ্বব্যাপী এ ধরনের ডোলাইন বা সিঙ্কহোলের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। সিঙ্কহোল হল প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি দুর্যোগ, যা বিভিন্ন স্থানে বা দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- ডলাইন, ডোলিন বা ডোলিনা (Dolina), সিনোট (cenote), সিঙ্ক (sink),  সললেট (swallet), সললো হোল (swallow hole), প্রভৃতি। ধীরে ধীরে কিংবা হঠাৎ করে সৃষ্ট এক একটি সিঙ্কহোলের ব্যাস এবং গভীরতা স্থানভেদে ১ থেকে ৬০০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে । হঠাৎ করে সৃষ্ট সিঙ্কহোলগুলো ব্যাপক বিধ্বংসী এবং প্রাণঘাতী হয়ে থাকে। বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সিঙ্কহোল সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে বলে জানা যায়। 

সিন্কহোল, সিঙ্কহোল বা ডলাইনের গঠন, ডোলাইন
সিঙ্কহোল বা ডোলাইনের গঠন

ডোলাইন বা সিঙ্কহোলের সৃজন প্রক্রিয়া: সাধারণত একটি ডোলাইন বা সিঙ্কহোল (Sinkhole) গঠনের বা সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে সব প্রক্রিয়াগত কয়েকটি ধাপ (উপরের চিত্র অনুযায়ী) দেখা যায়, সে সব নিম্নে তুলে ধরা হল:

ক) ভূ-গর্ভস্থ শক্ত শিলার (the bedrock) মধ্যে বিদ্যমান ছোট ছোট ফাঁকা স্থানের (solutional openings) খনিজ উপাদান পানির দ্বারা দ্রবণ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে আসে;

খ) ভূ-গর্ভস্থ স্তরের ঐ স্থানটিতে ছোট আকারের খিলানের (small arch) সৃষ্টি হয়, আর এখান থেকে ধীরে ধীরে খনিজ উপাদানগুলো আরও দ্রবীভূত হয়ে ধোয়ে এবং ক্ষয়ে যেতে থাকে;

গ) ভূ-গর্ভস্থ স্তরে ঐ স্থানটিতে  খিলানের (arch) আকার আরও বড় হয়ে শূন্য গর্ভের (void) সৃষ্টি হয়, ধীরে ধীরে খনিজ উপাদানগুলো আরও দ্রবীভূত হয়ে বেশি মাত্রায় ধোয়ে এবং ক্ষয়ে গিয়ে সংকটপূর্ণ চূড়ার (critical point) সৃষ্টি হয় এবং ভেঙ্গে বিচ্ছিন্ন (rupture) হতে থাকে;

ঘ) ভূ-পৃষ্ঠসহ সংকটপূর্ণ চূড়ার খিলানটি হঠাৎ করে ধ্বসে পড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়, যেহেতু এটি আর নিজের ওজন ধরে রাখতে পারে না; এবং

ঙ) নির্দিষ্ট সময়ের পরে গর্তের উল্লম্ব পার্শ্বদেশ হ্রাস পাবে এবং গর্তটির গভীরতা কমতে থাকবে।

উল্লেখ্য যে, ডোলাইন বা সিঙ্কহোল যেমনি বৃষ্টির পানি দ্রবণের ফলে চুনাপাথর অঞ্চলে সৃষ্টি হয়, তেমনি ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে যে কোনো স্থানে সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের নিচের ভূ-গর্ভস্থ পানি যখন বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হয়, তখন ভূ-গর্ভস্থ একটি স্তর খালি হয়ে যায় এবং ভূমিধ্বসের (land collapse) সৃষ্টি হয়। এর ফলে যে গর্তের (hole) সৃষ্টি হয়, তাকেও সিঙ্কহোল (Sinkhole) বলা হয়। সুতরাং চুনাপাথর অঞ্চলে বেশি ঘটলেও এ সিঙ্কহোলের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনা যে কোনো স্থানে, যে কোনো সময় এবং যে কোনো প্রাকৃতিক কিংবা মানব সৃষ্ট কারণে ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। [মো: শাহীন আলম]


সহায়িকা: ১. Enclosed depressions
২. বাকী, আবদুল, (২০১৩), ভুবনকোষ, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা।


ডোলাইন কাকে বলে?


Image source: Geological Survey, Ireland.


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply