নড়াইল জমিদারদের কীর্তি সর্বমঙ্গলা মন্দির | নড়াইল

নড়াইল জমিদারদের কীর্তি সর্বমঙ্গলা মন্দির | নড়াইল

নড়াইল জমিদারদের প্রাচীন কীর্তি সর্বমঙ্গলা মন্দির নড়াইল জেলাধীন সদর উপজেলা শহরে অবস্থিত। নড়াইলের শিবশংকর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে খুলনা রোড সংলগ্ন প্রাচীর ঘেরা এ মন্দিরটির অবস্থান। সর্বমঙ্গলা সার্বজনীন মন্দির নামে পরিচিত এ মন্দিরটির ভূ-স্থানাঙ্ক (geo-coordinate) হল 23°09’36.6″N 89°29’42.5″E (23.160166, 89.495139)।

নড়াইল জমিদারদের প্রাচীন এ সর্বমঙ্গলা মন্দির প্রায় বর্গাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত। পাথরের নির্মিত এ মন্দিরটি প্রায় ৮৫ সে.মি. উঁচু প্লাটফর্মের উপরে অবস্থিত। প্লাটফর্মটির উপরে উঠার জন্য ভূমি থেকে চার ধাপের ১টি সিঁড়ি রয়েছে। ৩.৯২ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বর্গাকার এ মন্দিরের সামনে ১টি বারান্দা রয়েছে। দক্ষিণমুখী এ মন্দিরের বারান্দাটির দৈর্ঘ্য ৩.৬৬ মিটার এবং প্রস্থ ১.৭৮ মিটার। বারান্দার সামনের ৪টি স্তম্ভের (pillar) উপরে দণ্ডায়মান তোরণ (arcade) রয়েছে। এ তোরণের মাঝখানে অবস্থিত প্রবেশপথ দিয়ে মূল মন্দিরে প্রবেশের জন্য প্লাটফর্মটির উপর থেকে চার ধাপের আরও ১টি সিঁড়ি রয়েছে। তোরণের স্তম্ভগুলো বিভিন্ন অলংকরণে সজ্জিত রয়েছে। মন্দিরটির প্রতিটি দেয়ালে ১টি করে প্রবেশপথ রয়েছে।

মন্দিরের সামনের দেয়ালে বিভিন্ন অলংকরণ রয়েছে। প্রবেশপথের কপাটে ব্যবহৃত কাঠে প্যানেল খচিত রয়েছে। মন্দিরের অভ্যন্তরের প্রতিটি দেয়ালে ২টি করে কুলঙ্গি রয়েছে। কুলঙ্গিসমূহ একই পরিমাপের আকারে ছোট। পূর্ব ও পশ্চিম পাশের প্রবেশপথের কপাটও কাঠের তৈরি। তবে উত্তর দেয়ালের প্রবেশপথের কপাটটি পাথরের প্যানেলখচিত বলে প্রতীয়মান হয়েছে (?)। বাহির দেয়াল জুড়ে জীব-জন্তু ও লতাপাতার অলংকরণ রয়েছে। মন্দিরের ছাদে চারচালাবিশিষ্ট মঠ গম্বুজের (cloister dome) প্রতিফলন দেখা যায়। গম্বুজের দেয়ালে বিভিন্ন নকশায় অলংকৃত রয়েছে। মন্দিরটির ছাদে একই অলংকরণবিশিষ্ট ৯টি শিখর (finial) রয়েছে। যা মন্দিরটিকে প্রায়ই নবরত্নের রূপ পরিগ্রহ করিয়েছে (?)। মন্দিরটির ছাদের সামনের অংশে অলংকৃত রেলিং রয়েছে।

‘নড়াইল জমিদারদের পূর্বপুরুষ রূপরাম দত্তের পুত্র কালীশংকর রায় প্রতাপশালী নড়াইল জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা। কালীশংকর রায় নাটোরের জমিদার রাণী ভবানীর অনুগ্রহে নড়াইলে জমিদারির সূত্রপাত করেন। কালীশংকর নড়াইলের আদালতপুরের তালুক প্রথম ইজারা নেন। এরপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকালে তিনি তার জমিদারির সীমা আরও বৃদ্ধি করেন। অত্যাচার ও শোষণ করলেও নড়াইল জমিদারগণ কিছু জনকল্যাণমূলক কাজও করেছিলেন। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, নড়াইল কলেজিয়েট স্কুল, রাস্তাঘাট প্রভৃতি নড়াইল জমিদারদেরই প্রতিষ্ঠিত।

‘নড়াইল জমিদার পরিবারের অন্যতম ব্যক্তিত্ব রাম রতন রায়ের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫১ সালে বাংলাদেশে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে জমিদারদের বংশধরেরা দেশত্যাগ করে ভারতের কলকাতায় চলে যান। আর নড়াইল শহরের বিশাল বিশাল প্রাচীন প্রাসাদ, নাট্যমঞ্চ, কাচারি, সর্বমঙ্গলা মন্দিরসহ অন্যান্য মন্দির, মঠ, চিত্রা নদীর তীরবর্তী বাঁধাঘাট, ছোট-বড় পুকুর, দিঘি ও ফলের বাগান প্রভৃতি হল নড়াইল জমিদারদের নির্মিত কীর্তি।’১ [মো. শাহীন আলম]


তথ্যসূত্র :
১. হোসাইন, মহসিন, নড়াইল জেলা সমীক্ষা ও স্থান নাম, (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, মে ২০০১), পৃষ্ঠা-৫৪ – ৫৬।
২. নড়াইল জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ প্রতিবেদন, ২০১৭, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৯ – ৩৩।
৩. প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলাদেশ।


নড়াইল জমিদারদের কীর্তি সর্বমঙ্গলা মন্দির


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply