নড়াইলের স্থাপত্যিক ঐতিহ্য: গোবিন্দদেবের জোড়বাংলা মন্দির

বাংলাদেশে নড়াইল জেলার অন্যতম স্থাপত্যিক ঐতিহ্য গোবিন্দ দেবের জোড়বাংলা মন্দির। ইতিহাস ও জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, আনুমানিক ১৮ শতাব্দীতে মাগুরার রাজা সীতারাম রায়ের দেওয়ান জনৈক সরকার জমিদার এই জোড়বাংলা মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি বাঙ্গালী ঐতিহ্যের দো-চালা ঘরের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। এই মন্দির অনেকের কাছে কোটাকোল জোড়বাংলা মন্দির নামেও সুপরিচিত।
মানচিত্র: গোবিন্দদেবের জোড়বাংলা মন্দিরের অবস্থান।
ঐতিহ্যবাহী জোড়বাংলা মন্দিরটি নড়াইল জেলাধীন লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল নামক গ্রামে অবস্থিত। লোহাগড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭.৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে কোটাকোল গ্রামের অবস্থান। এ গ্রামের দিঘলিয়া-ইতনাগামী রাস্তা থেকে প্রায় ৬৫ মিটার উত্তর পাশে এবং মধুমতি নদীর পশ্চিম তীরে স্থাপত্য ঐতিহ্য এই জোড়বাংলা মন্দিরটি দেখা যায়।

আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ৯ মিটার ও প্রস্থ ৮.৫ মিটার। মন্দিরটি ভূমি থেকে প্রায় ১ মিটার উঁচু বেদীর উপরে অবস্থিত। এই মন্দির নির্মাণে পাতলা ইট ও চুন-চুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। দো-চালাবিশিষ্ট জোড়া ঘরের এই স্থাপনায় দুইটি কক্ষ রয়েছে। মন্দিরের সামনে রয়েছে ছাদহীন একটি বারান্দা। সামনের বারান্দা থেকে মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য তিনটি প্রবেশপথ দেখা যায়। গোথিক খিলানের এই প্রবেশপথগুলোতে বহু ভাজের নকশাসহ পোড়ামাটির ফলকে নানা ধরনের ফুল, লতাপাতা ও প্রাণীর চিত্র অঙ্কিত রয়েছে।
মন্দিরের পিছনের কক্ষটি হলো গর্ভগৃহ। সামনের কক্ষ থেকে এই গর্ভগৃহে প্রবেশের জন্য একটি প্রবেশপথ রয়েছে। এ প্রবেশপথটি দেখতে সামনের প্রবেশপথগুলোর মতই। গর্ভগৃহের উত্তর দেয়ালের মাঝামাঝি একটি মূর্তি রাখার প্রকোষ্ঠ ও বেদী রয়েছে। প্রকোষ্ঠটির দুই পাশে একটি করে কুলঙ্গি দেখা যায়। গর্ভগৃহের পূর্ব দেয়ালে আরও একটি প্রবেশপথ রয়েছে। মন্দিরের সামনের ও অভ্যন্তরের দেয়াল জুড়ে বহু লতা-পাতা, ফুল ও জীবজন্তুর অলংকরণযুক্ত পোড়ামাটির ফলক দেখা যায়। এছাড়া মন্দিরটির দো-চালার উপরে রয়েছে অলংকৃত চূড়া।
নড়াইল জেলার এ মন্দিরটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। যা বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত ও তত্ত্বাবধানে রয়েছে। [মো. শাহীন আলম]
নড়াইলের স্থাপত্যিক ঐতিহ্য
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL