বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জের দুর্গবেষ্টিত প্রাচীন পাকাবাড়ি

মেহেন্দিগঞ্জের দুর্গবেষ্টিত প্রাচীন পাকাবাড়ি | বরিশাল

বাংলাদেশের বরিশাল জেলাধীন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চর এককরিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ইয়ারবেগ গ্রামে দুর্গবেষ্টিত প্রাচীন পাকাবাড়ি অবস্থিত। বরিশাল জেলা সদর থেকে উত্তর-পূর্বকোণে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ বা স্পীডবোর্ডযোগে আঁকাবাঁকা নদী পথে প্রায় ৩০ কিলোমিটার গেলে পাতারহাট লঞ্চঘাট। এ লঞ্চঘাট থেকে ব্যাটারীচালিত রিক্সা বা বোরাকে চড়ে সড়কপথে প্রায় ২ কিলোমিটার উত্তর দিকে গেলে পাতারহাট বন্দর বাজার (মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদর)।

এ বন্দর বাজার (মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদর) থেকে ব্যাটারীচালিত রিক্সা বা বোরাকে চড়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার উত্তব-পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলে ইয়ার বেগস্থ কাশিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন দোকান। এ দোকানগুলো থেকে কাঁচা সরু রাস্তা ধরে আঁকাবাঁকা পথে প্রায় ৬০০-৭০০ মিটার এগিয়ে গেলে ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা এ প্রাচীন পাকা বাড়িটি দেখা যায়। চর এককরিয়ার দুর্গবেষ্টিত প্রাচীন পাকাবাড়িটির ভূস্থানাঙ্ক বা জিও কো-অর্ডিনেট (GeoCoordinate) হল 22°50’43.5″N 90°32’50.1″E (22.845410, 90.547240)।

চর এককরিয়ার দুর্গবেষ্টিত পাকাবাড়িতে বর্তমানে দোতলাবিশিষ্ট ১টি দালান (জনশ্রুত সিংহ দরজা/দুর্গের ফটক), বাড়ির ধ্বংসপ্রাপ্ত সীমানা প্রাচীর (জনশ্রুত দূর্গের প্রাচীর), বাড়ির পূর্বদিকে ১ টি দিঘী, ও ছোট-বড় ২ টি পুকুর রয়েছে।

সিংহ দরজা/দুর্গের ফটক: পূর্বমুখী সিংহ দরজাটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত। দোতলাবিশিষ্ট সিংহ দরজাটির নিচতলার দক্ষিণাংশে দুর্গের অন্দরমহলে প্রবেশের জন্য একটি মাত্র প্রবেশপথ রয়েছে। সরু এ প্রবেশপথের উত্তর পাশে লাগোয়া দোতলা মূল দালান। মূলত সরু প্রবেশপথযুক্ত এ দালানটিই হল জনশ্রুত পাক্কা বাড়ি/দালান। দালানটির নিচতলায় ৩টি কক্ষ রয়েছে। এ দোতলা দালানে প্রবেশের জন্য নিচতলার পশ্চিম দেয়ালে ২টি প্রবেশপথ রয়েছে। এ দালানের প্রতিটি প্রবেশপথের খিলান প্রায় শীর্ষচূড়াবিশিষ্ট (lencent)।

দোতলা আরোহণের জন্য দালানটির নিচতলার দক্ষিণপাশের কক্ষে ১টি সিঁড়ি রয়েছে। সিঁড়ির নিচে রয়েছে কথিত অন্ধকূপ। সিঁড়ি কোঠার দেয়ালে ছোট ও বড় ব্যাসের একাধিক ছিদ্র রয়েছে। ছিদ্রগুলো দেখে অনুমেয়, দুর্গবেষ্টিত এ বাড়িটির সুরক্ষায় নিয়োজিত নিরাপত্তাপ্রহরী এ ছিদ্র দিয়ে বাহিরের লোকজনকে পর্যবেক্ষণে রাখত। আরো অনুমেয় যে, এ ছিদ্র দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করা হত। এটির দোতলায়, নিচতলার আদলে ৩টি কক্ষ রয়েছে। এ দালানটি নির্মাণে চুন-সুরকি ও বিভিন্ন আকারের পাতলা ইট ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে সিংহ দরজাটি আস্তরহীন অবস্থায় রয়েছে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, খ্রিস্টীয় ১৬-১৭ শতকে দক্ষিণ শাহবাজপুর (বর্তমান ভোলা) ও উত্তর শাহবাজপুর (বর্তমান মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদী) এলাকায় মুঘল সাম্রাজের শাসন ছিল। আরো জানা যায়, এসময় পর্তুগিজ ও আরাকান জলদস্যুরা এ দুই জনপদে এক ভয়াবহ রাজত্ব কায়েম করেছিল। ধারণা করা হয়, এসময়ে মুঘল শাসকদের কোন প্রতিনিধি কিংবা পর্তুগিজ ও আরাকানরা চর এককরিয়ার দুর্গবেষ্টিত পাকাবাড়ি নির্মাণ করে। তবে স্থানীয়দের কারো কারো বক্তব্যে এ দূর্গবেষ্টিত বাড়িটি ফিরিঙ্গীদের বাড়ি বলে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

এ পাকাবাড়ি সংলগ্নে কোন মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি; যেমন- পুরাতন পাকা মসজিদ না থাকায় অনেকে এ বাড়িটিকে পর্তুগিজ কিংবা আরাকানদের স্থাপত্যকীর্তি বলে উল্লেখ করে থাকেন। আবার কেউ কেউ বাড়ি সংলগ্ন আনারসের বাগানের উপস্থিতকে যুক্তি হিসেবে বিবেচনা করে এ পাকাবাড়িটিকে পর্তুগিজদের নির্মিত স্থাপনা বলে দাবি করেন। এটি মুঘল না পর্তুগিজদের নির্মিত স্থাপত্যকীর্তি এ বিষয়টি উন্মোচনের জন্য অধিকতর প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এ প্রত্ননিদর্শনটি স্থানীয়ভাবে চরএককরিয়ার পাক্কাবাড়ি হিসেবে সুপরিচিত। [মো. শাহীন আলম]


বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জের প্রাচীন পাকাবাড়ি


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply