মাঝিগাছা-নন্দীর বাজারের প্রাচীন বাঈজি মসজিদ | কুমিল্লা

প্রাচীন বাঈজি মসজিদটি কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলাধীন শ্রীপুর গ্রামে অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এ মসজিদটি নটির মসজিদ নামেও সুপরিচিত। গোমতী নদীর উত্তর তীরে মাঝিগাছা-নন্দীর বাজার সড়ক ও বেড়ি বাধের সংযোগস্থলে মসজিদটি দেখা যায়।
প্রাচীন বাঈজি মসজিদটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হয়েছে। একগম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৬.৪ মিটার ও প্রস্থ ৫.১ মিটার। মসজিদের দেয়ালগুলো ৮২.৫ সেন্টিমিটার পুরু। মসজিদের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদটির সর্বমোট প্রবেশপথ হল ৩টি। মসজিদটি নির্মাণে পাতলা ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের প্রবেশপথগুলোর উচ্চতা ১.৮ মিটার ও প্রস্থ ৮২.৫ সেন্টিমিটার। মসজিদের অভ্যন্তরের পশ্চিম দেয়ালের একমাত্র মিহরাবের উপরে ও উভয় পাশে লতাপাতা ও বিভিন্ন অলংকরণ রয়েছে। পরিত্যক্ত মসজিদটির প্রাচীনত্ব এখনও অটুট রয়েছে।

স্থানীয় জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় ৪০০ বছরে আগে ত্রিপুরার মানিক্য রাজ্যের নুরজাহান নামক কথিত এক বাঈজি বা নতর্কী এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। আরো জানা যায়, গোমতী উত্তর পাড়ের মাঝিগাছা গ্রামে নুরজাহান, তার ছোট দুই বোন মোগরজান ও ফুলজান বসবাস করত। তাদের মা-বাবার পরিচয় জানা যায়নি। কিশোর বয়সে সাপে কামড়ালে নুরজাহানকে ভেলায় করে গোমতী নদীতে ভাঁসিয়ে দেয়া হয়। নদী থেকে খুঁজে পেয়ে ত্রিপুরার মহারাজার দরবারে নিয়ে চিকিৎসা করা হলে তিনি সুস্থ হন। ধীরে ধীরে নাচ-গান শিখে মহারাজার দরবারে সেরা বাঈজিতে পরিণত হন।
প্রায় ৩৫ বছর বাঈজি বা নর্তকী হিসেবে থাকার পর মধ্য বয়সে নুরজাহান ত্রিপুরার রাজার দরবার ছেড়ে নিজ গ্রাম মাঝিগাছায় ফিরে আসেন। ঐ সময় ত্রিপুরার মহারাজা বাঈজি নুরজাহানকে মাঝিগাছায় কয়েক একর জমি ও প্রচুর অর্থ ও স্বর্ণালংকার দান করেন। নুরজাহান নিজেকে জমিদারের বিধবা স্ত্রী পরিচয়ে মাঝিগাছায় বসবাস শুরু করেন। ঐ সময় নুরজাহান গ্রামের মানুষদের নানা রকম সহযোগিতা করতেন। এক সময় নুরজাহান নিজ খরচে এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যা বর্তমানে প্রাচীন বাঈজি বা নটির মসজিদ নামে পরিচিত। জনশ্রুত তথ্য অনুসারে বলা যায়, আনুমানিক খ্রিস্টীয় ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। [মো: শাহীন আলম]
তথ্যসূত্র:
১. সরেজমিনে পরিদর্শন।
২. প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়, কুমিল্লা।
প্রাচীন বাঈজি মসজিদ কুমিল্লার কোথায় অবস্থিত?
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL