বরিশালের প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তি: পঞ্চরত্নখ্যাত বড়দাকান্ত মিত্র মঠ

বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলাধীন গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের পূর্ব কোড়ালিয়া গ্রাম। এ গ্রামের কাউরিয়া বাজার থেকে প্রায় ৫০০ মিটার উত্তর দিকে কাউরিয়া-হরিনাথপুর সড়কের পশ্চিম পাশে বাবুর বাড়িতে বড়দাকান্ত মিত্র মঠটি অবস্থিত।
মানচিত্র: বড়দাকান্ত মিত্র মঠটির অবস্থান।
বড়দাকান্ত মিত্র মঠটিকে স্থানীয়ভাবে পঞ্চরত্নও বলা হয়ে থাকে। মঠটির দোতলার সামনের দেয়ালে ‘সন ১৩০৬’ উৎকীর্ণ রয়েছে। বাংলা উৎকীর্ণ এ লেখা অনুযায়ী, প্রায় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে মঠটি নির্মিত হয় বলে অনুমেয়। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তৎকালীন জমিদার বড়দাকান্ত মিত্র এ মঠটি নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য যে, ১ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেট অনুযায়ী, এ মঠটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি।

দক্ষিণমুখী এ মঠটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হয়। মঠটির পূর্ব-পশ্চিমে দৈর্ঘ্য ১৩.২ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে প্রস্থ ১২.১৫ মিটার। দোতলাবিশিষ্ট এ মঠটির দেয়ালগুলো ৬০ সে.মি. চওড়া। মঠটির নিচতলার পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দেয়ালে তিনটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। উত্তর দেয়ালে পাঁচটি জানালা এবং পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দেয়ালে দু’টি করে জানালা রয়েছে। নিচতলার প্রবেশপথ ও জানালাগুলো সমতল খিলানবিশিষ্ট (flat arched)।
নিচতলার অভ্যন্তরের মাঝখানে বর্গাকার দু’টি কক্ষ এবং উত্তরাংশে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা একটি কক্ষ রয়েছে। মাঝখানের বর্গাকার কক্ষদ্বয়ের প্রতিটিতে একটি করে প্রবেশপথ এবং দু’টি করে জানালা রয়েছে। উত্তরাংশের লম্বা কক্ষটিতে একটি প্রবেশপথ এবং সাতটি জানালা রয়েছে। ইট ও চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত এ মঠের নিচতলা সংস্কার করে বর্তমানে সিমেন্টের আস্তর ও হলুদ বর্ণের রং করা হয়েছে।

দোতলায় উঠার জন্য মঠটির দক্ষিণ দিক দিয়ে ২২ ধাপের একটি সিড়িঁ রয়েছে। সিড়িঁটি দু’টি অর্ধবৃত্তাকার খিলানের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিচতলার মাঝখানের কক্ষদ্বয়ের ঠিক বরাবর উপরে দোতলায় বর্গাকার দু’টি কক্ষ রয়েছে। একই আদলে নির্মিত এ কক্ষদ্বয়ের প্রতিটির দক্ষিণ দেয়ালে একটি প্রবেশপথ ও ছোট দু’টি জানালা এবং পূর্ব ও পশ্চিম দেয়ালে একটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। প্রবেশপথ ও জানালাগুলো প্রায় সেগমেন্টাল খিলানবিশিষ্ট (segmental arched)। সামনের দক্ষিণ দেয়ালে বেলনাকার জোড়া কলাম(column) নকশা ও উপরের প্যানেলে(panel) ফুল ও লতাপাতার অলংকরণ রয়েছে।

দোতলার কক্ষ দু’টির উপরে একটি করে বড় আকারের গম্বুজ রয়েছে। বড় গম্বুজের চারকোণে চারটি করে ছোট গম্বুজ রয়েছে। ষড়ভুজাকার শিখরবিশিষ্ট (hexagonal pyramid) বড় গম্বুজ দু’টির উপরে একটি করে অলংকৃত শীর্ষচূড়া (finial) রয়েছে। চারকোণের ছোট গম্বুজগুলো চতুর্ভুজাকার শিখরবিশিষ্ট (square based pyramid) বা চৌচালা। ছোট গম্বুজগুলোর উপরেও একটি করে অলংকৃত শীর্ষচূড়া (finial) রয়েছে। ছাদের উপরে চারকোণে চারটি এবং মধ্যস্থলে একটি গম্বুজ বা চূড়া থাকার কারণে সম্ভবত এ মঠটিকে পঞ্চরত্ন বলা হয়।

দোতলার কক্ষ দু’টির অভ্যন্তরের উত্তর দেয়ালে একটি করে কুলঙ্গি রয়েছে। বড়গম্বুজ দু’টির অভ্যন্তরের ছাদ অর্ধবৃত্তাকার। গম্বুজের অভ্যন্তরের ছাদের ঠিক মাঝখানে ফুলের অলংকরণ রয়েছে। গম্বুজের ড্রাম (drum) অষ্টভুজাকার (octagonal)। ব্রিটিশ ঔপ-নিবেশিক শাসন আমলে নির্মিত এ মঠটি দেখার জন্য প্রচুর দর্শনার্থী সমাগম হয়ে থাকে। [মো. শাহীন আলম]
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL
বরিশালের প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তি