বাংলাদেশে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: পর্যটনের অপার সম্ভাবনা
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি দেশ। এ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ধরনের ঐতিহ্য। এসব ঐতিহ্যের মধ্য থেকে কয়েক শতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি বা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করে জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভূক্ত করেছে। সংরক্ষিত এ তালিকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পুরাকীর্তি বা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এগুলো হলো: (১) পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ, নওগাঁ; এবং (২) বাগেরহাট ঐতিহাসিক মসজিদের শহর।
(১) পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ (Ruins of the Buddhist Vihara at Paharpur): বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় বৌদ্ধ বিহারের এ ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। ৮ম-৯ম শতাব্দীতে বরেন্দ্রী-মগধের রাজা ধর্মপাল বিক্রমশীলা বিহারটি নির্মাণ করেন। ১৭৭ কক্ষবিশিষ্ট চতুর্ভুজাকার বিহারটির কেন্দ্রে একটি মন্দিরসহ কিছু সংখ্যক প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে।
(২) বাগেরহাট ঐতিহাসিক মসজিদের শহর (Historic Mosque City of Bagerhat): বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলায় ঐতিহাসিক মসজিদের শহর অবস্থিত। এখানে মুসলিম স্থাপত্যে অনন্য নিদর্শন ষাটগম্বুজ মসজিদসহ এক ও একাধিক গম্বুজবিশিষ্ট কিছু সংখ্যক প্রাচীন মসজিদ, পাকা সড়ক, স্থাপনা ও বড় বড় দিঘী রয়েছে। পনেরো শতাব্দীতে বাংলার সুলতান মাহমুদ শাহ কর্তৃক গভর্ণর হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তুর্কি সেনাপতি উলুগ খান জাহান সুন্দরবন এলাকায় এসে খলিফাতাবাদ নামক শহর প্রতিষ্ঠা করেন এবং ষাটগম্বুজ মসজিদসহ একাধিক মসজিদ নির্মাণ করেন।
এছাড়া, বাংলাদেশের (১) লালমাই-ময়নামতির প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, (২) বাংলাদেশের ডেল্টাইক ল্যান্ডস্কেপের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, (৩) মহাস্থান ও করতোয়া নদীর সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ, (৪) বাংলাদেশের মুঘল মসজিদ, (৫) বাংলাদেশের মুঘল ও ঔপনিবেশিক মন্দির, (৬) মুজহারুল ইসলামের স্থাপত্যকর্ম: দক্ষিণ এশিয়ায় আধুনিক আন্দোলনে একটি অসামান্য অবদান, এবং (৭) ঢাকার নদীজাত ভূখণ্ডে মুঘল দুর্গ; নামক এরূপ ৭টি একক ও গুচ্ছ পুরাকীর্তি বা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের নাম ইউনেস্কো-এর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সম্ভাব্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
উল্লেখিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সম্ভাব্য বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলো বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে অপার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বহু পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এসব প্রত্ন-পর্যটন স্থান থেকে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। জানা যায়, বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত লালমাই-ময়নামতির জনপ্রিয় শালবন বিহার নামক প্রত্নস্থান ও ময়নামতি জাদুঘরে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ লক্ষ পর্যটক সমাগম হয়ে থাকে। যা গড়ে দৈনিক প্রায় ১ হাজার জনের মত পর্যটক। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে সরকারের প্রায় ১.৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। দেশের অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দেশের সামগ্রিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভালো থাকলে পর্যটক আগমনের সংখ্যা এবং এ খাতে রাজস্ব আয় পূর্বের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার দেশের পুরাকীর্তি বা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রক্ষায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রত্ন-পর্যটনকে আরও অগ্রাধিকার দেয়া, এখন সময়ের দাবি। প্রত্ন-পর্যটন বিকাশের ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নজিরকে কাজে লাগিয়ে পুরাকীর্তি বা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর পরিকল্পিত সুরক্ষা ও সংস্কার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাহলে হয়তো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে পুরাকীর্তি বা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে অপার সম্ভাবনা হয়ে উঠতে পারে। [মো: শাহীন আলম]
Image Source: wikipedia.org
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL
বাংলাদেশে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: অপ্রতিরোধ্য পর্যটনের সম্ভাবনা