বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের মুসলিম পুরাকীর্তি: পটুয়াখালীর মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ
মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। পনেরো শতাব্দীতে সুলতান রুকনুদ্দিন বারবক শাহ-এর শাসনামলে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। অন্যান্য পুরাকীর্তির নির্মাণকাল বিচারে পটুয়াখালী জেলার এ মসজিদ প্রাচীন বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ খ্যাত বরিশাল অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য কীর্তি বলে মনে করা হয়।
মসজিদটিতে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, বাংলার সুলতান রুকুন উদ্দীন বারবক শাহ-এর রাজত্বকালে (১৪৫৯ – ১৪৭৬ অব্দে) খান-উল মোয়াজ্জাম আজাইল খা এ মসজিদ নির্মাণ করেন। আরো জানা যায়, মসজিদের শিলালিপিটি বর্তমানে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে সংরক্ষিত রয়েছে। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকারের কমিশনার R. H. Reili এ মসজিদ আবিষ্কার করেন।
মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদের অবস্থান।
এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদ আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হয়েছে। দেয়ালসহ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার ও প্রস্থ ১০.৫ মিটার। ২ মিটার চওড়া দেয়ালের এ মসজিদের সামনে পূর্ব দিকে একটি বারান্দা রয়েছে। পাতলা ইট দিয়ে নির্মিত এ মসজিদের পূর্ব দেয়ালে ৩টি প্রবেশপথ দেখা যায়। বারান্দা থেকে মসজিদের পশ্চিম দিকের মূল প্রার্থনা কক্ষে প্রবেশের জন্য আরো ৩টি প্রবেশপথ রয়েছে। বর্তমানে মসজিদের পূর্ব দেয়ালের মাঝখানের প্রবেশপথটি রেখে বাকি সব প্রবেশপথ লোহার গ্রিল দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মসজিদের প্রবেশপথের খিলানগুলো শিখরাকার বা গোথিক ধরনের।
মসজিদের অভ্যন্তরে পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মিহরাব রয়েছে। বহুভাজের খিলান নকশার এ মিহরাবগুলোতে পোড়ামাটির অলংকৃত ফলক দেখা যায়। দেয়ালের মাঝখানের মিহরাবটি আকারে বড়। এর অভ্যন্তর দেয়ালগুলো লতাপাতা ও ফুলের অলংকৃত পোড়ামাটির ফলকে সজ্জিত রয়েছে। মসজিদটির বাহির দেয়ালে ৬টি অষ্টভূজাকার অলংকৃত বুরুজ দেখা যায়। মসজিদটির ছাদের একমাত্র গম্বুজটি দেখতে অর্ধ বৃত্তাকার।
এ মসজিদের গম্বুজ, প্রবেশপথ ও বুরুজসহ সামগ্রিক নির্মাণশৈলীর সাথে বাগেরহাটের মধ্যযুগীয় খলিফাতাবাদ শহরে নির্মিত মসজিদগুলোর স্থাপত্যশৈলী এবং বরিশালের গৌরনদীর কসবা মসজিদের স্থাপত্যশৈলী সাথে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদটি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলাধীন মজিদবাড়িয়া নামক গ্রামে অবস্থিত। ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালী সদর চৌমাথা থেকে প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে পায়রা নদীর খেয়াঘাট। এ খেয়াঘাট পার হয়ে সড়কপথে প্রায় ৬ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে সুবিদখালী নামক বাজার। এ বাজার থেকে আঁকাবাঁকা পথ ধরে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে মজিদবাড়িয়া গ্রামে ঐতিহাসিক এ মসজিদ দেখা যায়।
জানা যায়, ১৯১৩ সালে ভারতের পুরাতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ মসজিদটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে। এটি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। যা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত এবং তত্ত্বাবধানে রয়েছে। [মো. শাহীন আলম]
তথ্যসূত্র:
১. হোসেন, মো: মোশারফ, উৎসের সন্ধানে চন্দ্রদ্বীপ বাকলা বরিশাল, (২০১০), ঢাকা, পৃষ্ঠা ৮০-৮১।
২. আহম্মেদ, সিরাজ উদ্দিন, বরিশাল বিভাগের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, ভাস্কর প্রকাশনী, (২০০৩), বরিশাল-ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৭৪-১৭৫।
বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের মুসলিম পুরাকীর্তি: পটুয়াখালীর মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL