বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি | কুষ্টিয়া

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি | কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া জেলাধীন কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ২৬ নং কসবা মৌজায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি অবস্থিত। রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির সন্নিকটবর্তী দূরত্বে উত্তর পাশ দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহমান রয়েছে। পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত রবীন্দ্র কুঠিবাড়িটির ভূ-স্থানাঙ্ক (geo-coordinate) হল 23°55’11.1″N 89°13’12.0″E (23.919760, 89.220009)

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি প্রায় পিড়ামিড আকৃতির একটি সুদৃশ্য বাংলোবাড়ি। এ বাড়িটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ইট, চুন, সুড়কি, কাঠ এবং অ্যাসবেস্টস। রবীন্দ্র কুঠিবাড়িটির দৈর্ঘ্য ১৯.২০ মিটার এবং প্রস্থ ১৭.৬০ মিটার। কুঠি বাড়ির চারপাশ পরিবেষ্টিত প্রাচীরটি ঢেউয়ের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাচীরটি উত্তর-দক্ষিণে ৭৮ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৬১ মিটার। রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে ভারতের জন্মু-কাশ্মীরধীন শ্রীনগরের শাহ-ই-হামদান মসজিদের (খানকাহ্‌-ই-মউলা) স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন দেখা যায়।

Mausoleum of Shah e Hamadan 01.JPG
ভারতের জন্মু-কাশ্মীরধীন শ্রীনগরের শাহ-ই-হামদান মসজিদের (খানকাহ্‌-ই-মউলা)

রবীন্দ্র কুঠিবাড়িটি তিন তলাবিশিষ্ট। এটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ৮টি করে কক্ষ। এটির তৃতীয় তলায় রয়েছে কেবল ২টি কক্ষ। জানা যায় যে, তৃতীয় তলার নির্জন কক্ষটি রবি ঠাকুর গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও কাব্য লেখালেখির প্রিয় স্থান হিসেবে ব্যবহার করতেন। কবি এ কক্ষে বসে পদ্মা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। এ কক্ষটিতে বসে বিশ্বকবি গীতাঞ্জলি, ছিন্নপত্র, সোনারতরী প্রভৃতি স্মৃতিবহ কবিতা, গান, ছোট গল্প, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের  উল্লেখযোগ্য অংশ রচনা করেছেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষগণ নাটোরের জমিদারদের কাছ থেকে শিলাইদহের জমিদারি ক্রয় করে। জমিদার হিসেবে রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর জমিদারি পরিচালনাকালে শিলাইদহে তিন তলাবিশিষ্ট একটি কাঠের বাড়ি নির্মাণ করেন। আর সে বাড়িটি কুঠিবাড়ি নামে পরিচিতি পায়। জানা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা কর্তৃক নির্মিত সে কুঠিবাড়িটি পদ্মা নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৮৯২ অব্দে শিলাইদহে বিদ্যমান এ কুঠিবাড়িটি নির্মাণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র নীতিন্দ্রনাথ ঠাকুর। আরও জানা যায় যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯২ থেকে ১৯০১ অব্দ পর্যন্ত এক দশককাল এ কুঠিবাড়িতে বাস করেন এবং জমিদারি পরিচালনা করেন। যা পরবর্তীতে সকলের কাছে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি নামে সুপরিচিত হয়।

রবীন্দ্র কুঠিবাড়িটিকে বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। ১৯৬১ অব্দে কুঠিবাড়িটিকে একটি সংরক্ষিত পুরার্কীতি ঘোষণা করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে কুঠিবাড়ির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন একটি স্মৃতি জাদুঘর। রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি নামক এ জাদুঘরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশব-কৈশোর থেকে বার্ধক্যকালের বিভিন্ন দূর্লভ আলোকচিত্র এবং ব্যবহার্য জিনিসপত্র প্রদর্শন করা হয়। [মো. শাহীন আলম]


শাহ-ই-হামদান মসজিদের আলোকচিত্র সূত্র: Khanqah-e-Moula


কুষ্টিয়ায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


Leave a Reply