বিশ্ব ঐতিহ্য: জামের মিনার | আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশের শাহরাক জেলায় জামের মিনার ও প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। এ বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটি পশ্চিম আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ীয়া এলাকায় এবং সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১,৯০০ মিটার উঁচুতে হারিরুদ নদীর উপত্যকায় অবস্থিত। জামের মিনার ও প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষটির ভূ-স্থানাঙ্ক বা জিও কো-অর্ডিনেট (GeoCoordinate) হল 34°23’47.1″N 64°30’57.2″E (34.396420, 64.515890)।
পোড়ামাটির ইট দিয়ে নির্মিত ৬৫ মিটার উঁচু জামের মিনার ১টি মনোমুগ্ধকর ও উঁচু কাঠামো। অষ্টভূজাকার ভূমি পরিকল্পনার ভিত্তির উপরে নির্মিত এ মিনারটি ব্যাস ৯ মিটার। মিটারটি ভূমি থেকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার পর বৃত্তাকার পরিকল্পনায় কয়েকটি ধাপে ক্রমশ সরু হয়ে উর্ধ্বে উত্থিত হয়েছে। মিনারটি ইট, আস্তর এবং উন্নত টালির ব্যবহারের জন্য খুবই প্রসিদ্ধ। মিনারের বাহির দেয়াল জুড়ে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি; যেমন – কুফিক, নাস্খ; ফুলেল নকশা; বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা এবং কুরআনের আয়াত খোদাই করা রয়েছে। উপরে আরোহণের জন্য মিনারটির অভ্যন্তরে সিঁড়ি রয়েছে। এ প্রত্নস্থানে বিদ্যমান ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে কুশকাক পাহাড়ের একাদশ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর হিব্রু শিলালিপিসহ একাধিক পাথর এবং হারিরুদ নদীর তীরের ঘুরিদ বংশের আবাসনের প্রাসাদ ও স্তম্ভের নির্দশন।
একাদশ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে স্থাপত্যিক কাঠামোর প্রকৌশলগত ব্যতিক্রমী শৈল্পিক সৃজনশীলতা এবং দক্ষতার প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্বের কয়েকটি সু-সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে জামের মিনারটি অন্যতম। এটির স্থাপত্য ও অলঙ্করণগুলো শিল্পের ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে অদ্বিতীয় এবং অসামান্য (outstanding), যা এ অঞ্চলের পরবর্তী স্থাপত্যিক কাঠামো নির্মাণের উপর খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। এ চমকপ্রদ উঁচু মিনারটি মধ্য এশিয়ার ইসলামিক আমলের স্থাপত্য ও অলঙ্করণের এক অসামান্য উদাহরণ (outstanding example)। এ স্থাপত্যশিল্পের প্রভাব ভারত পর্যন্ত দেখা যায়; আর দিল্লির কুতুব মিনার হল তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে মহান ঘুরিদ (ঘোর) সুলতান গিয়াস-ওদ-দ্বীন (১১৫৩-১২০৩ খ্রি.) কর্তৃক জামের মিনার নির্মাণ করা হয়। ধারণা করা হয় যে, প্রাচীন শহর ফিরুজকুহ ছিল ঘুরিদ রাজবংশের আবাস ভূমি। আরও মনে করা হয় যে, এটি ঘুরিদ (ঘোর) রাজবংশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিল। ২০০২ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক এ প্রত্নস্থানটিকে জামের মিনার ও প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ নামে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভূক্ত করা হয়।
বিশ্ব ঐতিহ্য নির্বাচনের মানদণ্ড (the criteria for selection) ২য়, তয় ও ৪র্থ (ii, iii & iv) এর ভিত্তিতে অসামান্য সার্বজনীন মান (outstanding universal value) পূরণ করায় ইউনেস্কো কর্তৃক এ প্রত্নস্থানটিকে জামের মিনার ও প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ [Minaret and Archaeological Remains of Jam] নামে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভূক্ত করা হয়। নির্বাচনের মানদণ্ড-এর ভিত্তিতে এ প্রত্নস্থানটি যে সব অসামান্য সার্বজনীন মান (outstanding universal value) পূরণ করে, সে সব নিম্নে তুলে ধরা হল –
মানদণ্ড (criteria) ২য় (ii) : জামের মিনারের উদ্ভাবনী স্থাপত্য এবং অলংকরণ ভারতীয় উপ-মহাদেশে এবং এর বাইরে শিল্প ও স্থাপত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
মানদণ্ড (criteria) ৩য় (iii) : জামের মিনার এবং এর সাথে সম্পর্কিত প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষগুলো ঘুরিদ (ঘোর) সভ্যতার শক্তি এবং গুণমানের ব্যতিক্রমী সাক্ষ্য হিসেবে প্রমাণ বহন করে; যা দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এ অঞ্চলটিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
মানদণ্ড (criteria) ৪র্থ (iv) : এ মিনার এ অঞ্চলটিতে ইসলামী স্থাপত্য ও অলঙ্করণের এক অসামান্য (outstanding) উদাহরণ এবং যা আরও বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। [মো. শাহীন আলম]
Reference: Minaret and Archaeological Remains of Jam
image source: World Heritage Center
আফগানিস্তানের জামের মিনার
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL
Click for watching Video: