বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: আগ্রা দুর্গ | ভারত
আগ্রা দুর্গ [Agra Fort] হল একটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যা ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের অন্তর্গত আগ্রা জেলায় অবস্থিত। আগ্রা জেলা শহর থেকে পূর্ব দিকে এবং তাজমহল থেকে আনুমানিক ২.৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে যমুনা নদীর পশ্চিম তীরবর্তী স্থানে এ বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ দেখা যায়। ভারতের আগ্রা দুর্গ নামক বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-এর ভূ-স্থানাঙ্ক বা জিও কো-অর্ডিনেট (GeoCoordinate) হল 27°10’47.4″N 78°01’18.1″E (27.179844, 78.021696)।
তাজমহল সংলগ্ন আগ্রা দুর্গ বা আগ্রার লালকেল্লাটি ভারতে অবস্থিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুঘল স্থাপনা। এটি হল মুঘল শাসকদের রাজকীয় শহর, যার চারিদিক পরিবেষ্টিত রয়েছে ২.৫ কিলোমিটার পরিমাপবিশিষ্ট দীর্ঘ দেয়াল। সুউচ্চ, চওড়া, ও শক্তিশালী এ পরিবেষ্টিত দেয়াল নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে লাল বেলে পাথর। দুর্গের এ সুরক্ষা দেয়ালটিতে মেরনল (Merlon)-এর নকশা রয়েছে। দুর্গটির দক্ষিণ দিকে অমর সিংহ গেইট এবং পশ্চিম দিকে দিল্লী গেইট নামক প্রবেশপথ রয়েছে। দুর্গের অভ্যন্তরে রয়েছে অনেক রূপকথার প্রাসাদ।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল – জাহাঙ্গীর প্রাসাদ, ও শাহজাহান নির্মিত খাস মহল; শ্রোতা হল (audience halls), যেমন – দেওয়ান-ই-খাস ও দেওয়ান-ই-আম; এবং মতি মসজিদ ও নাগিনা মসজিদ নামক নান্দনিক ২টি মসজিদ। দুর্গের অভ্যন্তরে আরও রয়েছে আঙ্গুরি বাগ, শীশ মহল, শাহী বুৰ্জ (অষ্টভূজাকৃতির মিনার) প্রভৃতি ইমারত। দুর্গটির অভ্যন্তরে ইটের গাঁথুনি এবং বাহিরের অংশে বেলেপাথরের আস্তরণ দেখা যায়। আগ্রা দুর্গের এ স্থাপনাসমূহে ভারতীয় শিল্পকলা এবং তিমুরিদ পারসীয় শিল্পকলা’র সংমিশ্ৰণ পরিলক্ষিত হয়।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে, আগ্রা দুর্গটির অধিকাংশই ১৬ থেকে ১৮ শতাব্দীর মধ্যবৰ্তী সময়ে নির্মিত হয়েছে। তবে সেখানে ১১ শতাব্দীতে নির্মিত ১টি প্রাচীন দুর্গের অবস্থান ছিল বলে জানা যায়। আরও জানা যায়, ১৪৭৫ সালে আগ্রা দুর্গটি ছিল বাদল সিং নামক জনৈক রাজা কর্তৃক নির্মিত ১টি সামরিক দুর্গ। তখন ইট দিয়ে নির্মিত এ দুর্গটির নাম ছিল বাদলগড়।
সুলতান সিকান্দার লোদি (১৪৮৮ – ১৫১৭ সালে) দিল্লী থেকে তার রাজধানী আগ্রায় স্থানান্তর করেন। এরপর থেকে আগ্রা দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। সিকান্দার লোদি রাজকীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনাকালে আগ্রা দুর্গে বেশ কিছু ইমারত ও ইদারা নির্মাণ করে ছিলেন। জানা যায়, ১৫২৬ সালে দিল্লী জয়ের পর সম্রাট বাবর আগ্রা দুর্গে অবস্থানকালে এখানে সিঁড়িবিশিষ্ট ১টি ইদারা নির্মাণ করেন।
১৫৫৮ সালে সম্রাট আকবর পুনরায় দিল্লী থেকে আগ্রায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। আকবর রাজাস্থানের আরাউলি থেকে সংগৃহীত বেলেপাথর দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আগ্রা দুর্গটি সংস্কার কাজ শুরু করেন। জানা যায়, প্রায় ৪ হাজার কর্মী ৮ বছর শ্রম দিয়ে ১৫৭৩ সালের দিকে আগ্রা দুর্গের সংস্কারসহ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে। সম্রাট আকবরের পৌত্র সম্রাট শাহজাহানের শাসন আমলে মূলতঃ আগ্রা দুর্গটির বর্তমানের রূপ লাভ করে। জানা যায়, সম্রাট শাহজাহান লাল বর্ণের বেলেপাথরের স্থাপনার চেয়ে শ্বেত বর্ণের পাথর দিয়ে নির্মিত স্থাপনা বেশি পছন্দ করতেন।
এরপরে বিভিন্ন সময়ে মারাঠাসহ বিভিন্ন শাসক কর্তৃক আগ্রা দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নেন। ১৭৬১ সালে আহমেদ শাহ আবদালি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজিত করেন এবং আগ্রা দুর্গের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় এক দশক তাদের দখলে রাখেন। পরবর্তীকালে এ দুর্গটি ব্রিটিশদের দখলে আসে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে আগ্রা দুর্গে দেশীয় সিপাহী এবং ব্রিটিশ সেনাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
বিশ্ব ঐতিহ্য নির্বাচনের মানদণ্ডের ৩য় (iii) এর ভিত্তিতে অসামান্য সার্বজনীন মান (outstanding universal value) পূরণ করায় এ ঐতিহ্যবাহী স্থানটিকে ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয়।
বিশ্ব ঐতিহ্য নির্বাচনের মানদণ্ড (the criteria for selection) ৩য় (iii) এর ভিত্তিতে অসামান্য সার্বজনীন মান (outstanding universal value) পূরণ করায় ইউনেস্কো কর্তৃক ভারতের আগ্রা দুর্গ বা আগ্রা লাল কেল্লা (Agra Fort) নামক এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভূক্ত করা হয়। নির্বাচনের মানদণ্ড-এর ভিত্তিতে এ ঐতিহ্য স্থানটি যে অসামান্য সার্বজনীন মান (outstanding universal value) পূরণ করে, তা নিম্নে তুলে ধরা হল –
মানদণ্ড (criteria) ৩য় (iii) : আগ্রা দুর্গ বা আগ্রা লাল কেল্লাটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের (cultural heritage) একটি অনন্য (unique) বা অন্তত ব্যতিক্রমী সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। [মো. শাহীন আলম]
Reference:
1. Agra Fort
2. আগ্রা দুর্গ
image source: World Heritage Centre
ভারতের বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: আগ্রা দুর্গ
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL