মনসা | Manasa
সাপ পুজার কথা প্রাচীন মেসোপটমিয়া, মিশরীয়, গ্রীক, ফিনিশীয়, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, প্রভৃতির সভ্যতায় জানা যায়। পেঁচানো দুটি সাপের প্রতীক খ্রিস্টপূর্ব ৩,৫০০ থেকে ৩,০০০ অব্দের সুমেরীয় শিল্পকলার নিদর্শনে উপস্থাপনা দেখা যায়। সাপ এবং ঈগল মিশরের ফারাওদের প্রতীক ছিল বলে জানা যায়। হরপ্পা সভ্যতার সীলমোহর-এ সাপ-মানবের উপস্থিতি ছিল বলে জানা যায়। মধ্যযুগের লোককাহিনীর মনসা মঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র ‘মনসা’ বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় সাপের দেবী।
আরও জানা যায় যে, হিন্দু সম্প্রদায় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে দেবী মনসার পুজা পালন করে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে সাপের বিচরণ বেড়ে যায়। তাই সাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভক্তকূল মনসা দেবীর আশ্রয় প্রার্থনা করে।
মনসার উৎপত্তি বিষয়ে পুরাণ এবং মঙ্গলকাব্যে দু’ধরনের কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। পুরাণে উল্লেখ রয়েছে যে, ব্রহ্মার নির্দেশ মোতাবেক কশ্যপ মুনি সাপের বিষনাশক মন্ত্র রচনাকালে ধ্যান মগ্ন অবস্থায় মন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা দেবী চলে আসেন। তার (কশ্যপ মুনি) মন থেকে এ দেবীর আগমন ঘটে বলে নাম দেয়া হয় ‘মনসা’। পরবর্তীতে মনসাকে জরৎকারু নামক মুনির সাথে বিয়ে দেয়া হয়। অপরদিকে, মনসা ও চাঁদ সওদাগরকে কেন্দ্র করে মঙ্গলকাব্যের কাহিনী ছন্দোবদ্ধ হয়েছে।
মঙ্গলকাব্যে মনসাকে শিবের কন্যা হিসেবেও দেখানো হয়েছে। বাংলায় এ শিব হলেন এক অতিসাধারণ হতদরিদ্র দেবতা। যিনি কুঁড়ের ঘরে বাস করতেন। যার সাথে ত্রিশূলধারী পৌরাণিক শিবের অনেক পার্থক্য রয়েছে বলে জানা যায়। এ শিব ‘গোসাই’ এবং ‘প্রভু’ হিসেবে বাংলায় সাধারণের কাছে আপনজন ছিলেন। যার প্রতীক ছিল লাঙল। মনসা মঙ্গল কাব্যের কোনো কোনো স্থানে মনসার আরেক নাম ‘সিদ্ধযোগিনী’।
দেশের বিভিন্ন স্থানে পাথর, ব্রোঞ্জ এবং পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকারের মনসা ভাস্কর্য খুঁজে পাওয়া যায়। ভাস্কর্যগুলোর অধিকাংশ চার বা দুই হাতবিশিষ্ট। সাধারণত এসব মনসা ভাস্কর্যের একপাশে স্বামী জরৎকারু এবং অপরপাশে ভাই ও নাগরাজ বাসুকি, কখনও কোলে সন্তান আস্তিককে দেখা যায়। মাথায় সাতটি সাপের ফনাযুক্ত মুকুট থাকে। চার হাতবিশিষ্ট মনসার উপরের দুই হাতে পানপাতা এবং নিচের ডান হাতে ফলাঞ্চলি হস্ত ও বাম হাতে সন্তান আস্তিক। কোনো কোনো ভাস্কর্যে ব্যতিক্রমও দেখা যায়।
বাংলাদেশে মনসার যে সব পাথর ও ধাতব ভাস্কর্য খুঁজে পাওয়া যায়, এদের প্রায় সবগুলোই ১৩-১৪ শতাব্দীর পূর্ববর্তী সময়ের বলে জানা যায়। এর পরবর্তী সময়ে মনসা ভাস্কর্য তৈরির রীতিতে পরিবর্তন আসে। তখন পাথর ও ধাতবের পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে পোড়ামাটির মনসা ভাস্কর্যের প্রচলন শুরু হয়। [মো: শাহীন আলম]
সহায়িকা: মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া, মনসা, bn.banglapedia.org
Image: Manasa, Period: 11th century CE, Pala period statue from Bengal.
মনসা ভাস্কর্য কি?
Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL