মাটির উপাদান | Soil Components

মাটি উৎপত্তির ধাপ, মাটির উপাদান | Soil Components

চিত্র-১: মাটি উৎপত্তির ধাপসমূহ।

মাটির উপাদান | Soil Components

(খ) জৈব উপাদান (organic materials) : উদ্ভিজ এবং প্রাণীজ উৎসের বিয়োজিত এবং অবিয়োজিত যে সব পদার্থ মাটির মধ্যে মিশ্রিত অবস্থায় রয়েছে, সে সব পদার্থকে মাটির জৈব উপাদান বা পদার্থ বলে। মাটির মধ্যে এ জৈব পদার্থের পরিমাণ শতকরা প্রায় ৫ ভাগ মাত্র। সাধারণত বিভিন্ন উৎস থেকে মাটিতে এ জৈব পদার্থের আগমন ঘটে। তবে মাটির এ জৈব পদার্থের প্রধান উৎস হল উদ্ভিদজাত দ্রব্য।

উৎসের বিভিন্নতার কারণে মাটির জৈব উপাদানকে আবর্জনা পঁচা সার, শস্যের অবশিষ্টাংশ, মৃত জীবজন্তর জৈব সার, সবুজসার, খামারজাত সার, প্রভৃতি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। মাটির জৈব উপাদানগুলো মূলতঃ উদ্ভিজ এবং প্রাণীজ উৎস থেকে আগত। জৈব উপাদানগুলোই সাধারণত মাটির নাইট্রোজেনের উৎস। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীব মাটির অভ্যন্তরের উদ্ভিজ এবং প্রাণীজ উপাদানগুলোকে পরিবর্তিত (decomposed) করে মাটিতে নাইট্রোজেন মিশ্রিত করে। এসব জীবের মধ্যে কিছু কিছু জীব আবার বায়ু থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির সাথে যুক্ত করে।

উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় উদ্ভিজ ও প্রাণীজ উৎসের জৈব উপাদান দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে পরিণত হয়। অপরদিকে স্বল্প তাপমাত্রায় এসব জৈব উপাদান ধীর গতিতে পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে পরিণত হয়। এ কারণেই অধিক শীতবিশিষ্ট অঞ্চলে জৈব উপাদানের পরিবর্তন খুব ধীর গতিতে হয়ে থাকে। পরিবর্তন বা পচন প্রক্রিয়ার প্রাথমিক অবস্থায় জৈব পদার্থগুলোকে মাটির সাথে কোষ (tissue) বা তন্তু আকারে দেখা যায়। সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে এ কোষ (tissue) বা তন্তুগুলো  ছোট ছোট অনুতে বিভাজিত হয়।

অবশেষে হিউমাস (humus) বা পঁচা সারে পরিণত হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। এ হিউমাস (humus) বা পঁচা সার থেকে উদ্ভিদ খাদ্য হিসেবে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজেন ও ফসফরাস গ্রহণ করে। ছোট ছোট জৈব পদার্থগুলো খুব সহজেই মাটিতে বিদ্যমান পানির সাথে মিশে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে হিউমাস খুবই উপকারী। হিউমাস বা পঁচা সার বালুকাময় মাটিকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং অপরদিকে কাদা মাটিকে আলগা বায়ুপূর্ণ (aerate) করে। Hydrophyllic Colloidal পদার্থগুলোতে যে গুণ রয়েছে, প্রাকৃতিক দিক দিয়ে হিউমাসেও তা রয়েছে।

(গ) পানি (water) : মাটি গঠনের অন্যতম অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হল পানি। উর্বর মাটির রন্ধ্র পরিসরে শতকরা প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ পানি থাকে, যা গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ হয়ে থাকে। বৃষ্টি হল মাটির জন্য পানির প্রধান উৎস। বৃষ্টির অভাব হলে সেচের মাধ্যমে মাটিতে পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মাটির উন্নত গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে মাটি থেকে বৃষ্টির কিংবা সেচের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশিত হয়।

যার ফলে মাটির মধ্যে পরিমিত পরিমাণে পানি অবস্থান করে এবং মাটিকে আর্দ্র করে রাখে। পানি সাধারণত মাটির রন্ধ্র পরিসরে এবং মাটি কণার চার পাশে অবস্থান করে। মাটি যখন উদ্ভিদ জন্মানোর উপযোগী অবস্থায় থাকে, তখন বায়ুর সাথে সাথে পানির পরিমাণও কমে পায়। অধিক পরিমাণে শুষ্ক হলে মাটির রন্ধ্র পরিসরগুলোর শূন্য স্থান বায়ু দ্বারা পূর্ণ হয়। মাটির প্রকারভেদের উপর মাটির মধ্যে পানি  এবং বায়ুর উপস্থিতির অনুপাত নির্ভর করে। 

(ঘ) বায়ু  (air) : মাটি গঠনের অন্যতম অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হল বায়ু। উর্বর মাটির রন্ধ্র পরিসরে শতকরা প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ বায়ু থাকে, যা গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ হয়ে থাকে। সাধারণত উদ্ভিদের শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য মাটির রন্ধ্র পরিসরে বায়ু থাকা প্রয়োজন। মাটিতে বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং অন্যান্য সমগোত্রীয় জীবাণু জন্ম-বংশবৃদ্ধি এবং এদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

মাটির রন্ধ্র পরিসরে বায়ুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড (Co2) পানিতে মিশে কার্বনিক এসিডের (H2Co2) সৃষ্টি করে। এ কার্বনিক এসিড (H2Co2) কোন শক্ত ও জটিল খাদ্য উপাদানকে পানিতে দূরীভূত করে মাটিতে মিশ্রিত হতে সহায়তা করে। আবার মাটিতে বিদ্যমান বায়ুর নাইট্রোজেন গ্যাস শিমজাতীয় গাছের মূলের অর্বুদে (nodule) বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া আহরণ করে। সুতরাং পানির মত বায়ুবীয় উপাদান মাটিতে থাকা খুবই প্রয়োজন। [মো: শাহীন আলম]


সহায়িকা: 
১. মাহমুদ. কাজী আবুল, ভূগোল কম্প্রিহেনসিভ, ২০০৩, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা।
২. বাকী, আবদুল, ভুবনকোষ,২০১৩, সুজনেষু প্রকাশনী, ঢাকা।
৩. মাটির সংজ্ঞা | Definition of Soil


Figure drawn by: Md. Shahin Alam


মাটির উপাদান কয়টি?


Follow Us on Our YouTube channel: GEONATCUL


One Comment

Leave a Reply